বান্দরবানের লামায় পৃথক অভিযানে ইয়াবা সহ আটক তিন
॥ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ॥
বান্দরবানের লামায় পৃথক দুই ঘটনায় ১২২০ পিস ইয়াবা সহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক ইয়াবা কারবারীদের বিরুদ্ধে গত শনিবার মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক দুইটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম শেখ।
জানা যায়, শুক্রবার দিবাগত রাত ১০টায় ৭৯০ পিস ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী রোহিঙ্গা স্বামী-স্ত্রীকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার ও জনতা। এঘটনায় শনিবার (১৪ অক্টোবর) মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ৩৬(১) ধারায় মামলা করা হয়। লামা থানা মামলা নং- ০৬, ১৪ অক্টোবর ২০২৩ইং। আটক মাদক ব্যবসায়ী সেলিম (৩৫) কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২৪ এর ছৈয়দ হোসেন ও ছোরা খাতুনের ছেলে এবং তার স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম (২৭)। তারা দুইজনই রোহিঙ্গা নাগরিক।
প্রত্যক্ষদর্শী মাওলানা আবুল ফজল সহ অনেকে জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত ১০টায় লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের হাইদারনাশী প্রাইমারি স্কুলের সামনে রাস্তায় একটি মাইক্রো গাড়ি যাওয়ার সময় গাড়িতে মহিলার বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনে জনতা। তারপর জনতা গাড়িটি আটক করে। গাড়িতে রোহিঙ্গা সেলিম, তার স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম, তিন শিশু, যুবক রহিম উল্লাহ সহ আরো ৪/৫ যুবক ছিল। তাদের সবাইকে আটক করে ইউপি মেম্বারের কাছে তুলে দেয়। ওই ৪/৫ জন যুবকের হাতে লোহার রড ও হকিস্টিক ছিল। ওরা রোহিঙ্গা সেলিম তার স্ত্রীকে জিম্মি করে নিয়ে যাচ্ছিল। মেম্বার রোহিঙ্গা স্বামী স্ত্রীকে তার তিন শিশুকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও গাড়িতে থাকা ওই যুবকদের কেন আটক করা হয়নি তা আমরা জানিনা। সেটা মেম্বার বলতে পারবে।
ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ হেলাল উদ্দিন জানান, জনতা অভিযুক্তদের আটক করে আমার অফিসে আনার পর জানতে পারি আটক রোহিঙ্গা ব্যক্তিদের কাছে ইয়াবা রয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা স্বামী স্ত্রী দুইজনে দুইটি ইয়াবা প্যাকেট বের করে দেয়। পরে লামা থানাকে খবর দিয়ে কুমারী পুলিশ ক্যাম্পের আইসি মোঃ মাসুদ সঙ্গীয় পুলিশ সহ এসে রাত সাড়ে ১১টায় দুই আসামী ও তাদের তিন শিশুকে লামা থানায় নিয়ে যায়। আটক ব্যক্তিরা টেকনাফ হতে ইয়াবা চালান নিয়ে আসেন। এই ঘটনায় গাড়িতে থাকা রহিম উল্লাহ সহ আরো ৪/৫ জনকে এবং মাইক্রো গাড়িটি কেন পুলিশের কাছে দেয়া হলনা ? এমন প্রশ্ন করলে মেম্বার এড়িয়ে যায়।
থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক, কুমারী পুলিশ ক্যাম্পের আইসি ও মামলার বাদী মোঃ মাসুদ বলেন, মেম্বার যাকে যাকে আমাদের কাছে তুলে দিয়েছে আমরা তাদের আটক করেছি। যদি অন্য কেউ জড়িত থাকে ও তদন্তে পাওয়া গেলে তাদের মামলায় আনা হবে। এসময় আসামীদের সাথে থাকা ছোট ছোট তিন শিশুকেও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদেরকে স্বজনদের কাছে তুলে দেয়া হবে।
মামলার তদন্তকারী অফিসার পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোঃ ইমাম হোসেন বলেন, আটক আসামীদ্বয়ের কাছ থেকে কালো স্কচটেপ দ্বারা মোড়ানো ২টি স্বচ্ছ বায়ুনিরোধ পলিথিনের ভিতর ৭৯০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। তাদের আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালত তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করে।
ইয়াবা সহ আটক রোহিঙ্গা সেলিম ও তার স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম বলেন, এই ইয়াবা গুলো রহিম উল্লাহ সহ ওই ৪/৫ জন যুবকের। তারা নিজেরা বাঁচার জন্য ইয়াবা গুলো আমাদের ব্যাগে ডুকিয়ে দেয়। আমরা রোহিঙ্গা বলে আমাদের পক্ষে কথা বলার কেউ নাই।
নাম প্রকাশ না করা সত্ত্বে কয়েকজন প্রত্যেক্ষদর্শী বলেন, বাঁচাও বাঁচাও চিৎকারের পরে হাইদারনাশী ১নং রিপুজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে রাস্তায় শত শত উৎসুক জনতা জড়ো হয়। তারা বলেন এইটি একটি জিম্মির ঘটনা। যারা জিম্মি করল তাদের কাউকে আইনের আওতায় আনা হলনা কেন ? লোহার রড ও হকিস্টিক হাতে যুবকরা মাইক্রোতে করে রোহিঙ্গা স্বামী স্ত্রীকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিল ? এইরকম শত প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। এই যেন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মত ব্যাপার।
অপরদিকে শনিবার দুপুরে লামা বাজার মাহিন্দ্র স্টেশন থেকে ৪৩০ পিস ইয়াবা সহ একজনকে আটক পুলিশে তুলে দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা। আটক মোঃ মোস্তাক আহমেদ লামা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ পাড়ার আবদুর রশিদের ছেলে।