॥ মোঃ ইসমাইল, পানছড়ি ॥
খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলা সদরের কলাবাগান মাদ্রাসা পাড়ার গ্রামবাসীর চলাচলের রাস্তায় দেয়াল তুলে যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পানছড়ি ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ’র বিরুদ্ধে। এতে বসবাসকারী ২০পরিবার চরম দূর্ভোগে পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, পানছড়ি উপজেলার কলাবাগান এলাকায় পানছড়ি ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা অবস্থিত। মাদ্রাসার মধ্যে দিয়ে চলাচলের রাস্তাটি দীর্ঘদিন গ্রামবাসীরা ব্যবহার করে আসছেন। কিন্তু গত শনিবার মাদ্রাসা কমিটি বিনা নোটিশে রাস্তাটি দেয়াল তুলে বন্ধ করে দিয়েছে। এতে মাদ্রাসার পেছনে বসবাসকারী মাদ্রাসার শিক্ষক সহ প্রায় বিশ পরিবার গৃহবন্দী হয়ে পরেছেন। পরিবারগুলো রাস্তাটি ব্যবহার করে মূল-গ্রাম থেকে বাজারে আসা-যাওয়া করেন। এছাড়াও স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও এই রাস্তা ব্যবহার করে থাকে।
স্থানীয়রা আরো জানায়, ৫০বছরের অধিক সময় থেকে এখানে বসতি স্থাপন হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে প্রথমে এতিম খানা পরে পর্যায়ক্রমে বহুমুখী মাদ্রাসা ও বর্তমানে আলিম মাদ্রাসা হিসাবে পানছড়ি ইসলামি সিনিয়র মাদ্রাসা গঠিত হয়। এরই পেছনে মাদ্রাসা পাড়ায় বিশটি পরিবার বসবাস করে আসছে। উক্ত পরিবার সমূহের সদস্যরা মাদ্রাসার মধ্য দিয়ে অবস্থিত রাস্তাটি চলাচলের জন্য নির্বিঘ্নে ব্যবহার করে আসছে। ২০২০ সালে জাইকা প্রজেক্টের অধীনে কাঁচা রাস্তাটিতে ইট সলিং করে পানছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ। ইট বসানোর সময় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ রাস্তা চলাচলে বাধা দিলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌখিকভাবে গ্রামবাসীকে রাস্তা চলাচলের নির্দেশ দেন এবং গ্রামবাসী শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তাটি ব্যবহার করে আসছে। পরবর্তীতে ২০২১ সালে মাদ্রাসা কমিটি ৭ ফিট প্রশস্ত রাস্তাটি ৫ ফুট ছোট করে দেয়। সর্বশেষ শনিবার মাদ্রাসা কমিটি রাস্তার উপর দেয়াল তুলে রাস্তা বন্ধ করে দেয়।
কলাবাগান গ্রামের বাসিন্দা ও পানছড়ি ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা নুরুল আমিন বলেন, আমি উক্ত মাদ্রাসার শিক্ষক। আমি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে রাস্তা বন্ধ না করার জন্য বারবার অনুরোধ করেছি কিন্তু তাঁরা কথা শোনেননি। আমি মাদ্রাসা কমিটির সভাপতির বাড়িতে বেশ কয়েকবার গিয়ে অনুরোধ করেছি যাতে ছোট করে হলেও রাস্তাটি রাখে। এখন কিভাবে চলাফেরা করবো তা জানি না।
একই গ্রামের আরেক বাসিন্দা আব্দুল কাদির বলেন, জন্মের পর থেকে এ রাস্তা দিয়ে আমরা চলাচল করেছি। আমাদের বাপ-দাদারাও চলাচল করেছে কিন্তু গতকাল কোন নোটিশ ছাড়া রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব।
বয়োবৃদ্ধ রাবেয়া খাতুন (৭৩) বলেন, বিয়ের পর থেকে আমার শ্বশুর, স্বামী, সন্তানরা এ রাস্তা ব্যবহার করেছে। আমার ছয় সন্তানকে এই মাদ্রাসায় পড়িয়েছি। আমার ছোট সন্তান এ মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিমে এ যাবৎকালের সর্বচেয়ে ভালো রেজাল্ট করেছে। আর আজকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ রাস্তাটি বন্ধ করে দিল। এটা জুলুম আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দরখাস্ত দিয়েছি। রাস্তা খুলে না দিলে আমরণ অনশন করবো।
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ মাওলানা আবুল কাশেম বলেন, উনারা এক সময় মাদ্রাসার ভিতর দিয়ে চলাচল করতো এটা সত্য। তবে মাদ্রাসার পূর্ব পাশ দিয়ে চলাচলের জন্য মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ৮ ফুট প্রস্থ রাস্তা পূর্ব পাশে থেকে ছেড়ে দেওয়া আছে। সেদিক দিয়েও উনারা যাতায়াত করে আসছেন। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী বোর্ড পরীক্ষা কেন্দ্রস্থিত প্রতিষ্ঠানের বাউন্ডারি থাকা আবশ্যক। তবে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ও বাউন্ডারি ওয়াল জরুরী ভেবেই সারাদেশে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে সীমানা প্রাচীর নির্মান করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া আফরোজ সোমবার বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। দেওয়াল নির্মানের কাজ বন্ধ করে দিয়ে বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার আলোচনায় বসে এর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ নিয়ে যেন উভয়পক্ষ কোন ঝামেলা না করেন সে বিষয়ে সতর্ক করেন এবং সমাধান না হওয়া পর্যন্ত মাদ্রাসার পূর্ব পাশের রাস্তায় চলাচলের পরামর্শ দেন।