প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’র কারিগরি সহায়তায় সিডা’র অর্থায়নে
খাগড়াছড়িতে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মান উন্নয়নে স্কোর কার্ড ফলাফল মূল্যায়ন ও মত বিনিময় সভা
॥ খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি ॥
খাগড়াছড়িতে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মান উন্নয়নে স্কোর কার্ড ফলাফল মূল্যায়ন ও মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার(৩জুন) সকাল ১০টায় জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সম্মেলন কক্ষে এই স্কোর কার্ড ফলাফল নিয়ে আলোচনা করেন।প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর কারিগরি সহায়তায় সিডা এর অর্থায়নে ‘জাবারাং কল্যাণ সমিতি, ওয়াই মুভস’ প্রকল্প এ আয়োজন করেন।
জাবারাং কল্যাণ সমিতির “ওয়াই-মুভস” প্রকল্পের মধ্য দিয়ে খাগড়াছড়িতে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের উপর এ স্কোরকার্ড জরিপ পরিচালনা করা হয়।
স্থানীয় এনজিও জাবারাং কল্যাণ সমিতির সহায়তায় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের সেবা গ্রহণকারী কিশোর-কিশোরী এবং সেবাপ্রদানকারীদের সম্পৃক্ত করে ২০২১ সালের মে মাস থেকে এই স্কোরকার্ড জরিপ চালানো হয়।এই জরিপে প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়।
স্কোরকার্ড ফলাফলের উপর সংক্ষিপ্ত প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন জাবারাং কল্যাণ সমিতির কর্মসূচি সমন্বয়কারী বিনোদন ত্রিপুরা। তিনি বলেন, স্কোরকার্ড জরিপের মধ্যে প্রাপ্ত ফলাফল মতে, সেবাগ্রহীতাদের মূল্যায়নে ২৫টি মানদন্ডের মধ্যে ৫টি মানদন্ডের উপর ৫০শতাংশ বা তার অধিক সেবা গ্রহণকারী মান উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তারমধ্যে কেন্দ্র খোলার সময়সূচি, ছেলে-মেয়েদের জন্য পৃথক বসার ব্যবস্থা, পৃথক স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট এবং আইইসি সামগ্রীর বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। ৩টি মানদন্ডের উপর মানোন্নয়নের প্রয়োজন মনে করেছেন ৩৩-৪২শতাংশ সেবা গ্রহণকারী। অন্যদিকে সেবা প্রদানকারীর মূল্যায়ণে ২৫টি মানদন্ডের মধ্যে ৪টি মানদন্ডের উপর ৫০ শতাংশ বা শতভাগ সেবা প্রদানকারী মান উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। তারমধ্যে কেন্দ্র খোলার সময়সূচি, পৃথক বসার ব্যবস্থা, পৃথক স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট এবং আইইসি সামগ্রীর বিষয়টি উল্লেখযোগ্য।
এই আলোচনায় জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোঃ ফারুক আব্দুলাহ।
প্রধান অতিথি বলেন, সরকারের সাথে বেসরকারি সংস্থাগুলো পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছে। এই কেন্দ্রগুলোতে কৈশোরবান্ধব সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতে কাজ চলছে। সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম গুলো চাইলে রাতারাতি পরিবর্তন হবে না। এরজন্য সময় প্রয়োজন। সচেতনের মাধ্যমে আগামীতে পরিবর্তন হবে।
কমিউনিটি স্কোরকার্ড রিপোর্ট এ আরো দেখা যায়, সেবা দানের নির্দিষ্ট সময় নিধারণ করা নেই। গিয়ে অপেক্ষা করতে হয়। নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ থাকলে সেবা নিতে সহজ হবে বলে মনে করেন ৮৩% কিশোরীরা, সেবা প্রদানের সময় সেবা গ্রহণকারীর সমস্যাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনার প্রয়োজন মনে করেন ৪২% কিশোর-কিশোরীরা, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার নিমিত্তে কেন্দ্র খোলা রাখার সময়সূচি নির্দিষ্ট থাকলে সেবা গ্রহণে সহায়ক হবে বলেও সুপারিশও উঠে এসেছে এই জরিপে।
অনুষ্ঠানে জাবারাং কল্যাণ সমিতির কর্মসূচী সমন্বয়কারী বিনোদন ত্রিপুরা এর সঞ্চালনায় উন্মুক্ত আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলার নানা এলাকা থেকে আসা কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কর্মরত এনজিও প্রতিনিধিগণ। তারা কমিউনিটি পর্যায়ের চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরেন।
জেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুষ্মিতা খীসা বলেন, কিশোরকালীন সময় হচ্ছে একাধারে সম্ভাবনা আবার বিপদজনকও। একজন শিশু বা কিশোরীকে এ সময়ে বাড়তি যত্ন নিতে হয় বা নিতে হবে। এ বয়সে শিশুরা সহজে যেকোন কাজ হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। এমনকি আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে দ্বিধাবোধ করে না।মাসিক হওয়ার সময় থেকে নিজেকে এবং পরিবারের লোকদের সতর্ক থাকতে হবে।
খাগড়াছড়ির মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডাঃ চৌধুরী শারমিন হায়দার বলেন, উন্নত ভবিষ্যত গড়ে তুলতে হলে প্রথমে বাল্যবিবাহ রোধ করতে হবে। বাল্যবিবাহ হলে জরায়ু সহ মায়েদের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। বাল্যবিবাহ হলে মৃত্যুঝুঁকি যেমনি আছে, তেমনি শিশুদের ঝুঁকি আছে। মাসিকের সময় অবশ্যই স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করতে হবে। সেটা স্কুল থেকে এসব শিক্ষা দিতে হবে। নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সাহস করে বলতে হবে।মাসিকের সময় ভিটামিন ‘এ’ ‘সি’ জাতীয়, রঙিন ফল-শাকসবজি এবং বাড়তি খাবার খেতে হবে। সকালে ব্যায়াম করতে হবে।
আলোচনায় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের উপপরিচালক সুষ্মিতা খীসা, মা ও শিশু কেন্দ্রের পরিচালক ডাঃ চৌধুরী শারমিন হায়দার, ওয়াই-মুভস প্রকল্পের খাগড়াছড়ির প্রজেক্ট অফিসার দোলন দাশ, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও এনসিটিএফ’র সদস্যরা।