দুপুর থেকে লামায় শুরু হয়েছে বৃষ্টি ও ধমকা হাওয়া
ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে রক্ষায় লামা উপজেলা প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি
॥ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ॥
ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে ইতিমধ্যে দেশের কয়েকটি জেলা ও উপজেলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষণা করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগের প্রভাবে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে ঝড়ো বাতাস বইতে শুরু করেছে এবং মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। এর সাথে পানির উচ্চতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
অতিপ্রবল মোখা’র হাত থেকে জান-মালের রক্ষায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে লামা উপজেলা প্রশাসন। সেই সাথে উপজেলা পরিষদ, লামা পৌরসভা, উপজেলা আওয়ামীলীগ, সাত ইউপি চেয়ারম্যান, লামা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, লামা থানা, লামা ফায়ার সার্ভিস, যুব রেড ক্রিসেন্ট লামা এবং উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ কাজ করছে। রবিবার সকাল থেকে লামা উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক ঝুঁকিতে বসবাস করা লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে রক্ষায় লামা উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে ৫৩টি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ১৫ থেকে ২০ সদস্যের কমিটিও প্রস্তুত আছে। প্রস্তুতকৃত ৫৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ১০ হাজারের অধিক লোকজন আশ্রয় নিতে পারবে। এদিকে জেলা প্রশাসন থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসা মানুষের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ হতে ৫ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরো বরাদ্দ দেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের পাশাপাশি অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা এনজিও কাজ করছে। আপদকালীন খাবার ও পরিবহন ব্যবস্থা প্রত্যেকটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গ্রাম পুলিশরা কাজ করছে। বিশেষ করে সরকারি নির্দেশ মতে প্রতিনিয়ত জনকল্যাণে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল থেকে মোখা বিষয়ে বেশ কয়েকটি জরুরি সভা ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে ক্ষয়ক্ষতি ও দূর্যোগ থেকে রক্ষায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ৯জন কর্মকর্তা ও ৯জন কর্মচারীকে কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক সব কিছুর খোঁজ খবর রাখছে।
আবহাওয়া অফিসের দেয়া তথ্য মতে আজ ররিবার বিকাল নাগাদ প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানতে পারে। কিন্তু গতকাল শনিবার থেকে লামা উপজেলায় মোখার অগ্রভাগের প্রভাবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রবিবার দুপুর থেকে বৃষ্টি ও ধমকা হায়রা শুরু হয়েছে। স্থলভাগের ২০-৩০ মিটার উপরে গাছের ডাল-পালা নড়ার মতো বাতাস বইতে শুরু করেছে। দুই লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত লামায় পাহাড় ধস ও বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে ৫০ হাজারের অধিক মানুষ।
লামা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, লামা উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে নেতা-কর্মীদের নিয়ে কমিটির করে দেয়া হয়েছে। যারা স্বেচ্ছাসেবক হয়ে কাজ করবে। লামা যুব রেড ক্রিসেন্ট নেতা মোঃ শামিম উসমান, মোঃ রনি, আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের সদস্যরা গতকাল থেকে নির্ঘুম কাজ করে যাচ্ছে। মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘরগুলো থেকে সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে কাজ করছে। প্রশাসনের নির্দেশনায় টিম সদস্যরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখনো অব্যাহত রয়েছে চেষ্টা। আশা করছি ঘূর্ণিঝড় পুরোদমে শুরু হওয়ার আগে পুলিশ, আনসার ভিডিপি, সিপিপি ও রেড ক্রিসেন্টের সদস্যদের চেষ্টায় বিপদের ঝুঁকিতে থাকা সবাইকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হবো। আমাদের সদস্যরা জনসচেতনতা বাড়াতে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখ করে মাইকিং করে যাচ্ছে।
লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সকল পুলিশ সদস্যদের ছুটি বাতিল করে দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুর্যোগ চলাকালে চুরি ছিনতাইসহ অপরাধ প্রবণতা রোধকল্পে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। তার পাশাপাশি জনগণের জানমাল রক্ষায় আমরাও কাজ করে যাচ্ছি। কোন দুর্ঘটনার খবর পাওয়া মাত্র আমাদের টিম সেখানে ঝাপিয়ে পড়ছে। ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে প্রশাসনের সাথে আমরা কাজ করছি।
এই রিপোর্ট লেখার সময় রবিবার দুপুর ২টার দিকে বৃষ্টি পড়ার মাত্রাও বাড়ছিল। মানুষকে নিরাপদ স্থানে যেতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। পাহাড়ে ঝুকিপূর্ণ বসবাস করা বেশিরভাগ পরিবার প্রশাসনের ডাকে সাড়া দেয়নি। লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা পুরোপুরি শুরু হওয়ার আগেই যেকোনো ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সকল মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হবে।’ লামা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দুর্যোগ থেকে মানুষের জান-মাল হেফাজতে আমাদের পুরো টিম প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে বেশ ক’জন নারী-পুরুষের সাথে আলাপ করে জানা গেছে তাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘আমরা চিড়া, গুড়ের মতো শুকনো খাবারে অভ্যস্থ নই। তাই মজবুত বাড়ি থাকা আত্মীয়ের বাড়ীতে চলে যাবো।’