[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

নির্বিচারে পাহাড় ধ্বংস করার কারণেও পানি সংকট

শুকিয়ে গেছে ঝিড়ি-ঝর্ণা, পানির জন্য হাহাকার চলছে পাহাড়ি অঞ্চলে

১৭৩

॥ আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান ॥

পানি জন্য হাহাকার পড়েছে দুর্গম এলাকার বসবাসরত কয়েকশ পাহাড়ি জনগোষ্ঠি। অতি দাবদাহের ফলে গ্রামগুলোতে দেখা দিয়েছে তীব্র পানির সংকট। তৃষ্ণা মেটাতে কয়েক কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানির খোঁজেন বান্দরবানের দুর্গম এলাকার বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠিরা। মাথায় কলসি কিংবা পিঠে থুরু (ঝুড়ি) নিয়ে পানির সন্ধানে যান ঝিরি-ঝর্ণার গুলোতে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে ঝিরি-ঝর্ণার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কারণে দুর্গম এলাকায়ও দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি তীব্র সংকট। নদী ও ঝিড়ির দূষিত পানি পান করার ফলে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন কোমলবাচ্চা সহ বয়স্করাও।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবান জেলায় দুর্গম ও সমতল এলাকায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠির গ্রাম রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬ শতের অধিক। জনসংখ্যা প্রায় ৫ লাখেরও বেশী। তার মধ্যে সদর উপজেলার অধীনে শহর থেকে চিম্বুক সড়ক হয়ে জীবন নগর পর্যন্ত মোট গ্রাম রয়েছে ৫৬ টি। সেসব গ্রামগুলোতে জনসংখ্যা প্রায় ২০ হাজার অধিক মানুষের জীবনযাপন। সেসব দুর্গম এলাকার গ্রামে পানির সংকটে রয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশের মানুষ। যেখানে শুষ্ক মৌসুম এলে প্রধান সমস্যার কারণ হিসেবে দেখা দেয় খাওয়ার পানি। বর্তমানের ঝিড়ি-ঝর্ণা গুলোতে পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে প্রত্যেক গ্রাম গুলোতে দেখা দিয়েছে পানি সংকট। যার ফলে পানির তৃষ্ণা মেটাতে হাহাকার হয়ে পড়েছে দুর্গম এলাকার বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠিরা।

দুর্গম এলাকার জনগোষ্ঠিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে ঝিড়ি ও খালের গুলোতে মিলত প্রায় ৩০ জাতের প্রানী। কাকড়া, শামুক, কচ্ছপ, গুইসাপ, ছোট ছোট মাছসহ নানা ধরণের পোকা মাকর। বর্তমান সময়ে সেই ঝিড়িতে মাছ সহ পানিও মিলছে না। সেসব ঝিড়িতে পাথর থাকার সময় পানি ছিল স্বচ্ছল ও পরিষ্কার। অথচ বর্তমান প্রেক্ষাপটে এসে সেই ৩০ জাতের প্রানী সহ পাথর গুলো হারিয়ে গেছে। খালের পানি শুন্যতা কারনে মৃত প্রায় পানি প্রবাহিত ছোট শাখা প্রশাখা ঝিড়িগুলো। পাহাড়ের ভয়ঙ্কর রুপধারণ নেওয়ার কারণের অশান্তির বিপর্যায়ে পোহাতে হচ্ছে পাহাড়ের বসবাসরত ম্রো, মারমা, বম, চাক, তংচঙ্গ্যা, খুমি সহ প্রায় ১১ টি জনগোষ্ঠিদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহর কেন্দ্রিক টিএনটি পাড়া, টাইগার পাড়া, টংকাবতী, বেথনি পাড়া, গেসমনি পাড়া, ওয়াই জংশন, ১২ মাইলসহ দুর্গম এলাকার গ্রামগুলোতে একই চিত্র। পানি উৎস ঝিড়ি- ঝর্ণা গুলো শুকিয়ে যাওয়া ফলে বিরুপ সৃষ্টি দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন নদীরখাল ও ছোট খাটো ঝিড়িতে গ্রীষ্মকালে শুরু হলে অথৈই পানি বহমান যেন আর বইছে না। শুধু ঝিড়ি ঝর্ণা নয় শুকিয়ে গেছে গাছের শিকর। প্রায় ২ হতে তিন ঘন্টা মাথায় কলসি কিংবা থুরু নিয়ে পানি খোজে দীর্ঘপথ পাড়ি জমান ঝিরি-ঝর্ণায়। পানির দেখা মিললেও সে পানি আবার দুষিত। ঝিড়ির সে ছোট্ট খোয়াতে জমে থাকা দুষিত পানি নিতে অপেক্ষা করতে হয় দুই হতে তিনঘন্টা। পানি পেলেও সেগুলো খেয়ে ডায়রিয়া, জন্ডিস,পাতলা পায়খানাসহ নানান রোগের ভুগতে হচ্ছে বাচ্চাসহ বৃদ্ধরাও।

এদিকে খাল ও ঝিরি থেকে অবাধে পাথর উত্তোলন, বৃক্ষ নিধন, পাহাড় কর্তন ফলে দিনদিন শুকিয়ে গেছে ঝিড়ি ঝর্ণা পানির উৎস। কমে গেছে সাঙ্গু খালে পানি স্তর। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে পাহাড় ধ্বংস হবে বলে মনে করেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলন বান্দরবান চ্যাপ্টারে সভাপতি জুয়ামলিয়ান আমলাই বম বলেন, আমাদের দেখা প্রায় তিনশত হতে চারশত ঝিড়ি-ঝর্ণা জীবন্ত যেখানে বারো মাস পানি পাওয়া যেত সেখানে এখন আর পানি নাই। গাছ কাটা যে মহোৎসব,তার পাশাপাশি পাথর তোলা মহোৎসব তথাকথিত উন্নয়ন নামে যেসব পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে আগামী পাঁচসাত বছরের মধ্যে বড় বড় পাহাড় ও ঝিড়িগুলো শুকিয়ে যাবে তার কোন সন্দেহ নাই। তাছাড়া এখন জলন্ত প্রমান পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকার গ্রামগুলো পানি জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। আগামীতে এই পানির সংকটে প্রভাবে পাহাড়িরা গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে এটাই শুধু দেখার বাকি থাকবে।

টিএনটি গ্রামের বাসিন্দা উম্রাচিং মারমা সহ বেশ কয়েকজন জানান, গ্রামে ৫০ টি পরিবারের বসবাস। সবাই জুমের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক মৌসুমে খাবার পানি সংকটে পড়ে যায়। তিন ঘন্টা পায়ে হেটে খোয়া মধ্যে পানি পেলে সেটি দুষিত। না পারছি পানি খেতে না পারছি গোসল করতে। এমন হাহাকারে জীবন কাটছে আমাদের।

টংকাবতী ব্রিকফিল্ড পাড়া বাসিন্দা তোয়েং ম্রো বলেন, আমাদের প্রধান কারণ পানি। প্রায় সময় পাথর তুলে নিয়ে যায়। যার ফলে পানি শুকিয়ে গেছে। সে দুষিত পানি খাওয়ার কারনের বাচ্চাদের বিভিন্ন রোগে ভুগতে হচ্ছে।

জামিনী পাড়া বাসিন্দা ঙাংরে ম্রো বলেন, গ্রাম থেকে ঝিরিতে যেতে ৩ ঘন্টা সময় লাগে। সেখানে আবার পানি পাওয়া যায় নাহ। যে পানি পাওয়া যায় সেটি গন্ধ। তবুও খেতে হচ্ছে।

বান্দরবান দুর্নীতি প্রতিরোধ সভাপতি অংচমং মারমা বলেন, চিম্বুক সড়কের অধিকাংশ পাহাড়ি গ্রামে তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। নির্বিচারে ঝিড়ি থেকে পাথর উত্তোলন, গাছ কাটার ফলে প্রকৃতি এখন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে এটি দিনদিন প্রচন্ড খরা হয়ে দুর্ভিকে পরিনত হচ্ছি। প্রশাসন ও সর্বস্তর মানুষ যদি এই জলবায়ুকে সঠিক রাখতে না পারি তাহলে ভবিষ্যতে পাহাড়ের অবস্থা আরো দুর্ভিক্ষে পথে যাবে।

বান্দরবান মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুল ইসলাম বলেন, নির্বিচারের পাহাড় ধ্বংস করার কারণে পানি সংকটে দেখা দিয়েছে। পানি মুলত পাহাড়ের ঝিড়ি-ঝর্ণায় পাথরে লেগে থাকে। পাথর উত্তোলন করা কারণে পাথরের গায়ে পানি লেগে থাকতে পারছে না। যার ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখতে না পারার কারণে দিনদিন পানি দ্রাবতা হ্রাস পাচ্ছে। এই অবস্থান যদি চলতে থাকে ভবিষ্যতে পাহাড়ের সমস্যা দেখা দিবে। তাই আগামীতে আমাদেরকে আরো সচেনতা থাকতে হবে।