প্রধানমন্ত্রীর যে উদ্যোগ সেটাও কানায় কানায় ভরে উঠবে
সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগনকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন করতে কৃষি উন্নয়নে যে উদ্যোগ নিয়েছেন তার কানায় কানায় পরিপূর্ন করতে হলে যার যে টুকু জমি আছে তাতে তার ক্ষুদ্র অংশও পতিত রাখা যাবে না। যেখানেই খালি থাকবে সেখানেই যে কোন ফলমূল বা শাকসব্জীর উৎপাদন বাড়াতে হবে। এ উদ্যোগ প্রতিটি ঘরে ঘরে পালন করা হলে মানুষের চাহিদা মিঠানো সম্ভব হবেই। লক্ষ করলে দেখা যাবে আমাদের দেশে এখনো অসংখ্য জমি অনাবাদিভাবেই পড়ে রয়েছে। কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে হলে দেশের যে কনো স্থানে সেটি সরকারি বা বেসরকারি বা ব্যক্তি মলিকানাধীন হলেও সেখানেই চাষের উদ্যোগ নিতে হবে।
আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ঊঁচু নিচু ভুমি হলেও এখানে ব্যাপক চাষাবাদে যথেষ্ট সফলতা পাওয়া যাবে। শুধু দরকার গঠনমূলক এবং নিশ্চিত লাভে প্রকল্পের দ্র্রত উদ্যোগ গ্রহন করা। ইতিমধ্যে পাহাড়ের উঁচু জায়গাতেও এখানকার কৃষককূল বা উদ্যোক্তা সাধারণ নানান উদ্যোগে বিভিন্ন ফল ফলাদি এবং শাক-সব্জির উৎপাদনে মূলধন খাটাচ্ছেন। পাহাড়ের কোন কোন স্থানে এসব উদ্যেক্তরা মিশ্র ফসলের চাষ করে একদিকে লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে তাদের দেখাদেখিতে উদ্যোক্তার সংখ্যাও বাড়াচ্ছেন। যার কারনে পাহাড়ের অনেকেই এখন তাদের জমি পতিত না রেখে স্ব-স্ব উদ্যোগে নানান প্রকারের চাষাবাদ শুরু করেছেন। শহরের বাজার গুলোতে সব ধরনের সবজি পাওয়া গেলেও দামে চড়া, তবে চাহিদাতো কিছুটা হলেও মিঠছে। কিন্তু ব্যাপক চাষাবাদ করা হলে চাহিদার অতিরিক্ত মজুদ থাকলে দামও সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। বর্তমানে পাহাড়ী এলাকায় অনেক কৃষক এবং উদ্যোক্তারা নিজ নিজ উদ্যোগে পতিত জমি বা পাহাড় টিলায় মিশ্র ফলের চাষ শুরু করেছেন। কোথাও কোথাও ফলনের কারনে ভালো লাভবান হচ্ছেন। তেমনি বান্দরবান রোয়াংছড়ি উপজেলার আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের গ্রোক্ষ্যং পাড়ার উদ্যোক্তা সাচিংথুই মারমা তার পাহাড়ি প্রায় ৭ একর জমিতে ২০১৩ সাল থেকে মিশ্র ফসল চাষ করে আসছেন। মৌসুম ভিত্তিক পেপে, ভূট্টা, সরিষা, শসা, বাদামসহ বিভিন্ন রকমারি ফসল চাষ করেছেন সাচিংথুই মারমা। অর্থাৎ সারাবছর ফল-সবজি একসঙ্গে চাষে সাফল্য পেয়েছেন।
সাচিংথুই মারমার এই ফল-সবজির মিশ্র চাষ দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন পাড়ার কয়েকজন। তাকে অনুসরণ করে এখন এলাকায় গড়ে উঠেছে একই ধরনের বাগান। তাছাড়া ১০-১২জন তার বাগানে কাজ করার জন্য কর্মচারী নিয়োজিত আছে। প্রতিদিন গড়ে ৪০০টাকা বেতনে তাদেরকে কাজে লাগান। এতে বেকারত্ব দূর হয়ে তারাও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। পাশাপাশি ওই এলাকার কয়েক যুবককেও আত্মকর্ম সংস্থান তৈরী করে দিয়েছেন এই উদ্যেক্তা। সাচিংথুই জানান, পৈত্রিক সম্পদের ৭একর জমিতে দশ বছর আগে শখের বসে মিশ্র ফলন চাষ শুরু করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই জমিতে ধান, পেঁপে, সরিষা, ভুট্টা, সীম, শসা, বাদামসহ বিভিন্ন ফল-সবজি রোপন করেন। সেই জমিতে চাষ করে তিনি সাফল্য পান। এসব জমিতে চাষ করে প্রতিবছর প্রায় ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা আয় করেন। সাথী ফসল হিসেবে অন্যান্য ফসলের তুলনায় চীনা বাদাম চাষ করে বেশি আয় করতে পেরেছেন। ওই এলাকার অন্যদের তুলনায় মান আর গুনে তার চীনা বাদাম জাতটাও ভালো মানের।
সাচিংথুই মারমা একজন আদর্শ কৃষক ও বীজ উৎপাদক। তিনি ২০১৮-১৯ সাল থেকে তামাক আবাদ বাদ দিয়ে কৃষক পর্যায়ে উন্নত মানের ডাল, তেল ও মসলা ফসল উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় মানসম্মত বিশেষ করে চীনাবাদাম বীজ উৎপাদন করে আসছে। ২০২১ সালে প্রায় ১৬লক্ষ টাকা আয় করেছেন বলে জানিয়েছেন। তাই আমাদের দরকার সাচিংথুই মারমা এর মত ভালো উদ্যোক্তা শত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তিনি সফলতার জন্য এগিয়েছেন। ঠিক এভাবেই যাদের পরিত্যক্ত জমি রয়েছে তারা স্ব-স্ব উদ্যোগে এবং সরকারি সহায়তায় এগিয়ে গেলে সফলতা আসবেই। প্রধানমন্ত্রীর যে উদ্যোগ সেটাও কানায় কানায় ভরে উঠবে।