কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে শুরু হলো পাহাড়ের বিজু উৎসব
॥ পলাশ চাকমা ॥
দেশের শান্তি ও সম্প্রীতি কামনা করে রাঙ্গামাটিতে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসিয়ে বিজু উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্ব-স্ব জাতিরা। প্রত্যেকের মঙ্গল কামনায় এবং পুরানো বছরের সব দুঃখ, গ্লানি মুছে ফেলে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে স্ব-স্ব জাতির শিশু-কিশোর,তরুণ-তরুণীরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহি পোশাক পরিধান করে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে এই ফুল ভাসান।
বুধবার (১২ এপ্রিল) সকাল ৬টায় বিজু,সাংগ্রাই,বৈসুক,বিষু,বিহু ও সাংক্রান উদযাপন কমিটির উদ্যোগে রাঙ্গামাটি শহরের রাজবন বিহার ঘাটে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ফুল ভাসান।
এ সময় ফুল নিবেদন আহবায়ক প্রণব চাকমা, সাংগ্রাই,বৈসুক,বিষু,বিহু ও সাংক্রান উদযাপন কমিটি আহবায়ক প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, বিশিষ্ট নারীনেত্রী ও সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিটি শ্রীমতি জ্যোতি প্রভা লারমা, সাংগ্রাই,বৈসুক,বিষু,বিহু ও সাংক্রান উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইন্টুমনি চাকমা প্রমূখ।
অপরদিকে, সকাল ৮টায় শহরের গর্জনতলী এলাকায় ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে কাপ্তাই হ্রদেও ফুল ভাসানো হয়। এসময় ও তরুণ-তরুণীদের সঙ্গী হয়ে খাদ্য মন্ত্রানালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল ত্রিপুরা, জেলা পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা অরিনেন্দু ত্রিপুরাসহ অন্যান্য নর-নারীরা হ্রদে ফুল ভাসিয়ে বৈসাবির মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। এছাড়াও পলওয়েল পার্ক সহ বিভিন্ন স্থানে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্ব-স্ব জাতিরা।
ফুল ভাসানোর পরপরই শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা নিজেদের ঘরে ফিরে যায়। বড়দের প্রণাম করে আশীর্বাদ প্রার্থনা করে। শেষে বয়স্কদের স্নান করানো হয়। এছাড়াও পাড়ার বয়স্কদের শরীরে পানি ঢেলে তাদের আশীর্বাদ কামনা করেন তারা। দেওয়া হয় নতুন পোশাক। তাদের বিশ্বাস মতে, পুরনো বছরের সব ময়লা, পাপ, আপদ, বিপদ, গ্লানি, ব্যর্থতা ধূয়ে-মুছে ফেলতে পানিতে ভাসানো হয় ফুল। এর মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা জানানো হয়, নতুন বছরে সবক্ষেত্রে পরিপূর্ণরূপে সাফল্য অর্জন ও শুভ-মঙ্গলের বয়ে আসবে বলে মনে করেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্ব-স্ব জাতিরা।
এদিকে উৎসবটির যথার্থে আনন্দমুখর করে তুলতে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা ও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রীতিনীতি অনুযায়ী গতকাল বুধবার ১২ এপ্রিল পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে তিন দিনের সার্বজনীন উৎসব শুরু হয়। আজ ১৩ এপ্রিল উদযাপিত হচ্ছে মূল বিজু। ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে গোজ্যাপোজ্যে (গড়াগড়ি) দিন ও বর্ষবরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
এই দিন নানাবিধ পূজা,সকল প্রাণীর সুখ শান্তি প্রার্থনার মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী উৎসব শেষ হবে। বর্ষ বিদায় এবং বর্ষবরণ উপলক্ষে প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে আয়োজিত এ উৎসবকে চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাইং, ত্রিপুরারা বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু এবং অহমিকারা বিহু ও ম্রোরা সাংক্রান বলে আখ্যায়িত।