কাউখালীতে বৈসাবীর বর্ণাঢ্য র্যালি
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
পার্বত্য চট্টগ্রামে বৈসাবী উৎসবকে ঘিরে শুরু হয়েছে আনন্দ উৎসব। খুশিতে মেতেছে পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা। এ নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর পাহাড়িরা প্রস্তুতি নিয়েছে পুরাতনের গ্লানি মুছে নতুনকে আহ্বানে। নতুন বছরের আগমনে ঐতিহ্যবাহী ব্যয়বহুল খাদ্যের তালিকা সহ খেলা ধুলার সকল প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত এখন পাহাড়ি পল্লীসহ বিভিন্ন সংগঠন। ব্যবসায়ীরা তাদের পুরাতন হিসাব বন্ধ করে নতুন হিসাবের হাল খাতা তৈরীতে ব্যস্ত। তারই ন্যায় রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলায় বৈসাবী উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়েছে। সোমবার সকালে উপজেলার ঘাগড়া কলেজ মাঠে পাহাড়ের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক পরিধান করে ব্যানার ফেষ্টুন নিয়ে র্যালিতে অংশ গ্রহণ করে।
র্যালির আগে কলেজ মাঠে পাহাড়ি শিশু ও তরুণীরা মনোজ্ঞ ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশন করে। এরপর একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে ঘাগড়া বাজার প্রদক্ষিণ করে কাঠালবাগানস্থ ঘাগড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে এসে শেষ হয়।
ঘাগড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, ঘাগড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নাজিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য রঞ্জন মণি চাকমা।
বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু উদযাপন কমিটির আহবায়ক অমিত দেওয়ানের সভাপতিত্বে এবং উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব উপ্ত চাকমার সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন, ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রা দেওয়ান, ঘাগড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুর্শে চাকমা, অনুষ্ঠান উৎযাপন কামটির যুগ্ম আহবায়ক সেন্টু তালুকদার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, পাহাড়ের সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু এখন কোন জাতি সত্ত্বার কাছে মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। উৎসবটি পাহাড়ে বসবাসরত সকল জাতি সত্ত্বার কাছে পৌছে গেছে। এ দিনটিতে পাহাড়ি-বাঙালী কোন ভেদাভেদ থাকে না। সকল জাতি সত্ত্বা মিলে মিলে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে।
বক্তারা আরও বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার অসাম্প্রদায়ীক চেতনায় বিশ^াসী। এ সরকার তৎকালীন ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস ফিরে এনেছে। পাহাড়ে হানাহানি বন্ধ হয়েছে। মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে। সকল সম্প্রদায় মিলে মিশে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র জাতিসত্বা সমূহের সামাজিক এই ধর্মীয় উৎসবকে বিভিন্ন নামে প্রাচীন থেকেই পালন করে আসছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী। এখানে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীরা বৈসুক, মারমা জনগোষ্ঠীরা সাংগ্রাই, তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীরা বিসু ও বৃহত্তর চাকমা সম্প্রদায় একে বিঝু হিসেবে পালন করে আসছে। মুলত এই চার জনগোষ্ঠীর নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে সংক্ষেপে এটি বৈসাবি হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছে।