নিখিল, বাসন্তি ও অংসুইপ্রু না আসায় অসন্তোষ প্রকাশ
আমাদের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে এ জায়গা থেকে আমাদেরকে বিতাড়িত করতে চায়: সন্তু লারমা
॥ পলাশ চাকমা ॥
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা বলেছেন, আজকের পার্বত্য অঞ্চলে আমরা কথা বলতে পারি না নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি না। এভাবেই আমাদের জীবন প্রতিনিয়ত অতিবাহিত করছি। এ অঞ্চলের আমরা যারা প্রকৃত অধিকারী তাদেরকে শাসকগোষ্ঠি উৎখাত করে বহিরাগতদের জায়গা দিয়ে আমাদের সংখ্যালঘু করে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রান-২০২৩ উপলক্ষে সোমবার সকাল ১০টায় র্যালীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উদযাপন কমিটির আহবায়ক প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা (সাবেক উপ-সচিব) সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন, আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা, বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা, শিক্ষাবিদ অঞ্জলিকা খীসা, শিশির চাকমা, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক সভাপতি অ্যাড. ভবতোষ দেওয়ান, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সাধারণ সম্পাদক এম.জিসান বখতেয়ার উদ্দিন, বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক পলাশ কুসুম চাকমা প্রমূখ। তবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়র বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা ও প্রধান আলোচক সরকারদলীয় সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা সহ অতিথি বক্তা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসেননি উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তাঁরা আসেননি।
শ্রী সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে যে শাসন ব্যবস্থা, যে আইনী ব্যবস্থা তা কোন গণতান্ত্রিক, মানবিক শাসন ব্যবস্থা হতে পারেনা। বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে সামরিক শাসনের মতো বাস্তবতা দেখিনি। চুক্তি সাক্ষরের ২৫ বছর পরও পাহাড়ের বুকে শাসক গোষ্ঠির যে শাসন ব্যবস্থা তা অগণতান্ত্রিক, অমানবিক এবং গণবিরোধী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চুক্তিকে লঙ্ঘন করেই আইনী শাসন ব্যবস্থাকে ধরে রাখা হয়েছে। পাহাড়ের ১৩ ভাষাভাষির ১৪টি জাতি গোষ্ঠির অস্তিত্ব চিরতরে বিলুপ্ত করার জন্য শাসক গোষ্টির যে ষড়যন্ত্র তা আমরা অবশ্যই ব্যর্থ করে দিতে বাধ্য। আমাদের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে এ জায়গা থেকে আমাদেরকে বিতাড়িত করতে চায়। আজকের এই বাস্তবতা আমরা বছরের পর বছর ধরে প্রত্যক্ষ করে আসছি।
শ্রী সন্তু লারমা আরো বলেন, পার্বত্য চুক্তির ধারাগুলো বাস্তাবায়নের জন্য সরকারের সাথে আলোচনা চলছে আশা করছি সরকার তার বাস্তবায়ন করবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বজননীন বিজু উৎসবের এ অনুষ্ঠানে সরকার দলীয় এবং উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও এমপিকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাঁরা না আসায় সন্ত্র লারমা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ বিষয়কে তিনি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের অন্তরায় এবং সার্বজননীন বিজু উৎসব পূর্ব র্যালীতে অসুন্দরের প্রকাশ ঘটলো।
আলোচনা সভার পর রাঙ্গামাটি পৌর সভার সামনে থেকে একটি র্যালী বের করা হয়। র্যালীতে ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠির সম্প্রদায় তাঁদের ঐতির্হ্যবাহী সুসজ্জিত পোষাক পড়ে অংশ গ্রহন করেন এবং সেখানে ঐতির্হ্যর গানগুলো পরিবেশিত হয়। র্যালীটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে গিয়ে শেষ হয়। উল্লেখ্য যে প্রতিবছর সামাজিক এবং সার্বজননীন এ বিজু উৎসব উপলক্ষ্যে র্যালী বের করা হয়। ১২ এপ্রিল ফুল বিঝু ১৩ এপ্রিল মূল বিজু এবং ১৪ এপ্রিল গজ্যাপজ্যা দিন অর্থাৎ বৎসরের প্রথম দিন।