বিকেএসপিতে পড়া অনিশ্চিত হতদরিদ্র ফুটবলার চোসাউ রোয়াজার
॥ তুফান চাকমা, নানিয়ারচর ॥
অভাবের সংসার বিকেএসপিতে পড়া অনিশ্চিত হয়েছে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরের হতদরিদ্র পরিবার থেকে বেড়ে উঠা ফুটবলার চোসাউ রোয়াজার। আর্থিক সংকট আর চরম দরিদ্রতায় দিন মজুরী চিংথোয়াই রোয়াজার তরুণ্য ফুটবলার চোসাউ রোয়াজার পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সে এখন ঢাকায় বিকেএসপিতে পড়াশোনা করছে। ছোট বেলা থেকে ফুটবল খেলার প্রতি যথেষ্ট আগ্রহী ছিল তার। স্কুল ছুটি হওয়ার পরেই অবসর সময়ে ঘরে বসে না থেকেই মাঠেই খেলতে দেখা যেত। ফুটবল প্রেমি হওয়ার জন্য তার স্বপ্ন ছিল দেশের গৌরবের জন্য কিছু করার। ইতিমধ্যে সে বঙ্গমাতা টুর্ণামেন্ট, জামালপুর ক্যাচারি ক্লাব, কুমিল্লা ক্লাব সহ বিভাগীয় টিমে খেলে সবার নজর কেড়েছেন। এলাকাবাসী তার থেকে ভালো কিছু পাবে বলে আশা করছে। কিন্তু শঙ্কা আর উৎকণ্ঠায় দিন পার হচ্ছে তার। চোসাউর চোখে-মুখে বিষাদের ছায়া।
চরম দরিদ্রতা আর অভাব-অনটনের মধ্যে সে বিকেএসপিতে পড়তে পারবে কি না এ নিয়েই শঙ্কা পরিবারের। দরিদ্রতার চাপে পিষ্ট চোসাউর পরিবার এক বেলা খাবার জোগাড় করতেই যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বিকেএসপিতে খরচ জোগাড় করবে কিভাবে?
নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের পুলিপাড়া গ্রামের যাদুকরী ফুটবলার চোসাউ রোয়াজা। চরম দরিদ্রতা আর অভাবের সংস্যারে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে বেড়ে উঠেছে সে। মায়ের কষ্ট আর বাবার ঘরে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ের সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়েছে। তার পরও হাল ছাড়েনি। নিজের ইচ্ছা এবং মা-বাবার আপ্রাণ চেষ্টায় বিকেএসপিতে ভর্তি হয়েছে।
চোসাউ রোয়াজার বাবার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ সন্তানের মধ্যে সে মেজো সন্তান। বড় ছেলে খাগড়াছড়ি কলেজে পড়ে বাকী সন্তান গুলোও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছেন। কষ্ট কে কষ্ট না বলে প্রতিদিন অন্যের বাড়িতে দিন মজুরি করে ৫০০/৬০০ টাকা করে পাই। তাতেই কোনরকম সংস্যার চালিয়ে নিতে হচ্ছে। কোন সময় একদিন কাজের সুযোগ না মিললে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে যায়।
তাদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে কঠিন হয়ে উঠেছে এদিকে বাড়িটাও ঠিকমতো মেরামত করতে পারছিনা। বর্ষা এলেই হয়তো বাড়িতে থাকার মতো অবস্থা হবে না। অভাবের সংস্যারে কষ্টকে কষ্ট না বলে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ শুধু সৃষ্টিকর্তার কাছে একটায় চাওয়া আমার মেয়ে ভালো খেলুক, দেশের সুনাম অর্জন করুক।
পুলিপাড়া এলাকার পাইসাপ্রু রোয়াজা বলেন, নিজের চোখের সামনে সবকিছু দেখছি পরিবারটি অনেক অসহায়। বাবার ইনকামের উপড় ৭সদস্যর সংস্যার খুব কষ্ট করে চলে। দিনমজুরি হওয়াতে পরিবার সহ ছেলেমেয়েদের অর্থ যোগান দিতে এখন হিমশিম খাচ্ছে। যে বাড়িতে থাকে সে বাড়িটাও ভেঙে পড়ে যাওয়ার অবস্থায় আছে। পরিবার চালাবে নাকি অন্য ছেলেমেয়েদের ভরণপোষণ করবে। পরিবারটি এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে কাটছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, চোসাউ রোয়াজা আমাদের দেশের রত্ন। সরকারের একটু সহযোগিতা পেলে একদিন রুপনা, ঋতুপর্ণার মতো তার কাছ থেকে ভালো কিছু পাবে দেশ।
তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকতায় যারা গরীব অসহায় ফুটবলার রয়েছে ব্যক্তিগত ভাবে তাদেরকে ঘর দিচ্ছে। চোসাউকেও যদি প্রধানমন্ত্রী ঘর নির্মাণ করে দেয় তাহলে পরিবারটি অনেক উপকার হবে এবং এলাকাবাসীও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে।
এক সাক্ষাৎকারে চোসাউ রোয়াজা প্রতিবেদককে বলেন, পরিবারে বাবা-ই একমাত্র আয় করে। বাবার উপর নির্ভর করি আমরা সবাই। আমাদেরকে লেখাপড়ার খরচ পরিবারের খরচ জোগাতে বাবা হিমশিম খাচ্ছে। আমাকে টাকা দিলে ভাই-বোনদের’কে টাকা দিতে পারেনা। আমি বিকেএসপিতে পড়ছি, প্রতি মাসে এক হাজার টাকা বেতন দিতে হয়। এছাড়াও হাত খরচ আছে। আমাকে যদি সহযোগিতা করা হয় ভবিষ্যতে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারবো।
এদিকে চোসাউ রোয়াজাকে নিয়ে মন্তব্য করে নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা জানান, চোসাউ রোয়াজা নানিয়ারচরের কন্যা, আমার তা জানা ছিল না। রুপনার মত ভবিষ্যতে ভালো খেলবে চোসাউ রোয়াজা। উপজেলা পরিষদ থেকে তাকে যথাসম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করব।