ফ্রিল্যান্সিংয়ে লাখ টাকা আয় করছেন মাটিরাঙ্গার ইব্রাহিম, দিচ্ছেন অন্যদের প্রশিক্ষণ
॥ মোঃ আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা ॥
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার চৌধুরিপাড়ার ইব্রাহিম খলিল। নানা চরাই-উৎরাই পেরিয়ে বর্তমানে তিনি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। মাসে আয় করছেন লাখ টাকা। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু হয়। বন্ধুদের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ধার করে বাকি ২০ হাজার টাকা নিজের চাচার কাছ থেকে নিয়ে প্রথমে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি ল্যাপটপ ক্রয় করেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা বুঝতেই চাইতেন না অনলাইনে আয় করার বিষয় টা। তখন থেকেই চলছে অবিরাম অধ্যবসায়।
তিনি সরকার স্বীকৃত ফ্রিল্যান্সার (MD163669878)। শিক্ষাজীবনে চট্রগ্রাম কমার্স কলেজ থেকে মেনেজমেন্টে মাস্টার্স করছেন তিনি। ইব্রাহিম জানান, ২০১৬ সালে তরুন তরুনীদের আউটসোর্সিং বিষয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি করে মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে আইসিটি বিভাগের আওতায় লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট (LEDP) প্রকল্পের আওতায় Professional Outsourcing Training প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। তখন তিনি আবেদন করে ১শ জন প্রতিযোগীর মধ্যে জেলার মধ্যে ২য় হন। শুরু করেন প্রশিক্ষণ গ্রহণ । নিজ উপজেলা থেকে খাগড়াছড়ি সদরে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি। প্রশিক্ষণ শেষে অর্ডার না পাওয়ায় প্রায় দেড় বছর বন্ধ ছিল কাজ।
চলছে সফল হবার ক্রমাগত চেষ্টা। ইব্রাহিম বলেন, ২০১৮ সালের শুরুর দিকে এই প্রথম ৫ ডলারের একটি লোগে তৈরির কাজ পাই। একই বছরের জুনের শেষের দিকে ৫০ ডলারের আরেকটি কাজ পাই। এরপর ২০১৯ সালে একটার পর একটা অর্ডার পেতে থাকি। এ বছরে গড়ে মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো অর্ডার পেতাম। ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় আয় বেড়ে ৭০ হাজারের অধিক হয়। চলছে সফলতার মধ্যে হতাশা। এরপর কর্তৃপক্ষের ট্রাম্স এন্ড কন্ডিশন ভায়োলেট করার কারনে আমার আইডি টা নষ্ট হয়ে যায়। তাতে আমি হতাশ না হয়ে নতুন করে আরো দুইটি আইডি খুলি।
একই বছরে আবার কাজ পাওয়া শুরু করি। তখন মাসে আয় নেমে ৪০ হাজার টাকা মিলতো। মহামারির একই বছরে ঘরে বসে আমার প্রায় ৮০ হাজার টাকা আয় হতো। ২০২১ সালের জানুয়ারী থেকে বর্তমান পর্যন্ত আমার অর্ডার বেড়ে ১ লাখ টাকা হয়। এবার নতুন পরিকল্পনা করি আমি উদ্যেক্তা হবো। শুরু করি গ্রাফিক্স ডিজাইন ফ্রিল্যান্সিং অনলাইন কোর্স। দেশে এবং দেশের বাহিরে থেকে প্রতি ব্যাচে ৩০ থেকে ৫০ জন ছাত্র সহ বর্তমানে ৭টি ব্যাচ চলমান রয়েছে। ১ম ব্যাচে কয়েকজন বর্তমানে মাসে ৭০ হাজার টাকার মতো অর্ডার পাচ্ছে।
আমি শুরুতে ডাচ বাংলা মোবাইল বাংকের খাগড়াছড়ি শাখার ডিস্ট্রিবিউশন । ম্যানেজার ছিলাম। বর্তমানে আমি ডাচ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং মাটিরাঙ্গা শাখার প্রোপাইটর।
আমার স্বপ্ন হচ্ছে আমি খাগড়াছড়িতে Mr. Freelance IT Corporate Office করবো এতে করে অত্রাঞ্চলের বেকারদের কর্মসংস্থান হবে একই সাথে যারা আমার এখান থেকে কাজ শিখছে তারাও এতে কাজ করার সুযোগ পাবে। ইব্রাহিম বলেন, বর্তমানে চাকরি পাওয়া খুবই কঠিন। হাজার হাজার বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছেন, অথচ অনলাইনে প্রচুর কাজ। এখান থেকে প্রতি মাসে লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। তাই চাকরির পেছনে না ঘুরে সঠিক পথে পরিশ্রম করে কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়া যায়।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে তরুণদের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে মাটিরাঙ্গা ইসলমিয়া আলিম মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু করতে চাইলে ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুবিধা নেওয়া উচিত। প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ করতে পারলে বেকারত্ব ঘোঁচানো সম্ভব।