বরকলে নরম কাঠ(চকফুট) ব্যবসার সমস্যা-সমাধানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বৈঠক
॥ বরকল উপজেলা প্রতিনিধি ॥
রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলায় নরম কাঠ(চকফুট) ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে রাঙ্গামাটিতে নরম কাঠ(চকফুট) পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয় ও ম্যাজারমেন্ট বিভিন্ন বিষয়ে সমস্যা-সমাধানের লক্ষ্যে সমিতির সদস্যদের নিয়ে আলোচনা সভা করা হয়েছে। সোমবার(৬মার্চ) সকালে উপজেলার পাবলিক ক্লাবে এ সভা আয়োজন করা হয়।
উপজেলা নরম কাঠ(চকফুট)ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি সভাপতি শান্তি প্রিয় চাকমা এর সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কাঠ ব্যবসায়ী মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক, ৩নং আইমাছড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও নরম কাঠ(চকফুট) ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি সিনিয়র সহ-সভাপতি সুবিমল চাকমা,২নং বরকল ইউপি সদস্য মোঃ আবু বক্কর,নরম কাঠ(চকফুট) ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি সহ-সভাপতি বাবুল চাকমা,সাধারণ সম্পাদক মোঃ এমাদুল, নরম কাঠ(চকফুট) ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি মোঃ ওসমান গনী,যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শ্যাম রতন চাকমা,অর্থ সম্পাদক মোঃ ফোরকান,ভূষণছড়া ইউপি সদস্য(সাবেক) মোঃ হাফিস সহ কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে নরম কাঠ বাজারজাতকরন বিষয়টি নজরে আনেন না। তবে এ ব্যবসার কারণে সাধারণ মানুষ ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা খরচ যোগাতে সক্ষম হতো। কিন্তু এখন ব্যবসা বন্ধ হওয়ায় অনেকের সমস্যা হয়েছে। তবে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সহ বরকলে দুই জোনের কমান্ডারের সাথে আলোচনায় বসতে পারলে সমাধান পাওয়া যাবে। আর সেক্ষেত্রে নিজ অবস্থান থেকে সাধ্যমত সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান সুবিমল চাকমা বলেন,নরম কাঠের ব্যবসা বন্ধের ব্যাপারে তিনি বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তার সাথে আলাপ করেছেন। আর বরকলে বাস্তবতা এবং এখানকার প্রেক্ষাপট নিয়ে জোন কমান্ডারের সাথে আলোচনায় বসলে হয়তো তিনি এ সমাধান দিতে পারবেন বলে দৃঢ় বিশ্বাস করেন আইমাছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সুবিমল চাকমা।
সভাপতি শান্তি প্রিয় চাকমা বলেন,দীর্ঘ বছর পর সমিতির সদস্যদের সাথে নিয়ে আলোচনায় বসার সুযোগ হয়েছে। তিনি বলেন,বরকলে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নরম কাঠের ব্যবসার পেছনে লাখ লাখ টাকা খরচ করেছে। হঠাৎ ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের টাকা আটকে গেছে। যা রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। দেখা গেছে,অন্যান্য উপজেলায় চকফুট গাছের ব্যবসা চালু আছে। এমনকি ঐ এলাকার লোকেরা সহসায় বাজারজাতকরনের অনুমোদন পাচ্ছে। আর বরকলে কি কারণে এ ব্যবসা বন্ধ হলো তা সঠিক তথ্য জানা নেই। তার জানা মতে,বরকলের অধিকাংশ মানুষ আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। আদা-হলুদ,কলা উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাই এ ব্যবসা সচল থাকলে অনেক গরীব পরিবারের জীবন বাঁচবে। তাদের ছেলেমেয়েদের খরচ যোগাতে পারবে। তাছাড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা লাখপতি হওয়ার জন্য তো এ নরম কাঠের ব্যবসা করছে না। শুধুমাত্র আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এ ব্যবসা। তাই এসব বিষয় মাথায় রেখে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নরম কাঠের ব্যবসা করছে। সুতরাং এ ব্যবসা পুনরায় চালু করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় বক্তারা বলেন,পূর্বে নরম কাঠ অর্থাৎ চকফুট ব্যবসার অবস্থা যখন ভালো ছিল তখন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে তেমনি স্থানীয় গরীব অসহায় পরিবারও লাভবান হয়েছে। কারণ স্থানীয়ভাবে সাধারণ মানুষ জীবিকার তাগিদে আদা-হলুদ, কলা উৎপাদনের পাশাপাশি পারিবারিক ও ছেলেমেয়েদের খরচ যোগাতে নিজস্ব জোট বাগান থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নিকট ন্যায্য দামে নরম কাঠ বিকিকিনি করে। কিন্তু সেই ক্ষুদ্র কাঠের ব্যবসা২০১৮ সালে হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়া বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতে একদিকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে অন্যদিকে স্থানীয় গরীব অসহায় পরিবার আর্থিক উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। তারা আরো উল্লেখ করেন,পূর্বে বরকল উপজেলায় বিজিবি জোন কর্তৃক আবেদনের মাধ্যমে চকফুট গাছ বাজারজাতকরণের অনুমোদন পাওয়া যেতো। আর এখন কেনো অনুমোদন পাচ্ছেননা সে নিয়ে দুঃচিন্তায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তাদের লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি এবং স্থানীয় গরীব অসহায়দের আর্থিক দুরবস্থার কথা ভেবে যদি দায়িত্বপূর্ণ জোনে পূণরায় নরম কাঠ(চকফুট) বাজারজাত করার অনুমোদন দেয় তাহলে সকলেই উপকৃত হবে।