[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

কুরুকপাতা ইউনিয়নে সাড়ে ১১ হাজার মানুষ বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত

বান্দরবানের দূর্গম পাহাড়ি পল্লী কুরুকপাতা গ্রামে পানির তীব্র সংকট ডায়রিয়ার আশঙ্কা

১৬৬

॥ সুশান্ত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাঁ, আলীকদম ॥
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ডায়রিয়াপ্রবণ এলাকা ৪নং কুরুকপাতা ইউনিয়নে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের বিশুদ্ধ পানি অথবা নিরাপদ পানির কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ঐ ইউনিয়নে সাড়ে ১১ হাজারেরও বেশি মানুষ বসবাস করেন সেখানে। তাঁদের নিত্য দিনের পানির সংকট মোচন হয় ঝিরি, নালা এবং পাহাড়ের পাদদেশের কূয়ার (গর্ত) নিঃসৃত পানি। আগামী শুষ্কমৌসুমে গ্রামবাসীর পানির কষ্ট মোচনে এবং জীবন বাঁচাতে ময়লাযুক্ত ঝিরি- ঝর্ণা ও নদীর পানি পান করেন দূর্গম এলাকার লোকজন।

৪নং কুরুকপাতা ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার অধিবাসীর বসবাস সবাই নদী,খাল ও ঝিরি-ঝরনার প্রাকৃতিক পানির উৎসের ওপর শতভাগ নির্ভরশীল। এ কারণে প্রতিবছর সেখানে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ে। গত তিন বছরে ১৭ জনের অধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয় ও হাজারের বেশি মানুষ ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্রাত পুং ম্রো জানান।

কুরুকপাতা এলাকার নেপিউ ম্রো বলেন, এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রায় সাড়ে ১১ হাজার মানুষ রয়েছে সবাই ঝিরি, ছড়া, ঝর্ণা ও নদীর পানির উপর নির্ভরশীল। সুপেয় পানির উৎস না থাকায় বাধ্য হয়ে ময়লাযুক্ত পানি পান করতে হয় তাঁদের। এ ইউনিয়নে প্রতিটি ঘরে সু-পেয় পানির তীব্র সংকটে থাকে বছর জুড়ে। তিনি আরও বলেন, কুরুকপাতা ইউনিয়নে অবৈধ ভাবে মায়ানমারের গরু প্রবেশ করায় ঝিরি গুলো এখন প্রায় ব্যবহার অযোগ্য হয়ে উঠছে।অবৈধ গরু প্রবেশের কারণে ঝিরিতে গরু,মহিষের গোবর ও গরুর মহিষের মূত্র ছড়িয়ে পড়ায় ঝিরি-ছড়ার পানি দূষিত হচ্ছে। সে ঝিরি ও ছড়ার পানি পান করে আবারও ব্যাপক হারে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে বলে জানান তিনি।

কুরুকপাতা ইউনিয়নের মেনদন পাড়া, রিংলক পাড়া, ধরিপাড়া, পাতুই পাড়া,বড় বেটিপাড়া,ছোট বেটিপাড়া, কংর্জন পাড়া,বড় আগলা পাড়া, বলাই পাড়া,খিদু পাড়া,কমচং পাড়া,অংওয়াই পাড়া, মেনইং পাড়া,দুখ্যা পাড়া,ইয়াংকিং পাড়া, মেনরাম পাড়া,পালে পাড়া,আনুম পাড়া,লাংচং পাড়া,পাহাড় ভাঙ্গা পাড়া,চাল্লাতলী পাড়াসহ এই গুলো পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় নলকূপ বা ডিপ টিউবওয়েল বসানোর সুযোগ নেই। পানির জন্য ঝিরিই একমাত্র ভরসা পোয়ামুহুরী আশপাশের এলাকা ঘুরে পাহাড়-টিলার আশেপাশে অসংখ্য ঝিরি ঝরনা দেখা যায়। এই ঝিরি ঝরনা গুলো অধিকাংশ শুকনো মৌসুমে শুকিয়ে গেছে।

মেনপাও ম্রো জানান, ঝিরি থেকে একবার পানি আনতে এক ঘণ্টা সময় লাগে। তাঁদের বেশির ভাগ সময় পানি আনতেই চলে যায়। ঝিরির ময়লা পানির জন্যও অনেক কষ্ট করতে হয়। সামাজিক অনুষ্ঠান হলে তিন-চার দিন আগে থেকে ঝিরির পানি সংগ্রহ করে মজুদ করে রাখতে হয়। পানি মজুদ না করলে আমাদের অনেক কষ্ট হয় সুপেয় পানির জন্য।

কুরুকপাতা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মেনরোয়া ম্রো বলেন,বান্দরবানের ৭ উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩৩টিতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য নলকূপ, পাতকূয়া,জিএফএস (উঁচু পাহাড়ি ঝরনা থেকে নলের মাধ্যমে পানি সরবরাহ) নির্মাণ করা হয়েছে। এখনো এই প্রত্যন্ত দূর্গম ৪নং কুরুকপাতা ইউনিয়নে কোনো পাড়ায় একটি পানি সরবরাহ অবকাঠামো স্থাপন করা হয়নি।

কুরুকপাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো বলেন,সরকারিভাবে নলকূপ স্থাপনের বাজেট আসলেও সেখানে পাথর থাকায় চেষ্টা করেও ফল হয়নি। এখন আর চেষ্টা করি না। সামনে বাজেট আসলে পাইপের মাধ্যমে ঝিরির পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করব। বিভিন্ন পাড়ার স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের অভিযোগ, দু-একবার সরকারিভাবে নলকূপ স্থাপনের বাজেট আসলেও কাজের গাফিলতি, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে কাজ করা হয়। কিছু দিন খনন করে পাথুরি হওয়ায় পানি আসে না বলে কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের খোঁজ খবরও থাকে না।

করোনাকালীন সময়ে ২০২০ সালে এনজিও গ্রীনহিলের অর্থায়নে জমিরাম পাড়া,সাথীরাম পাড়া ও জিরা পাড়ায় একটি করে নলকূপ স্থাপন করা হয়েছিল। সেগুলো দুই মাসের মাথায় একে একে সব নষ্ট হয়ে যায় বলে জানান এই সব পাড়ার স্থায়ী বাসিন্দারা।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বান্দরবানের সহকারী প্রকৌশলী খুরশেদ আলম বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্গম হওয়ায় ৪নং কুরুকপাতা ইউনিয়নে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে আলীকদম-পোয়ামুহুরী সড়ক হওয়ায় এখন সেখানে নলকূপ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।