দুর্নীতিবাজ কাউকেই কোন ছাড় দেয়া হবে না
অবশেষে বান্দরবানের আলীকদম শিক্ষা অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মচারীকে রুমায় বদলি
॥ সুশান্ত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা, আলিকদম ॥
অবশেষে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী-কাম হিসাব রক্ষক নাছির উদ্দীনের লাগামহীন দূর্নীতি ও অভিযোগের পর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাকে ঘুষ না দিলে বদলী, বেতন, বিল, পিআরএল, পেনশন সবকিছু আটকে যেতো। তার স্ত্রী,ভাই, বোন, মামাতো ভাই ও ভাগ্নেকে চাকরী পাইয়ে দিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসকে অনেকটা বানিয়েছেছিল পারিবারিক অফিস। এসব নিয়ে দিন দিন ক্ষোভ সৃষ্টি হয় অন্য কর্মচারী সহ শিক্ষকদের মাঝেও। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানো হলে গত ২৮ ফেব্রুয়ারী তাকে রুমায় বদলি করা হয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, প্রায় একযুগ ধরে বদলি, ডেপুটেশন, পিআরএল ও পেনশন, নিয়োগ বাণিজ্য, মেরামতসহ সকল কাজের কমিশন নিয়েই কাজ করতো উচ্চমান সহকারী নাছির উদ্দীন। উপজেলার শিক্ষক মহলে তিনি দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিল। সরকারি টাকা আত্মসাৎ, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, হুমকী-ধামকী, উস্কানীমূলক কথাবার্তা সহ দুর্নীতি-অনিয়মে ডুবে থাকত। তার অত্যাচারে প্রধান শিক্ষক থেকে সহকারি শিক্ষক এবং কর্মচারী সকলেই অতীষ্ট। এরমধ্যে শিক্ষকরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ৩ মাস পর ব্যবস্থা নেয় বান্দরবান জেলা পরিষদ সহ শিক্ষা অধিদপ্তর।
অনুসন্ধানে গেলে ভুক্তভোগীরা জানায়, ২০১১ সালে ইউএনডিপির অর্থায়নে আলীকদমের দুর্গম এলাকায় ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়। এসব বিদ্যালয় ২০১৫ সালে জাতীয়করণের পরিকল্পনার উদ্যোগ নেয় পার্বত্য জেলা পরিষদ। উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মচারী হিসেবে শিক্ষকের তালিকা করার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার ও তথ্য গোপন করে মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন ‘রাইতুমনি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার স্ত্রী রিয়াজুল জান্নাত ও তার ভাই মোঃ আব্বাস উদ্দিনকে, ‘পারাও পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, বোন মোতাহারা বেগম কে, মেনক্য মেনকক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, মামাতো ভাই আরিফ উল্যাহকে, ‘বিদ্যামনি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, ভাগ্নে মোজাম্মেল হককে শিক্ষক হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে নেয়। গত ১৩ এপ্রিল ২০২২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত শিক্ষক গেজেটে তারা চূড়ান্ত ভাবে নিয়োগ লাভ করেন। একই কায়দায় জ্যোতি বড়ুয়া, উম্মে রুমান রুমি ও লিপিকা শর্মা নামের আরো তিন জন শিক্ষককে মোটা অংকের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে ওই তালিকায় অন্তর্ভূক্ত দেখিয়ে নিয়োগে সহায়তা করেন নাছির উদ্দীন। অথচ তারা কেউই ২০১১ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্নের সময়েরও শিক্ষক নন। এসএমসি দ্বারা তারা নিয়োগপ্রাপ্তও নন, তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দাও নন বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, এসব শিক্ষকরা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাতীয়করণ এবং শিক্ষক গেজেটের সময়কাল থেকে ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ১১ বছর ১০ মাস ১৯ দিন ধরে একদিনের জন্য সেইসব বিদ্যালয়ে হাজির ছিলেন না। শিক্ষক হাজিরা খাতায় তাদের নামও নেই। গত জুন মাস থেকে বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা অফিসে প্রদত্ত এম.আর ফরমেও এসব শিক্ষকদের নাম নেই। উপজেলার ইউএনডিপির ২০ টি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জাতীয়করণ করার জন্য খসড়া গেজেট প্রকাশের পর মন্ত্রাণালয়ে চূড়ান্ত গেজেটের জন্য টাকা দিতে হবে বলে ৯ লক্ষ টাকা নেন ইউএনডিপির শিক্ষকদের কাছ থেকে উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক নাছির উদ্দিন, এমন অভিযোগ করেন জাতীয়করণ হওয়া শিক্ষক নিকসন পালসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক। তাকে বদলী করা হলেও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে যাদের থেকে টাকা নিয়েছে সেসবও ফেরত দিতে হবে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
এদিকে তার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগের বিষয়গুলো শিক্ষা অধিদপ্তর তদন্ত করলে অনেক কিছুর সত্যতা পায়। এছাড়াও বান্দরবান জেলা পরিষদের মাসিক সভাতেও এসব বিষয় উত্তাপিত হয়। এ বিষয়ে পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য দুংড়িমং মার্মা বলেন, নাছিরের অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। জেলা পরিষদের গত সভায় আলোচনাও হয়েছে। এ সময় তাকে উপজেলা থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শফিউল আলম বলেন, নাছির উদ্দিনের বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছিল এবং দুর্নীতিবাজ কাউকেই কোন ছাড় দেয়া হবে না। বান্দরবান জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকতা নাছির উদ্দীনের নানান দুর্নীতির কারনে আদেশক্রমে তাকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারী রুমায় বদলী করা হয়েছে।