বরকল থানার উদ্যোগে শতবর্ষপূর্তি
আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে বরকলে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে-এমপি দীপংকর তালুকদার
॥ নিরত বরন চাকমা,বরকল ॥
বর্তমান আওয়ামীলিগ সরকারের অধীনে বড়কল উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। শনিবার (৪ মার্চ) সকালে বরকল থানার উদ্যোগে আয়োজিত শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্য এসব কথা বলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এমপি দীপংকর তালুকদার।
রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ,বিপিএম(বার) এর সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী ও সদস্য সবির কুমার চাকমা,উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিধান চাকমা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত)নাজমা বিনতে আমিন বাঘাইছড়ি ও বরকল থানা(অতিরিক্ত)সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল,সুবলং সেনাবাহিনী ক্যাম্প কমান্ডার মোঃ খালিদ মাহরুস, রাঙ্গামাটি পৌর মেয়র মোঃ আকবর হোসেন চৌধুরী প্রমূখ।
প্রধান অতিথি এমপি দীপংকর তালুকদার আরো বলেন,রাঙ্গামাটির অন্যান্য উপজেলায় বরকল উপজেলার মতো শতবর্ষ উদযাপন করতে কম দেখা গেছে। যা শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে ধন্য হয়েছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরো বলেন,বরকল উপজেলায় পূর্বে কোনো কিছু ছিল না। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে শুরু করে,স্কুল,কলেজ সহ বিভিন্ন উন্নয়ন হয়েছে। তাছাড়া আগে বরকল উপজেলায় প্রশাসনিক ভবনও ছিল না। তবে বর্তমান সময়ে এসে উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবন এবং নির্বাহী কর্মকর্তার ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বরকল উপজেলায় আরো উন্নয়ন হবে। যদি আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সুযোগ করে দেয়া হয়। আর অদূর ভবিষ্যতে বরকল উপজেলায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সীমান্ত এলাকায় স্থলবন্দর করা হবে। সেই সাথে যোগাযোগের সুবিধার্থে কর্ণফুলি নদী ড্রেজিং করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেছেন এমপি দীপংকর তালুকদার।
বিশেষ অতিথি জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন,অতি দ্রুত নৌপথ ড্রেজিং করা হবে।আর ভবিষ্যতে প্রত্যন্ত এলাকা বরকলে শিক্ষার আলোতে আলোকিত হোক এ মঙ্গল কামনা করেছেন। সেই সাথে কর্মজীবনে যতদিন রাঙ্গামাটিতে অবস্থান করবেন ততদিনে বরকলবাসীর সাথে থেকে সার্বিক উন্নয়নে সহযোগিতা প্রদান করবেন।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন,বরকলের মতো দূর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও নিরাপত্তার জন্য জনসাধারণের পাশে থেকে কাজ করছেন। যা সত্যি প্রশংসনীয় বলা যায়। দেশ এবং জাতির সাথে সমানতালে এগিয়ে যেতে হবে। আর দেশ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পার্বত্য মন্ত্রণালয় সৃষ্টি হয়েছে। আঞ্চলিক পরিষদ সৃষ্টি হয়েছে। আর সর্বোপরি তিন পার্বত্য জেলায় জেলা পরিষদ সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং মূলস্রোতদ্বারার সাথে মিল রেখে নিজের স্বকীয়তা নষ্ট হবে। ভাষা,সংস্কৃতি হারিয়ে যাবে এ আশংকার মধ্যে থেকে কোনো লাভ নেই।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিধান চাকমা বলেন,বরকল থানাটি অতি প্রাচীন থানা ছিল। পূর্বে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অনুন্নত। ওইসময়ে মানুষ ডিঙি নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতো। শুধু তাই নয় বরকল থানায় যারা প্রশাসনিক কাজে দায়িত্বে ছিলেন তখন কোনো নাগরিক সুবিধা ছিল না। এমনকি বরকলে কোনো বিদ্যুৎ সুবিধা এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু বর্তমান সময়ে ১শ বছরে এসে বরকলে বিদুৎ সুবিধা ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সুবিধা পেয়েছে। বলতে গেলে বরকল এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তবে ৫টি ইউনিয়নে দূর্গম কয়েকটি এলাকায় এখনো মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় আসেনি এবং বিদ্যুৎ পৌছায়নি।
সভাপতি বক্তব্য রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ বলেন,১৯২৩ সালে বরকল থানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজকে ১৯২৩ সালের বরকল থানা বর্তমান থানার প্রেক্ষাপট এক না। তখনকার শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থকে ত্বরান্বিত করার জন্য পুলিশ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এখন ২০২৩ সালে এসে বলতে পারি যে,জনগণের স্বার্থকে ত্বরান্বিত করার জন্য এ পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। যারা ১৯২৩ সালে বরকল থানাকে প্রতিষ্ঠা করেছে এবং ধরে রেখেছে তাদের সংবেদনশীলতা, তাদের চাহিদা এখনো বরকল এলাকার মানুষের মধ্যে ধরে রাখতে পেরেছে। তাদের সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ভবিষ্যতে আইনশৃঙ্খলা যাতে রক্ষা করা যায় সেই লক্ষ্যে একসাথে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ।
এসময় উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান শ্যাম রতন চাকমা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুচরিতা চাকমা,বড়কল রাগীব রাবেয়া কলেজ অধ্যক্ষ নৈচিং রাখাইন,সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বরকল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোঃ নাসির উদ্দীন,সহকারী পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) আরিফ উদ্দিন,আইমাছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সুবিমল চাকমা,ভূষণছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মামুনুর রশীদ মামুন,বরকল প্রেসক্লাব সভাপতি শান্তি ময় চাকমা সহ রাঙ্গামাটি ও বরকল থানা পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ,জনপ্রতিনিধিবৃন্দ,গণমাধ্যমকর্মী, প্রথাগত নেতৃবৃন্দ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সভাশেষে জেলা পরিষদ কর্তৃক ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ক্রীড়া সামগ্রী ও সাংস্কৃতিক সরঞ্জাম বিতরণ করা হয় এবং সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তর কর্তৃক ১৯৪ জন আর্থিক অনুদান দেয়া হয়।