[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

উপজেলায় ৪০ জন কৃষক ১৩ একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন

সূর্যমুখী ফুলে হাসছে ‘লামা’

৯২

॥ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ॥

এ যেন সূর্যমুখী ফুলের রাজ্য। যতদূর চোখ যায়. হলুদ রঙের ঝলকানি দেখা যায়। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার। সূর্যমুখী যেন সূর্যের দিকেই মুখ করে থাকে। সূর্যমুখী ফুল শুধু দেখতে রূপময় নয়, গুণেও অনন্য।
বান্দবানের লামা উপজেলার গজালিয়া গতিরাম ত্রিপুরা পাড়া গ্রামের কৃষক প্রিতমা ত্রিপুরা চাষ করেছেন এ সূর্যমুখী। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে সূর্যমুখী মাঠটি। লামা উপজেলা সদর থেকে সুয়ালক সড়কের ৮ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত সূর্যমুখীর এ বিশাল মাঠ।

বর্তমানে প্রতিদিন সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেক দর্শনার্থী ভিড় করছেন এখানে। বসন্তের হাওয়া বইছে চারপাশে। সূর্যমুখী ফুল সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। সকাল বেলা পূর্বদিকে তাকিয়ে থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্যের সাথে ঘুরতে থাকে।

একদিকে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে যাওয়ার দৃশ্য, অন্যদিকে সূর্যমুখী ফুল তাকিয়ে থাকার দৃশ্য অত্যন্ত মনোরম। মৌমাছিরা শেষ বিকেলে মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সূর্যমুখী ফুল থেকে। তাছাড়া প্রতিদিন দেখা যায় প্রজাপতির মেলা। প্রাকৃতিক এ অপরূপ সৌন্দর্য যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। এখানে আসা দর্শনার্থীরা নির্মল বাতাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন। আগত দর্শনার্থীর একদল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ব্যস্ত, আরেক দল নিজেকে ক্যামেরাবন্দি করতে ব্যস্ত। অন্য দল ব্যস্ত টিকটকে ভিডিও তৈরিতে। তবে কৃষকরা মোটেও খুশি নন দর্শনার্থীদের আগমনে।

কৃষক প্রিতমা ত্রিপুরা বলেন, এবছর আমি লামা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে প্রণোদনা নিয়ে ৩৩ শতক (১ বিঘা) জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করি। কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। নিয়মিত কৃষি কর্মকর্তারা পরিদর্শন ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। বীজ ও সার ছাড়া ৩৩ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করতে আমার ৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, আগত দর্শনার্থীরা সূর্যমুখী গাছ ভেঙে ফেলেন। ফুলও ছিড়ে ফেলেন। তাই দর্শনার্থীদের কাছে কৃষকের অনুরোধ, তারা যেন সূর্যমুখী গাছ ও ফুলের কোনো ক্ষতি না করেন।
দর্শনার্থী রুবেল ত্রিপুরা ও শামসুর রহমান বলেন, ‘আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য ও ফুল আমার খুব ভালো লেগেছে। যিনি ক্ষেতটি চাষাবাদ করেছেন, তাকে অনেক ধন্যবাদ। যেন ভবিষ্যতে আরও মানুষকে সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ করে দেন।’

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সূর্যমুখী চাষাবাদ দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাজারে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সূর্যমুখী ফুলের তেল কিনতে পাওয়া যায়। যদিও সূর্যমুখী ফুলের তেল বনস্পতি তেল নামে পরিচিত। ফুল থেকে তেল উৎপাদনের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে মধুও উৎপাদিত হচ্ছে।

লামা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোপন চৌধুরী বলেন, এবছর লামা উপজেলার প্রথমবারের মত সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। কৃষি অফিসের প্রণোদনায় উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৪০ জন কৃষক ৩৩ শতক করে মোট ১৩ একর ২০ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। সবাইকে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। ১ হেক্টর (২৪৭ শতক) জমিতে ২টন (২ হাজার) বীজ উৎপন্ন হয় এবং প্রতি কেজি বীজ থেকে ৩০০ গ্রাম সূর্যমুখী তেল পওয়া যায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছর প্রায় ১৩ একর জমিতে ১০ হাজার ৬৮৮ কেজি সূর্যমুখী বীজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি কেজি সূর্যমুখী বীজ থেকে ৩০০ গ্রাম করে ৩ হাজার ২০৬ কেজি তেল উৎপাদন হতে পারে। এতে করে প্রতিজন কৃষক ৩২ হাজার টাকার তেল বিক্রয় করতে পারবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ছয় থেকে সাত ফুট লম্বা সুর্যমুখী গাছে ফুল ফুটে আছে। ফুলের সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে। সুর্যমুখী ফুল দেখতে প্রতিদিনই আসছে বিভিন্ন বয়সী মানুষ। গজালিয়া ইউনিয়নের কৃষক মোঃ মিজান, করই মুরুং, অংছাচিং মার্মা ও তুমরিং মুরুং বলেন, এ বছর কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। সূর্যমুখী চাষে খুব বেশি পরিশ্রম হয় না। শুধু বীজ বপণে একটু শ্রম দিতে হয়। এরপর দেখভাল করলেই চলে। ৩৩ শতাংশ জমিতে এখন পর্যন্ত তার ৪ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার বর্মন বলেন, গত ডিসেম্বরের শুরুতে ক্ষেতে সূর্যমুখীর বীজ বপন করা হয়েছিল। ফসল ঘরে তোলা যাবে এপ্রিলে। চাষীদের চাষ করতে বিশেষ সমস্যা বা তেমন খরচ নেই। একজন চাষি বিঘা প্রতি চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ করে তৈলবীজ পেতে পারেন। বিশেষ করে এই তেল ক্ষতিকর কোলেস্টেরলমুক্ত। সূর্যমুখীর তেল শতকরা ১০০ ভাগ উপকারী ফ্যাটযুক্ত। এ তেলে আছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও পানি। হৃদরোগী, ডায়াবেটিসের রোগী, উচ্চ রক্তচাপের রোগী, কিডনি রোগীর জন্যও সূর্যমুখীর তেল নিরাপদ। তাই দেশে তেলের ঘাটতি মেটাতে ব্যাপকভাবে সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বারি-৩ জাতের নতুন সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে ব্যাপক আবাদের মাধ্যমে একদিন দেশের ভোজ্যতেলের ঘাটতি মেটাবে ।