দখল-দূষণে কাপ্তাই হ্রদ এবং একজন আদর্শ নারীর গল্প
॥ মোঃ সিরাজুল হক (সিরাজ) ॥
১৯৮৬ সালের কথা, একদা হঠাৎ আসহাব উদ্দীন স্যার এবং আমিনুল ইসলাম স্যার আমাকে এবং আমার ভাই-বন্ধু কামালকে ডাকলেন। আমরাও দু’ভাই-বন্ধু মিলে স্যারদের সম্মুখে হাজির হলাম। অতঃপর আসহাব স্যার বললেন, দেখ বাবারা, বিদ্যালয়ের পাশে কাপ্তাই হ্রদ দখল করে বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। একটি স্থাপনায় অসামাজিক কার্যকলাপও চলছে। তোমরা ছাত্র রাজনীতি কর, যদি পার উচ্ছেদের ব্যবস্থা কর। এ হ্রদ দখল হলে রাঙ্গামাটি ধ্বংস হয়ে যাবে। আসহাব উদ্দীন স্যার তৎকালীন সময়ে রাঙ্গামাটির শহীদ আবদুল আলী একাডেমীর প্রধান শিক্ষক ও আমিনুল ইসলাম স্যার সহকারী শিক্ষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। সেকালের আদর্শবান শিক্ষকদের কথা আজো মনে পড়ে। আজকাল আমাকে আদর্শবান শব্দটি তেমন একটা ব্যবহার করতে হয় না। অতঃপর, স্যারদের আদেশ অনুসারে দু’ভাই-বন্ধুর নেতৃত্বে দলবল নিয়ে পরামর্শ করে, পরদিন সব স্থাপনা ভেঙ্গে চুড়মার করে ফেললাম। আর যে স্থাপনায় এক যৌনকর্মীর বসবাস ছিল। যিনি সেখানে দেহ ব্যবসা করতেন, সে স্থাপনাটিও জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম। উচ্ছেদ হওয়া মানুষগুলোর কান্না আর আহাজারীতে সেদিন আকাশ-বাতাশ ভারী হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু আমাদের প্রিয় জন্মভূমির ফুসফুস কাপ্তাই হ্রদকে বাচাঁতে গিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে আমরা সেদিন সীমারের মতো কঠোরতা প্রদর্শন করেছি। এ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমিকে বাসযোগ্য রাখতে আমরা এ নির্মম কাজটি নির্দয়ভাবে সম্পন্ন করেছিলাম। আমার ভাই-বন্ধু এম. কামাল উদ্দীন এখন রাঙ্গামাটিতে সাংবাদিকতা করেন। জীবিকার প্রয়োজনে মাঝখানে একবার তাঁকে ঢাকায় রেখে এসেছিলাম। আমি ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি চলে আসার সময়, বিদায় বেলার স্মৃতিগুলো আজো মনের দর্পনে ভেসে উঠে বার-বার। সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে আমাদের দু’ভাই বন্ধুর কান্নার দৃশ্য দেখে যাত্রীরা ও সেদিন শান্তনার হাত বড়িয়ে দিয়েছিল। রাঙ্গামাটি-সহ তিন পার্বত্য জেলার শিক্ষিত সন্তানগুলোর চাকরীর ব্যবস্থা যদি এখানে নিশ্চিত থাকতো, তবে কি ভাই-বন্ধু কামাল উদ্দীনরা পার্বত্য চট্টগ্রাম ত্যাগ করত ? বর্তমানে তিনি বৈশাখী টেলিভিশনসহ আনন্দ বাজার, বাংলাদেশ সময় এবং আজকালের খবর পত্রিকায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা প্রতিনিধি হিসাবে কর্মরত আছেন। আসহার স্যার আর আমিন স্যারের কথা খু-উ-ব মনে পড়ে। সেকালের পিতা-পুত্রের কিংবা বন্ধুর সম্পর্কের মতো শিক্ষক-ছাত্রের মধুময় পবিত্র বন্ধন এখন আর তেমন একটা চোখে পড়েনা। এখন সমাজে প্রতিটি ক্ষেত্রে পচন ধরেছে। নীতি, নৈতিকতা, আদর্শ, দেশপ্রেম প্রকৃতি প্রেম হারিয়ে যেতে বসেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনীতি এখন দুর্বৃত্তদের হাতে বন্দি। সৎ, আদর্শবান, ভালো মানুষগুলো রাজনীতি থেকে দুরে চলে যাচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের দুরে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এখন বহুক্ষেত্রে সেই রাজনীতি নামক সোনার কাঠির জোরে ওরা অপকর্ম থেকে রেহায় পাওয়ার চেষ্টা করে কিংবা রেহায় পাচ্ছে। মূলতঃ ক্ষমতার লীলাখেলায় কখনো কখনো কর্তৃপক্ষ এখানে দেখেও না দেখার ভান করে। ফলতঃ খাব-খাব, দুনিয়া খাব। মাঠ-ঘাট, বালি খাব, পাহাড় খাব, নদ-নদী, খাল-বিল হ্রদ খাব। প্রাণ-প্রকৃতি পরিবেশসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম খাব অবস্থা।
বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদসহ তিন পার্বত্য জেলার নদ-নদী, খাল-বিল গুলো সাধারণ মানুষের সাথে সাথে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের দখল-দুষনে ক্ষত-বিক্ষত। ৩৮ বছর আগে শহীদ আবদুল আলী একাতেমী সংলগ্ন হ্রদের জায়গায় নির্মিত যে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিলাম, এখন সেখানে একটি বস্তি গড়ে উঠেছে। এ বস্তির পাশে উন্নয়নের নামে হ্রদের জায়গায় নির্মিত হচ্ছে- রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের একটি বড় ধরনের স্থাপনা, শুধু তাই নয়, জেলা পরিষদ হৃদের জায়গায় আরো কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণ করছে। কথা ছিল, জেলা পরিষদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি কর্তৃক পরিচালিত হবে। কিন্তু বহুকাল যাবৎ উপরের ইশারায় এ পরিষদ ভোট ছাড়া চলছে তো চলছেই ———। পাহাড়ে দেশনেত্রী কিংবা জননেত্রীর অসীম দয়ায় জেলা পরিষদের হর্তা-কর্তা মনোনীত হয়। তবে-পাহাড়ের জনসাধারণের ভোট ছাড়া ক্ষমতাবান হলেও তাঁরা কিন্তু যে প্রধানমন্ত্রীর আর্শিবাদে মনোনীত হলেন, তাঁর ঘোষণাকে কিভাবে অবজ্ঞা করেন-এ প্রশ্ন আজ সর্বত্র। অথচ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাণ-প্রকৃতি পরিবেশ সুরক্ষায় অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ সুরক্ষায় খাল-বিল, নদী-নালা হ্রদ রক্ষায় জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণায় আমরা আশায় বুক বেঁধে ছিলাম। কিন্তু না, দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও রাঙ্গামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় খাল, নদী, হ্রদ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত আছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গরাও অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কর্তৃক মনোনীত কিংবা জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত জন প্রতিনিধিরা যখন এসব অপকর্মে লিপ্ত হয়, তখন আমরা অবাক হই, কষ্টেরও সীমানা থাকেনা। তবে-আমরা হতাশ নই। কারণ আমাদের আদালত আছে। ইতিমধ্যে আদালত রুলও জারি করেছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির নেতা সঞ্জীব দ্রং এর একটি বইয়ের নাম “ধরিত্রী আমার নয়, আমিই ধরিত্রীর” বইটি পাঠে আপনি অন্য রকম এক আবেগে আপ্লুত হবেন। বইটিতে তিনি লিখেছেন, এমনিতেই আমরা সারাক্ষণ বলি, এই জমি আমার এই বিশ্ব আমার। সারাক্ষণ আমার আমার বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলি। কিন্তু আদিবাসীরা বলেন, পৃথিবী আমার নয়, আমিই পৃথিবীর। এই ভূমি আমার নয়, আমি-ই ভূমির, এই ধরিত্রী ও ভূমি কেনা-বেচা করার, নষ্ট করার, ধ্বংস করার অধিকার মানুষের নেই। মানুষ ধরিত্রী ও ভূমির মালিক নয়। যত্নকারী ও রক্ষাকারী মাত্র। এ ধরিত্রীকে অনাগত শিশুদের জন্য সুন্দর করে রেখে যাওয়া মানুষের দায়িত্ব।
এ বইটি একবার মনযোগ সহকারে পড়ুন। তারপর বিবেকের আদালতে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করুন। কি-করছেন আপনি ? বিবেকবানদের ধর্য্যরে বাধ ভেঙ্গে গেলে, তখন কি হবে উপায়? অতীতের একটি ইতিহাস এখানে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। অনেক দিন আগের কথা, রাঙ্গামাটি শহরের প্রাণকেন্দ্র রিজার্ভ বাজার এলাকায় রাঙ্গামাটি পার্কটিকে ঘিরেই ছিল কোমলমতি শিশুদের উচ্ছ্বাস। প্রতিদিন বিকেলে অসংখ্য শিশু সেখানে খেলত, হাসি-আনন্দে মেতে উঠত। কিন্তু হঠাৎ কাল বৈশাখী ঝড়ের মতো পার্কটিতে একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তারপর নির্মাণ কাজের সুচনা হলো। আমাদের পরিবেশবাদীরা আর ঘরে বসে থাকেনি। জাগ্রত হলো সুশীল সমাজ। অপরিনামদর্শী উন্নয়ন, অবিবেচক সিদ্ধান্তে কমিউনিটি সেন্টার এর নির্মাণ কাজ শুরু হলে, তমুল বিরোধীতায় মেতে উঠে নাগরিক সমাজ। অবশেষে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পর রাঙ্গামাটি পার্কটি প্রাণে বেঁচে যায়। আসলে প্রাণ-প্রকৃতি পরিবেশ খেকোদের করাল গ্রাসে এখন সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রাম ক্ষত-বিক্ষত। আমি যখন রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে পড়তাম, তখন পার্বত্য চট্টগ্রামে যতটা সবুজ ছিল, আবহাওয়া যতটা শীতল ছিল, রূপের রানী রাঙ্গামাটি যতটা বাসযোগ্য ছিল, এখন তা কিন্তু আর নেই। সেকালে বন্ধুরা মিলে রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজার লঞ্চ ঘাট থেকে কাপ্তাই হ্রদের পাড় ঘেষে হাঁটতাম। ছুটির দিনে কিংবা বিকেল বেলায় সবাই মিলে হ্রদের পাড় ঘেষে হাঁটতে হাঁটতে ডিসি বাংলো পার্কে গিয়ে আড্ডা দিতাম। এ ভাবে হ্রদের পাড় ঘেঁষে পায়ে হেঁটে সারা রাঙ্গামাটি শহর ঘুরে বেড়াতাম। সেকালের মতো কাপ্তাই হ্রদের পাড় ঘেঁষে হেঁটে মন ভালো করার সৌভাগ্য এখন আর নেই।
সেকালের স্মৃতিগুলো মনে হলেই এখন বুকটা ভেঙ্গে যায়। একবার ভাবুন তো। পাহাড়ের খাল, নদী, হ্রদ যদি মরে যায়, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান কি বেঁচে থাকবে? হয়ত বা এখন-ই মরবেনা। ১০০ কিংবা ২০০ বছর পরও যদি মরে যায়। তখন আপনার প্রজন্মের দল বেঁচে থাকবে কি করে? প্রতিনিয়ত আমাদের বনজ সম্পদও উজার হয়ে যাচ্ছে। এক সময় পাহাড়ের অর্থনীতিতে এখানকার উৎপাদিত বাঁশ অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এ বাঁশের উপর নির্ভর করেই এশিয়ার বৃহত্তম কাগজ কল “কর্ণফুলী পেপার মিল” গড়ে উঠে ছিল। কিন্তু এখন পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঁশের উৎপাদন কমে গেছে। বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক হারে উজার হচ্ছে বাঁশ। খাদ্য তালিকায়ও আছে বাঁশ কড়ুল (বাঁশের কঁচি চারা)। এমতাবস্থায়-এ সম্ভাবনাময়ী বাঁশের উৎপাদন এখন বিলীন হওয়ার পথে। ফলতঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের এ ঐতিহ্যবাহী বাঁশের উপর নির্ভরশীল শিল্প সমূহ এবং কর্ণফুলী পেপার মিলও ধ্বংসের পথে অগ্রসর হচ্ছে। এ ব্যাপারে কারো মাথা ব্যাথা হয় কিনা, আমার জানা নেই। অনেক দিন আগে বাঁশ রোপন ও সংরক্ষণ প্রকল্পে প্রায় ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। তখন নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা এন.ডি.সি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। এ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটির অগ্রগতি কি হলো এ প্রশ্ন আজ সর্বত্র। লেখালেখী করি, তাই সচেতন সমাজ প্রশ্নও করে বার-বার। প্রাণ-প্রকৃতি পরিবেশ আমাদের অস্তিত্বের সাথে সম্পর্ক। এ অমূল্য সম্পদগুলো প্রকৃতির এবং পৃথিবীর। এসব ধ্বংস করার অধিকার কারো নেই। কিন্তু আমরা নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে প্রতিনিয়ত এসব ধ্বংস করেই চলেছি।
প্রিয় পাঠক, এখন থেকে ৩৮ বছর আগের একটি উচ্ছেদের ঘটনা বর্ণনার মাধ্যমে আজকের কলামটির সূচনা। তৎকালীন সময়ে রাঙ্গামাটির শহীদ আবদুল আলী একাডেমী সংলগ্ন কাপ্তাই হ্রদের জায়গায় নির্মিত বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিলাম। এ ঘটনার দু’বছর পর আমার ভাই-বন্ধু সাংবাদিক এম. কামাল উদ্দীন ঢাকায় চলে গেলেন। অতঃপর, বলতে গেলে বন্ধুরাও প্রায় সকলেই সরকারি চাকরীতে নিযুক্ত হলেন। কেউ কেউ সাংবাদিকতা কিংবা অন্য কোন পেশায় আত্ম নিয়োগ করলেন। বলতে গেলে তখন আমি বড্ড একা হয়ে গেলাম। সেকালে শহীদ আবদুল আলী একাডেমী সংলগ্ন কাপ্তাই হ্রদের জায়গা থেকে যাদের স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিলাম, তাদের মধ্যে একজন মানুষ ছাড়া বাকিরা আবারো সবাই মিলে কাপ্তাই হ্রদ দখল করেছে। রাজনৈতিক আর্শিবাদে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে। আর যে একজন মানুষ উচ্ছেদ হওয়ার পর আর কোন দিন হ্রদের জায়গা দখল করেনি। তিনি হলেন তৎকালীন সময়ের একজন পতিতা (যাদের বড় বড় ভদ্র মানুষ গুলোর অনেকেই ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখেন)। বিগত কিছুদিন পূর্বে চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন মোড়ে, সৌভাগ্যক্রমে এ ভদ্র মহিলার সাথে আমার স্বাক্ষাত হয়। রাঙ্গামাটি ফিরে আসার জন্য আমি বিরতিহীন বাসের টিকেট কেঁটে স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ-ভদ্র মহিলার চোখে-চোখ পড়তেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। তিনি যেমন আমাকে চিনেছেন, আমি ও তেমনী চিনেছি। কিছু সময় আলাপ-আলোচনায় কেঁটে যায়। অতঃপর এক পর্যায়ে তিনি বললেন, ৩৮ বছর আগে উচ্ছেদ হওয়ার পর আমি চট্টগ্রাম চলে আসি। সেই থেকে ভাড়া বাসায় থেকে একটি রাইস মিলে চাকরী করি ——–। এ সময় বিরতিহীন বাসটি ছেঁড়ে দিচ্ছে বলে, আমি তাড়া-হুড়া করে গাড়ীতে উঠে পড়লাম, আর জানালার পাশের বাসের সিটে বসে আবেগে আপ্লুত হলাম———–। যে ভদ্র মহিলা একদিন কাপ্তাই হ্রদ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছিল। কিন্তু আমরা সে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার পর তিনি আর অদ্যবধি কাপ্তাই হ্রদ দখল করেননি, ভবিষ্যতেও করবেন না বলে জানিয়েছেন। শত কষ্টের মাঝেও ভূমিহীন এই মানুষটি অন্যত্র ভাড়া বাসায় থাকেন। আহা ! কি বৈচিত্রময় এ পৃথিবী। সেই মহান আদর্শ নারীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা-অজশ্র লাল সালাম।
লেখক:- মোঃ সিরাজুল হক (সিরাজ)
কবি, কলামিষ্ট ও সাংস্কৃতিক কর্মী