স্থানীয় সরকার প্রকৌশলের অধীন লামায় প্রায় ৯ কোটি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন
বোমাবাজি-হত্যা ও কু’র মধ্যে ক্ষমতায় আসা বিএনপির অভ্যাসে পরিণত হয়েছে: মন্ত্রী তাজুল ইসলাম
॥ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ॥
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি বলেছেন, বিএনপি’র নেতাদের বক্তব্যের সাথে তাদের কোন মিল নাই। এরা এদেশের মানুষের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশের দালালি করতো আর পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানের দালালি করতো। এরা চতুর, এরা বুদ্ধিমান। এদের সাথে আওয়ামী লীগের কোন মিল নেই। আওয়ামীলীগের নেতারা যা বলে তা করে। বিএনপি’র নেতা ও তাদের ছেলেরা মিথ্যাচার-লুটপাট করতে জানে। বিএনপি আগামী নির্বাচনে না আসলে সে দায়তো আওয়ামীলীগের নয়। শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টায় বান্দরবানের লামায় এলজিইডি কর্তৃক নবনির্মিত লামা উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এইসব কথা বলেন এলজিআরডি মন্ত্রী।
লামা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, এমপি। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিন, বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, এলজিইডি বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম মজুমদার, বান্দরবান পৌরসভার মেয়র ইসমাল বেবী, লামা পৌরসভার মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম, এলজিইডি লামা উপজেলা প্রকৌশলী আবু হানিফ।
এলজিআরডি মন্ত্রী আরো বলেন, বিএনপি বলে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসলেও কিন্তু এগুলো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। কিন্তু তারা ১৯৯১ ও ২০০১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে বলে দাবি করলেও তারা বোমাবাজি, হত্যা, ঝামেলা ও কু’র মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে এটি বিএনপি’র অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অথচ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়াউর রহমান মানুষকে গুলি, মোটর সাইকেল দিয়ে ভোট বাক্স ছিনতাই করে নিজেরা সিল মেরে ১০০% এর চেয়ে বেশি ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসে। মন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান ৫শত ভোটের জায়গায় ৬শত ভোট নিয়ে হ্যাঁ না ভোট করেছিল। ২০০১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে তখন আমার নিজের এলাকায় গেইট ভেঙ্গে, ভোট কেন্দ্র ভাংচুর, কেন্দ্র দখল ও মানুষ পিটিয়ে এলাকা ছাড়া করে ওরা ক্ষমতায় আসে। সেটাকে তারা বলে সুষ্ঠু নির্বাচন। অর্থাৎ বিএনপি যখন ক্ষমতায় যাবে ওটা সুষ্ঠু নির্বাচন, আর আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় যায় ওটা ভেজাল নির্বাচন। বিএনপি নির্বাচনে না আসলে সে দায়তো আওয়ামীলীগের নয়। বিএনপি বোমাবাজি, মারামারি, হানাহানি, কাটাকাটি, কিবরিয়া সাহেবকে হত্যা, ২১ আগস্টের গেনেট হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা, আইভি রহমানকে হত্যা, বাংলা ভাই মানুষ মেরে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখা, আহসান উল্লাহ মাষ্টারকে হত্যা করেছে।
এলজিআরডি মন্ত্রী আরো বলেন, হতদরিদ্র বাংলাদেশ আজ উন্নতশীল দেশ হয়েছে। গ্রামীণ প্রকল্প বাস্তবায়নে পার্বত্য অঞ্চলকে প্রধান্য দেয়া হবে। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও পার্বত্যমন্ত্রীর সুপারিশ বিশেষ বিবেচনা করবে এলজিইডি। বান্দরবানে বর্তমানে প্রায় ১৩শত কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। দ্রুত পার্বত্য এলাকার চেহারা আরো পাল্টে যাবে। নতুন নতুন প্রকল্পে বান্দরবানকে অন্তর্ভুক্তি করা হবে। উন্নয়ন কাজে যেন কোন বৈষম্য না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গ্রামীণ আদালত সারা বাংলাদেশে পাইলট প্রকল্প হিসাবে চলমান রয়েছে। পৃথিবীর কোথাও এইটা নেই। ইউএনডিপি ও ইউরোপীয়ন ইউনিয়নের অর্থায়নে বাংলাদেশ মডেল হিসাবে কাজ করছে। আমরা সফলভাবে কাজটি করতে পেরেছি। পর্যায়ক্রমে এইটি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাবে। গ্রামীণ আদালতে স্থানীয় আইনের সাথে সমন্বয় করে এইটি পরিচালনা করতে হবে। অবকাঠামো নির্মাণে সমতলের চেয়ে পাহাড়ে বেশি বরাদ্দ দিতে সুপারিশ করেছেন, পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় বিষয়টি আমরা মাথায় রেখে বরাদ্দ দিব। তবে কাজের গুণগত মানের বিষয়টি আপোষ করা হবে না।
এর আগে ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে এলজিআরডি মন্ত্রী ‘লামা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন সহ মোট ৮ কোটি ৭০ লক্ষ ৭৭ হাজার ৫১ টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এলজিইডির বাস্তবায়নাধীন উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ৬ কোটি ১৮ লক্ষ ৭৭ হাজার ৫১ টাকা ব্যয়ে উপজেলা পরিষদ সম্প্রসারিত ভবন ও হলরুম নির্মাণ করা হয়। একইসাথে এলজিইডির বাস্তবায়নে ১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এর বাসভবন এবং ১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ইউএনও বাসভবন নির্মাণ করা হয়। উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনটি ৬ তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট ৪ তলা মূল ভবন কাজ সমাপ্ত হয়েছে। প্রতি ফ্লোরে ৪২৫০ বর্গফুট করে মোট ১৭ হাজার বর্গফুট এর মধ্যে ৩০টি কক্ষ রয়েছে। এছাড়া ৪ হাজার বর্গফুটের হলরুম সহ সর্বমোট ২১ হাজার বর্গফুটে নির্মিত ভবনে আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে। পরে উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী দুপুর ২টায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মত বিনিময়সভা করেন এরপর মন্ত্রী বিকেল ৪টায় লামার সরই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন পরিদর্শন করে বিকেল ৫টায় লামা ত্যাগ করেন।