কাপ্তই হ্রদে চলাচলরত স্পীড ও ইঞ্জিনচালিত বোটগুলোতে লাইফ জ্যাকেট নিশ্চিত করতে হবে
রাঙ্গামাটি জেলার অধিকাংশ উপজেলার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলো নৌপথের যোগাযোগ। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকরাও নানান এলাকার সৌন্দর্য্য স্থানগুলোতে ঘরে বেড়াচ্ছেন নৌপথে। উপজেলাগুলোতে বসবাসরত জনসাধারনেরও যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলো নৌপথে। তাই এসব মিলিয়ে মানুষের কাজকর্মের ব্যস্তার কারনে লঞ্চ, ইষ্টিমার আর ইঞ্জিন চালিত বোর্ট হলো তাঁদের নির্ভরশীল। বর্তমানে মানুষের সার্বিক কাজ কর্মে যেমন ব্যস্ততা বেড়েছে তেমন দ্রুত কাজ সারতে নৌযোগাযোগের সাথে এখন যোগ হয়েছে স্পীডবোট। স্থানীয় বেশ কিছু উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ী জনসাধারনের সুবিধার্থে নানান মডেলেরে স্পীডবোর্ট হ্রদে ভাসিয়েছেন তাই একদিকে দ্রুত যোগাযোগ বিনিময়ে কিছু বাড়তি আয় হচ্ছে। এর ফলে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কাজকর্ম সারতে গেলে অন্তত একটি দিনহলেও থাকতে হতো কিন্তু স্পীডবোর্ট থাকায় এখন সেই সুদুর বাঘাইছড়ি উপজেলায়ও সরকারি বেসরকারি কাজ সেরে দিনেই আসাযাওয়া হয়ে যাচ্ছে। ফলে মানুষের কাজের যেমন দ্রুতগতি বেড়েছে তেমনি যথেষ্ট সন্তুষ্টি রয়েছে।
কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কাপ্তাই হ্রদে চলাচলরত বেসরকারি এসব স্পীডবোর্ট যাত্রী সাধারনকে নিয়ে বিভিন্ন উপজেলায় চলাচল করলেও যাত্রীদের নিরাপদ সেবা দিচ্ছে না। তারা যতদ্রুত সম্ভব যাত্রীদের নিয়ে দ্রুত ট্রিপ দিয়ে আবারো যাত্রী নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাদের একটি লক্ষ্য যতদ্রুত সম্ভব যাত্রীকে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া এবং বাড়িত ট্রিপ দেয়া। ঠিক এভাবে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকদের নানান স্থান পরিদর্শন শেষে অন্য ভাড়া রিজার্ভ করার ব্যস্ততায় থাকে চালক মালিকরা। কিন্তু তাদের এসব করতে গিয়ে তারা একেবারে ভুলে থাকছেন যাত্রীদের নিরাপত্তায় লাইফ জ্যাকেট খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি অংশ। অথচ এটি তারা একেবারেই এড়িয়ে যাচ্ছেন আবার বোর্টে লাইফ জ্যাকেট থাকলেও যাত্রীদের পড়াচ্ছেন না বা পড়তে উৎসাহ করছেন না। ফলে নৌপথে যাতায়াতের সময় দূর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। ঠিক এভাবেই গত ৪নভেম্বর রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে বালুভর্তি বোট ও স্পিডবোট এর মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় স্কুল শিক্ষকসহ নিহত হয়েছেন দুজন ভাড়ায় চালিত স্পীডবোর্ট যোগে চালকসহ ৯জন বাঘাইছড়ির শিজকমূখ থেকে রাঙ্গামাটি আসছিলেন। স্পিডবোটটি দুপুর ২টার দিকে লংগদু উপজেলার কাপ্তাই হ্রদের কাট্টলিবিল এলাকায় পৌছলে রাঙ্গামাটি থেকে ছেড়ে যাওয়া বালুভর্তি বোট এর সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে স্পিডবোটটি উল্টে গিয়ে সব যাত্রী হ্রদে পড়ে যায়। পরে চালকসহ ৭জনকে উদ্ধার করলেও দুই জন হ্রদে ডুবে যায়। এদের মধ্যে শিক্ষক রিটন চাকমা ও শিক্ষার্থী এলোমিনা চাকমা। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবরি দল অনেক খোঁজাখুঁজি পরও তাদের উদ্ধার করতে পারেননি। তবে ৩৬ ঘন্টার মাথায় রাত ২টায় জেলেদের জালে শিক্ষকের মরদেহ এবং ৪০ ঘন্টার মাথায় এলোমিনা চাকমার লাশ ভেসে উঠলে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে।
যাত্রী সাধারন এবং স্থানীয়রা বলছেন স্পীডবোর্টে যাত্রী নিলেও কারো গায়ে ছিল না লাইফ জ্যাকেট। ফলে দূর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষনিক নিরাপদ থাকা কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ছে। একস্রোতা হ্রদের মধ্যে পড়ে তাৎক্ষনিক তলিয়ে যাচ্ছে এতে করে কোন কোন যাত্রী আবার দ্রুত ভেসে উঠতে পারলেও কেউ কেউ পানির চক্রকারে পড়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যাচ্ছে এবং মারাও যাচ্ছে। ঠিক এভাবেই সেদিনের দূর্ঘটনায় চালকসহ ৯জন যাত্রী হ্রদের পানিতে পড়ে গিয়ে বাকিরা সাতরিয়ে উঠতে পারলেও দুজন তলিয়ে যায় এবং সর্বশেষ ৪০ ঘন্টার ব্যবধানে লাশ ভেসে উঠে। এভাবই পূর্বে ঘটনা ঘটেছে। কাজের ব্যস্ততায়, যোগাযোগের ব্যস্ততায় জনসাধারণ দ্রুত কাজ সারতে স্পীডবোট যোগে যাতায়াত করছেন এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায়। কিন্তু একটু ভুুলের জন্য সচেতনতার জন্য মাঝপথে ঘটে যাচ্ছে বড় ধরনের ঘটনাও। তাই সকলের নিরাপত্তার স্বার্থে চলাচলরত স্পীডবোট এবং পর্যটকবাহী ইঞ্জিনবোর্ট গুলোতে লাইফ জ্যাকেট পড়া নির্দিষ্ট এবং তার নিশ্চত করতে হবে। আমাদারে স্থানীয় প্রশাসন এবং পর্যটন কর্পোরেশনের এসব বিষয়ে সুনজর দেয়া খুবই জরুরী।