বরকলে কার্বারী এসোসিয়েশন এর বার্ষিক সম্মেলন
নন্দ বিকাশ সভাপতি ও সুনীতি সাধারণ সম্পাদক
॥ নিরত বরন চাকমা, বরকল ॥
ঐক্য,শান্তি,প্রগতি স্লোগান নিয়ে রাঙ্গামাটির বরকলে উপজেলা কার্বারী এসোসিয়েশন এর আয়োজনে বার্ষিক সম্মেলনে নন্দ বিকাশ চাকমা সভাপতি ও সুনীতি বিকাশ চাকমা কে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট কার্বারী এসোসিয়েশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। বুধবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
উপজেলা কার্বারী এসোসিয়েশন এর সভাপতি নন্দ বিকাশ চাকমা এর সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিধান চাকমা। ১৭৪নং রামুক্যছড়ি মৌজার কার্বারী সুনীতি বিকাশ চাকমা এর সঞ্চালনায় প্রধান আলোচক ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা বিনতে আমিন,বিশেষ অতিথি উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান শ্যাম রতন চাকমা ও ভাইস(সংরক্ষিত) সুচরিতা চাকমা,বরকল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছির উদ্দিন, আইমাছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সুবিমল চাকমা প্রমূখ।
বিশেষ অতিথি বক্তব্য সুবিমল চাকমা বলেন,কার্বারীরা হচ্ছে রাজতন্ত্রের অংশ। প্রথাগত নেতৃবৃন্দরা সমাজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বড় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। যেহেতু তারা গ্রাম প্রধান। আর একটা বিষয় হলো উনবিংশ শতকের পর বর্তমান সময়ে এসে মহিলা কার্বারী পদে ক্ষমতায়ন করা হয়েছে সত্যিই প্রশংসনীয় বিষয়।তাই জনগণের স্বার্থে এবং জনকল্যাণে প্রথাগত নেতৃবৃন্দের কাজ করতে হবে।
ওসি নাছির উদ্দিন বলেন,সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষায় সকলের সমন্বয় রাখতে হবে।পাশাপাশি মাদক,বাল্য বিবাহ,নারী নির্যাতনরোধে সচেতনতা সাথে কাজ করতে হবে।
শ্যাম রতন চাকমা বলেন, হেডম্যান,কার্বারী ও রাজাতন্ত্রের প্রথা শতশত বছর পূর্বে চলে আসছে।এ প্রথা অনুসারে তিন পার্বত্য জেলায় খাজনা আদায় সহ বিভিন্ন কাজ এখনও বিদ্যমান রয়েছে।
সুচরিতা চাকমা বলেন,নারী সমাজ অনেক পেছনে পড়ে আছে।সুতরাং পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও আরো দক্ষ হতে হবে।
শ্যাম রতন চাকমা বলেন, হেডম্যান,কার্বারী ও রাজাদের প্রথা শতশত বছর পূর্বে চলে আসছে। এ প্রথা অনুসারে তিন পার্বত্য জেলায় খাজনা আদায় সহ বিভিন্ন কাজ এখনও বিদ্যমান রয়েছে।
প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য নাজমা বিনতে আমিন বলেন,শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। তাই তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষার উপর গুরুত্ব রেখে প্রথাগত নেতৃবৃন্দদের কাজ করতে হবে। কেননা প্রথাগত নেতৃবৃন্দরা হলেন রাষ্ট্রের মূল উপাদান।
প্রধান অতিথি বক্তব্য বিধান চাকমা বলেন,প্রথাগত নেতৃবৃন্দরা হলো সমাজের অগ্রসর অংশ।তাই সমাজকে প্রগতিশীল করতে প্রথাগত নেতৃবৃন্দদের এগিয়ে আসতে হবে। কারণ তৃণমূল পর্যায়ে তাদের কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। আর সমাজের সাধারণ মানুষের চিন্তাধারা থেকে প্রথাগত নেতৃবৃন্দেরা ভিন্ন।আর সামাজিক বিচার-আচার এবং আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে প্রথাগত নেতৃবৃন্দদের পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৯০০ সালের আইন,জেলা পরিষদ আইন ও আঞ্চলিক পরিষদ আইন সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকাটা জরুরি।কারণ বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
১৯নং দেওয়ানচর মৌজা হেডম্যান সভাপতি বক্তব্য নন্দ বিকাশ চাকমা বলেন,দীর্ঘদিন পর উপজেলায় কার্বারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।এরমধ্যে গ্রাম প্রধানরা আমার আস্থা রেখে পুণঃবার সভাপতি পদে নির্বাচিত করেন।এজন্য তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।আর
আমার উপর অর্পিত দায়িত্ববোধ থেকে কমিটির সকল সদস্যদের সাথে সমন্বয় রেখে কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবো।পাশাপাশি নতুন কমিটিতে নির্বাচিত অন্যান্য সদস্যদের প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইল।
বক্তারা, সামাজিক প্রথাগত বিচার-আচার,আইনশৃঙ্খলা,শিক্ষা,নারী ও শিশু সুরক্ষা,বন সংরক্ষণ ও বনায়ন সৃষ্টি,আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন,মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রদান,স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও পাড়া আধুনিকায়ন সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোচনা করা হয়। এসময় বরকল উপজেলার ২৮টি মৌজার পাড়া প্রধান ও গ্রাম প্রধানসহ অন্যান্যরা অংশগ্রহণ উপস্থিত ছিলেন।