[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

দামে কম, খেতে ভালো বলে বাজারে পাহাড়ি মিষ্টি পানের চাহিদা ব্যাপাক

৯৪

॥ মোঃ ইসমাইল হোসেন, মানিকছড়ি ॥

সবুজ বিস্তীর্ণ পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ি। অপার সম্ভাবনাময় এক ভূ-স্বর্গ। পার্বত্যঞ্চলের পাহাড়ি জনপদের পাহাড় চূড়ায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। তাদের জীবনজীবিকায় ভিন্নতা রয়েছে। পার্বত্যঞ্চলে বসবাসরত বেশির ভাগ মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল হলেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বেশির ভাগ মানুষই জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। ধান, কঁচু, আদা, মারফা, হলুদ, মিষ্টি কুমড়ো, তিল, ভুট্টা, বরবটিসহ প্রায় অর্ধশত ধরণের সবজি চাষাবাদ হয় বিস্তীর্ণ এই পাহাড়ে। এর সাথে নতুনমাত্রায় যোগ হয়েছে পাহাড়ের মিষ্টি পানের চাষাবাদ। অবিশ্বাস্য হলেও পার্বত্য অঞ্চলের বেশকিছু এলাকায় পান চাষে সফলতার মূখ দেখছেন চাষীরা। বাজারে চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পাহাড়ের চূড়া বা ঢালুতে পানের বরজ এখন দৃশ্যমান। আর এসব পাহাড়ি মিষ্টি পানের চাষাবাদ ও চাহিদা উপলব্ধি করা যায় সাপ্তাহিক হাঁটের দিনে।

মানিকছড়ি রাজ বাজারখ্যাত সাপ্তাহিক হাঁটের দিন শনিবার। মানিকছড়ি উপজেলার হাতিমুড়া, জামতলা, আগা ওয়াকছড়ি ছাড়াও গুইমারা উপজেলার সিন্দুকছড়ি ও লক্ষীছড়ি উপজেলার বেশকিছু এলাকায় স্থানীয় চাষীদের উৎপাদিত পান বাজারে নিয়ে আসতে দেখা যায়। সেই সাথে নির্ধারিত পান বাজার ছাড়াও বাজারের একাধিক স্থানে তা বিক্রি করতে লক্ষ করা যায়। মাটিতে ও গাছে চাষাবাদ করা এসব পানের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীর লক্ষ করা যায়। দামে কম ও খেতে বেশ ভালো লাগার কারণে ক্রেতাদের আগ্রহের কমতি নেই। এক বিরা পানের দাম ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। একেক জন বিক্রেতা ১৫শ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেন বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে মানিকছড়ি বাজার ঘুরে কথা হয় গুইমারা উপজেলার সিন্দুকছড়ি এলাকার পান বিক্রেতা সুজাই মারমার সাথে। তিনি জানান, খুব ভোরে ৭শ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে সাপ্তাহিক হাটের দিন শনিবার মানিকছড়ি বাজারে পান বিক্রি করতে এসেছি। প্রতি বিরা পানের দাম ১০-২০ টাকা ধরে বিক্রি করছি। তাবে দামের সময় তা প্রায় ৩০-৩৫টাকাও বিক্রি করে থাকি। প্রতি শনিবার প্রায় ৮-১০ হাজার টাকার পান বিক্রি করি। যা বাড়তি আয় হিসেবে পারিবারিক অর্থের যোগান দিয়ে থাকে।

একই এলাকার অংগ্য মারামা বলেন, জুমচাষের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের উদ্দেশ্যে পান চাষ করেছি। আর শনিবার সাপ্তাহিক হাটের দিন তা বাজারে নিয়ে আসি। ২-৫ হাজার টাকা বিক্রি করে তা দিয়ে সাপ্তাহের বাজার করে নিয়ে যাই।

লক্ষীছড়ি উপজেলার বয়বৃদ্ধ পান ক্রেতা মিনিউ চাকমা জানান, পান খাওয়ার শুরু থেকে পাহাড়ে চাষাবাদকৃত এই মিষ্টি পান খেয়ে আসছি। দামে কম ও খেতে ভালো লাগে বিধায় প্রতি সাপ্তাহে ২-৩ বিরা পান নিয়ে যাই। এতে পুরো সাপ্তাহ চলে যায়। তাছাড়া অন্যান্য পানের দাম যেমন বেশি, খেতেও তেমন একটা ভালো লাগে না আমার কাছে। বাজারে এসে সবার আগে পান-সুপাকি কিনে নেই।

মানিকছড়ি উপজেলা ও গুইমারা উপজেলার সীমান্তবর্তি এলাকার আরেক পান বিক্রেতা উক্রাইউ মারমার বলেন, শারীরিক পরিশ্রম ছাড়া অন্যান্য খচর কম হওয়ার কারণে অন্যান্য সবজি চাষের পাশাপাশি পান চাষ করেছি। আর সাপ্তাহিক শনিবার মানিকছড়ি বাজার তা বিক্রি করতে আসি। যা বিক্রি হয় তা দিয়ে বাজার করে নিয়ে যাই। এতে করে বাড়তি আয় বলে কিছুটা স্বস্থিতে আছি।

এসব পান যে শুধু পাহাড়ে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরাই খায় এমনটা কিন্তু না। মুসলিম বাঙ্গালীসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরাও খেয়ে থাকে। ফটিকছড়ি থেকে আগত আরেক পান ক্রেতা সুকুমল বাবু জানান, আমাদের ফটিকছড়ি বাজারে সচরাচর এই পাহাড়ি মিষ্টি পান পাওয়া যায় না। তাই শনিবার মানিকছড়ি বাজারে আসলে অন্যান্য বাজারের পাশাপাশি পাহাড়ের মিষ্টি পানও দুয়েক বিরা নিয়ে যাই। বাড়ির মানুষ ও পার্শবর্তিরাও একসাথে মজা করে খায়। দেখতে ছোট বলে অনেক আগ্রহ থাকে এই পাহাড়ি পান খেতে।

তবে চাষিদের সাথে আলাপকালে আরো জানা যায়, পাহাড়ে বৃষ্টির শুরুতে পানের চারা রোপন করা শুরু হয়। আর পুরো বৃষ্টির মৌসুমে পানের বৃদ্ধি ঘটে। পাহাড়ের চূড়া বা ঢালুতে পানি না জমে থাকার কারণে পানের গাছ খুব বেশি নষ্ট হয় না। তবে শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ে পান চাষ কমতে শুরু করে। এবং অনেক জমিতে চাষাবাদ বন্ধ করে দিতে হয়। পানির ব্যাবস্থা থাকলে সারাবছর পাহাড়ি পানের চাষাবাদ করা সম্ভব বলে মনে করছেন চাষীরা।