[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

পাহাড়ে খেজুরের গাছ কমলেও বাড়ছে খেজুর রসের চাহিদা

১২৩

॥ মোঃ আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা ॥

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস। মাটিরাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কয়েক বছর পূর্বেও শীতে স্থানীয় গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে খুবই ব্যস্ত সময় কাটাতেন। কালের বিবর্তনে আজ এসব ছবি বিলুপ্ত প্রায়।

প্রচন্ড শীত যখন আনাগোনা করে পল্লীর পরতে পরতে ঠিক তখনী গাছিরা ছুটে যান অবহেলিত ভাবে পড়া থাকা দু’একটা খেজুর গাছের সন্ধানে। যথাযথ নিয়মানুসারে গাছ কেটে রস সংগ্রহ করেন তারা। পাহাড়ে ঝেঁকে বসেছে তীব্র শীত। শীত যত বাড়ছে খেজুরের রসের চাহিদাও ততো বাড়ছে। গ্রামীণ জনপদের ঘরে ঘরে এই রস দিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের পিঠা ও পায়েস। তাই তীব্র শীত উপেক্ষা করে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন মাটিরাঙ্গা উপজেলার গাছিরা।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ইটের ভাটায় ব্যাপকভাবে খেজুর গাছ ব্যবহার করায় এ গাছ কমে গেছে। খেজুর গাছ সস্তা হওয়ায় ইটের ভাটায় এই গাছই বেশি পোড়ানো হয়। এছাড়া অনেক সময় ঘরবাড়ি নির্মাণ করার জন্য খেজুরের গাছ কেটে ফেলা হয়। যে হারে গাছ কাটা হয় সে হারে গাছ লাগানো হচ্ছে না, তাই দিন দিন খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে। ফলে এ জনপদের মানুষ এখন খেজুর রসের মজার মজার খাবার অনেকটাই হারাতে বসছে।

এদিকে গাছিরা প্রতিদিন বিকেলে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিষ্কার করে ছোট-বড় কলসি, প্লাস্টিকের ড্রাম, স্টিল ড্রাম ইত্যাদি বেঁধে রাখে রসের জন্য। পরদিন কুয়াশাজড়ানো সকালে রস সংগ্রহ করা হয়। সুস্বাদু এই রস আগুনে জ্বাল দিয়ে বানানো হয় বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড়। খেজুরের রস বিক্রি করেও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এখানকার গাছিরা।

নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খেজুরের রসের দাম প্রতিকেজি খেজুরের রস গতবছর ২০/৩০ টাকা বিক্রি হলেও এ বছর তা বেড়ে প্রতিকেজি রসের দাম ৫০ টাকা।

শীত মৌসুমের শুরুতেই খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করা হয়। বছরের কয়েক মাস রস সংগ্রহ করা যায়। এ রস থেকে বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন গাছিরা। কেউ কেউ এই কাঁচা রস বিক্রি করেন। ক্রেতারা কাঁচা রস দিয়ে পায়েস রান্না করে। অনেকেই আবার এই রস জ্বাল দিয়ে বিভিন্ন রকম শীতের পিঠা তৈরি করে থাকেন।

গাছি মো: কামরুল জানান, শীতের পিঠা ও পায়েসের জন্য খেজুরের রসের বাড়তি চাহিদা রয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি খেজুরের রসের রাব গুড় (খেজুরে রসের গাড় অংশ) বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। তবে খেজুর গাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। তাই একসময় হয়তো খেজুর রসের ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে।

অন্য গাছি খায়ের জানান,পাহাড়ে খেজুরের গাছগুলো উঁচুনিচু জায়গায় হওয়ায় রস সংগ্রহ করতে বিপাকে পড়তে হয়। কখনো কখনো রস পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। তারপরেও শীতের মৌসুমকে কাজে লাগিয়ে কয়েকমাস একটু আলাদা আয় করতে পারি।

পাইকারি বিক্রেতা কামাল জানান, আমরা গাছিদের কাছ থেকে রাব গুড় ১৮০-১৯০ টাকায় ক্রয় করি। পরে ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি করি। এছাড়াও কিছু রস অনলাইনে অর্ডার নিয়ে শহরে কুরিয়ার করে বিক্রি করি। এতে শীত মৌসুমে একটু বাড়তি আয় করা যায়।

মাটিরাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর আব্দুল হামিদ বলেন, মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে খেজুর গাছ কমতে থাকলেও হারিয়ে যায়নি খেজুর রসের কদর। সুস্বাদ ও পিঠাপুলির জন্য অতি আবশ্যক উপকরণ হওয়ায় এখনও খেজুর রসের চাহিদা রয়েছে। তবে আগের মত খেজুরের রস ও গুড় পাওয়া যায় না। পেলেও আগের চেয়ে কয়েকগুন বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়। তবে,কাঁচা রসের পায়েস খাওয়ার কথা এখনো ভুলতে পারি না।

তাছাড়া খেজুর গাছ রক্ষায় বন বিভাগের কার্যকরী কোন পদক্ষেপ না থাকায় ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে খেজুর গাছ আর শীতের মৌসুমে খেজুর গাছের রস শুধু আরব্য উপনাস্যের গল্পে পরিনত হতে চলেছে। ঐতিহ্যবাহী এ খেজুর রসের উৎপাদন বাড়াতে হলে টিকিয়ে রাখতে হবে খেজুর গাছের অস্তিত্ব। আর সে জন্য যথাযথ ভাবে পরিবেশ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে ইটভাটাসহ যেকোন বৃক্ষ নিধনকারীদের হাত থেকে খেজুর গাছ রক্ষা করতে হবে।