জেলা পরিষদগুলো দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে
ছাত্র পরিষদ সরকারের দালালী করেনা কিন্তু ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামী হতে হবে: সন্তু লারমা
॥ মিলটন বড়ুয়া ॥
পার্বত্য চুক্তি এখন অবহেলা আনাদর অবজ্ঞায় থাকায় তা কাগজে পরিণত হয়েছে। চুক্তি নিয়ে যেভাবে তালবাহানা করা হচ্ছে তাতে জুম্ম এবং এখানকার জনগন ভুলে যায় সে অবস্থা। পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজকে বিরাজমান বাস্তবতার দিক তুলে ধরতে হবে। এখানকার সবচেয়ে বড় শিক্ষত ছাত্র যুব সমাজ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা থেকে সড়ে যাচ্ছে। অথচ চুক্তি সম্পর্কে এখানকার ৭০/৮০ শতাংশ চুক্তির কারণ বিষয় সম্পের্কে জানেও না জানতেও চেষ্টা করছে না। শুক্রবার সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমী হলরুমে আয়োজিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে প্রবন্ধ প্রতিযোগীতা আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান শ্রী জ্য্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা প্রকাশ সন্তু লারমা এসব কথা বলেন।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদে এর উদ্যোগে প্রবন্ধ প্রতিযোগীতা বিষয়ক কমিটির আহবায়ক ছাত্র নেতা জিকো চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য শ্রী নিরুপা দেওয়ান, সুমন মার্মা, কেন্দ্রƒীয় সভাপতি ছাত্র পরিষদ, শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যা, সাধারণ সম্পাদক হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও শিক্ষক শিশির চাকমা প্রমুখ।
প্রধান অতিথি সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছর হয়েছে কিন্তু এর বাস্তবায়নে ছাত্রদের কিছু করা দরকার। চুক্তির বিষয়গুলো নিয়ে ছাত্রসমাজকে পড়াশুনা করা দরকার। কেননা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতিকে তাদের তুলে ধরতে হবে। যাদের জন্য এ চুক্তি করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তারা দুরে সরে যাচ্ছেন বলেও মনে হয়। এখানে সকলকে বুঝতে হবে পার্বত্য চুক্তি একটি সাধারণ দলিল নয়। এটি জুম্ম তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগনের অধিকারের বৃহৎ একটি চুক্তি। এটি স্বাধীকার অধিকারের লড়াই আর সংগ্রামের এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার চুক্তি। পার্বত্য চুক্তির প্রয়োজন কেন ছিল তার উত্তর খুঁজে নেয়া সকলের দায়িত্ব বলেই মনে করি।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, শিক্ষিত জীবন গঠন করার পর শুধু নিজের উন্নতির কথা ভাবলে তো হবে না। এখানে ১৪ ভাষাভাষি এবং স্থায়ী বাসিন্দাদের অধিকারের কথা চুক্তির সাথে নিহীত রয়েছে। ছাত্র সমাজ যেহেতু জুম্ম তথা এখানকার জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাই তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। পার্বত্য চুক্তি যেভাবে মূখ থুবড়ে পরে আছে তার বাস্তবায়নে নতুন করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আপনারা চুপ থাকলে চলবে না এখানে আপনাদের বংশধরদের বিষয়েও ভাবতে হবে। নিজের সুখে সুখী হবেন ভাবলেতো চলবে না। ঘরে ঘরে উন্নয়ন করবেন ঠিক কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়নেতো সজাগ থাকতে হবে। তাই ছাত্র সমাজকে সেই শিক্ষাই গ্রহন করতে হবে যে শিক্ষা জীবন জীবিকা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। ছাত্ররা বয়সে তরুন হতে পারেন কিন্তু বুঝার ক্ষেত্রে তরুন ভাবলেওতো হবে না। প্রধান অতিথি এসময় চুক্তি ছবি দেখিয়ে বলেন, এই চুক্তি ও ছবির পিছনে অনেক ইতিহাস রয়েছে ত্যাগ রয়েছে তা জুম্ম, ছাত্র এবং যুব সমাজকে বুঝতে হবে। তিনি বলেছেন, সেদিন চুক্তির পর প্রথম রাঙ্গামাটি আসার সময় আমাকে যারা স্বাগত জানিয়েছেন এগিয়ে আনতে এসেছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশই স্থায়ী বাঙালিই ছিলেন। আমাদের অস্তিত্ব আমরা ভুলে গেছি। যে অধিকারে বিষয়ে চুক্তি হয়েছে সে অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠা হয়নি। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ সরকারের দালালী করেনা কিন্তু ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামী হতে হবে। যারা লড়াই সংগ্রাম করেনি পৃথীবিতে অনেক জাতি হারিয়ে গেছে।
সন্তু লারমা জেলা পরিষদের বিষয়ে বলেন, জেলা পরিষদগুলো দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। তারা পরিষদ আইন না মেনে সরকারের দালালী করছেন। ৩৩টি বিষয়ে জেলা পরিষদ কাজ করবে অথচ তাঁরা সেদিকে নেই। যেন আমরা উচ্চ বিলাসী হয়েছি, সরকারের দালালী করছি। চাকুরী প্রাপ্তীতে ১ লাখের পর ১০-১৫ লাখে উঠেছে। আজকে জেলা পরিষদ কি দিচ্ছে অথচ জেলা পরিষদ গঠনে কত শ্রম রক্ত দিতে হয়েছে। আমাদের অস্তীত্ব আমরা ভুলে গেছি।
পরে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ প্রবন্ধ প্রতিযোগীতায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের মাঝে অর্জিত স্থান অধিকার পর্যায়ে পুরস্কর বিতরণ করেন।