রাঙ্গামাটিতে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি প্রতিরোধ দিবস পালিত
॥ আরিফুর রহমান ॥
“দূর্নীতির বিরুদ্ধে একসাথে” প্রতিপাদ্যে রাঙ্গামাটিতে আন্তর্জাতিক দূর্নীতি প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়েছে। শুক্রবার (৯ডিসেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসন প্রাঙ্গনে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, জাতীয় পতাকা ও দূদক পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও ফেস্টুন উড়ানোর মধ্য দিয়ে দিবসটি উদ্বোধন করেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমান। এর একটি মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন’র (দূদক) সম্বনিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শফিউল্লাহ্’র সভাপতিত্বে এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমান। এসময় পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক (রাজস্ব) এস. এম. ফেরদৌস ইসলাম, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর ইনামুল হাসান, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ওমর ফারুক সহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকতা, প্রিন্ট্র ও ইলেক্টনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন’র (দুদুক) সম্বনিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শফিউল্লাহ্ বলেন, নীতির পরিপন্থি কাজই দূর্নীতি। দূর্নীতি হলো ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধভাবে লাভবান হওয়া। অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার জন্য অপরাধীরা ঘুষ-লেনদেন, অর্থ আত্মসাত, প্রতারণা, মানি লন্ডারিং, জাল-জালিয়াতি অবৈধ সম্পদ অর্জন করাসহ বিভিন্ন অপরাধ করে থাকে। দূদক এসকল অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। দূদক অভিযোগ অনুসন্ধান তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে অপরাধীদের করে বিচারের মুখোমুখি দাড় করায়। বর্তমানে দূদকে মামলার হার ৭০ শতাংশেরও বেশী। যা অত্যন্ত আশা ব্যঞ্জক। ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও এ স্বপ্ন এখনো পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। এর অন্যতম প্রধান করণ দূর্নীতি। এ দূর্নীতি দমন করতে হবে। সকলকে দূর্নীতিবাজদের সাামাজিকভাবে প্রতিহত করতে এবং ঘৃণা করতে আহবান জানান তিনি।
পুলিশ সুপার বলেন, দূর্নীতি একটি বৈশি^ক সমস্যা। দূর্নীতির কারণে অনেক রাষ্ট, প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে। আমরা ছোটকালে দেখেছি আমাদের গ্রামে একটা দূর্নীতিগ্রস্থ লোক থাকলে তার প্রতি সকলে একটু অন্যভাবে তাকাতো। কিন্তু এখন দেখা যায় মসজিদের সভাপতি হয়েছে একজন সবচেয়ে দূর্নীতিগ্রস্থ লোক। কারণ সে দান করেছে। সে দানের উৎস নিয়ে কখনো কেউ কিছুই বলে না। তারমানে আমরা সামাজিক ভাবে এটাকে অভিযোজন করে নিচ্ছি। এটা আরো বেশী ভয়ংকর। এই অভিযোজন থেকে বের হয়ে আসাটা ওভার নাইটে হবে না। এটা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। দীর্ঘ সময় পরে এখানে থেকে বের হয়ে আসার পরই আমরা দূর্নীতিমুক্তের দিকে যেতে পারবো। দূর্নীতি বিরুদ্ধে আমাদের আয়োজনের অভাব নেয় কিন্তু ব্যক্তি আত্বশুদ্ধির জায়গাগুলোতে আরো কাজ করার সুযোগ আছে। সুতরাং সামাজিক এডাপ্টেশনের জায়গা থেকেও সাধারণ নাগরিকদের বের হয়ে আসতে হবে। সামাজিকভাবে আপনি যদি এটি এডাপ্ট করেন এর পরিমাণ বাড়তেই থাকবে। আমরা চাইনা দূর্নীতি পরায়ন একটি অফিস, সমাজ বা রাষ্ট তৈরি হোক। কেননা এটা অপমানের ও লজ্জার এবং আমাদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করে দেয়। সুতরাং প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রত্যেক জায়গায় দায়িত্ব পালন করা।
জেলা প্রশাসক বলেন, যুদ্ধ, অস্ত্র ব্যবসা এগুলোও দূর্নীতির একটি উৎস। অস্ত্র ব্যবসা করার জন্য বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। এগুলো যে প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ হয়ে যাচ্ছে তা আমরা একবারও ভেবে দেখছি না। কক্সবাজারের টেকনাফ অঞ্চলে সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে লক্ষ করছি মাদক ব্যবসা অত্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ আমাদের প্রতিবেশি একটি দেশ থেকে স্বরনার্থীও আসছে স্রোতের মতো মাদকও আসছে। আমরা এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। সবচেয়ে দূঃখের বিষয় হলো সেখানের স্থানীয় জনগণ মাদকের সাথে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছে। আরো দূঃখের বিষয় এই যে এ বিষয়টা যে একটি অপরাধ এটা তারা কোনো ভাবে মানতে চাচ্ছে না। ইয়াবা নিয়ে এসে যে পুরো একটি জাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এবিষয়ে তাদের কোন বিন্দুমাত্র উদ্বেগ নেই। তারা মনে করছে এটি শুধু একটি পণ্য এই ধরনের মানসিকতা যদি থাকে তাহলে ঐ পরিবার, পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম কিভাবে দূর্নীতি মুক্ত থাকবে। আমাদের নৈতিকতার উন্নয়ন করতে হবে। বুদ্ধিভিত্তিক চর্চায় আমাদেও উন্নতি করতে হবে না হলে দেখা যাবে আমাদের উন্নয়ন টেকসই হবে না। আমরা সবাই বলি সিঙ্গাপুর হবো কিন্তু আমরা আমাদের মানসিকতাও তো সে রকম করতে হবে। ব্যক্তি পর্যায়ে আমাদের এবিষয়ে উৎকর্ষ সাধন করতে হবে।