মানিকছড়ি টিংকু বড়ুয়া জেলা পর্যায়ে জয়িতা নির্বাচিত
॥ মোঃ ইসমাইল হোসেন, মানিকছড়ি ॥
মাধ্যমিকের ঘুন্ডি পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে পা রাখার আগ মুহুর্তে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয় টিংকু বড়ুয়াকে! চট্টগ্রাম জেলার রাংগুনিয়া উপজেলার মধ্যবিত্ত পরিবারের এক ছেলে সাথে ২০০৭ সালে বিয়ে হয় তার। বিয়ের বেশ কিছুদিন আনন্দ উল্লাস আর আন্তরিকতার মধ্য দিয়ে দিয়ে তাদের সংসার অতিবাহিত হয়। ২০১০ সালের ৯ ডিসেম্বর তাদের কোল জুড়ে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। বেশ আনন্দেই কাটছিল তাদের সংসার। দুপরিবারের মাঝে আথিতিয়েতারও কমতি ছিল না। কিছুদিন পর স্বামীর ও তার পরিবারের লোকজনের চাহিদা বাড়তে শুরু করে। যা এক পর্যায়ে যৌতুকের দাবিতে পরিনত হয়! যার ফলে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। নির্যাতন সইতে না পেরে স্বামীর বাড়ি থেকে নিজের বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। এভাবেই চলতে থাকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। স্বামী ও তার পরিবারের যন্ত্রণা সইতে না পেরে তাকে বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন টিংকু ও তার পরিবার। পরে ২০১৭ সালে ২রা জুন তার গর্ভে সন্তান রেখে সৌদি আরবের মাটিতে পারি জামান তার স্বামী। যাওয়ার কয়েক মাস পর তার দ্বিতীয় কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। বিদেশে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে তার সাথে যোগাযোগ করা বন্ধ করতে করতে শুরু করেন। মাঝে মধ্যে খোঁজ খবর নিলেও বেশ কয়েক বছর ধরে তার ও তাদের সন্তানের কোনো খোঁজখবর রাখছে তার স্বামী!
বলছিলাম মানিকছড়ি উপজেলাধীন মহামুনি এলাকার দুসন্তানের জননী টিংকু বড়ুয়ার কথা! এতকিছুর পরও তার পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। করেছেন বিএ পাশ। নিজের সংসার আর দুটি কন্যা সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে। কিন্তু এতকিছুর পরও তিনি থেকে যাননি। চালিয়ে গিয়েছেন জীবন সংগ্রাম। নিজেকে স্বাভলম্বি হিসেবে গড়ে তুলতে ঘরে বসেই শুরু করেন অনলাইন ব্যবসা। ‘নীলময়ী ফ্যাশন হাউস’ নামক একটি আইডি দিয়েই শুরু করেন তার ব্যবসা। নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা এই টিংকু বড়ুয়াই জেলা পর্যায়ে এবার জয়িতা নির্বাচিত হয়েছে।
আজ ৯ ডিসেম্বর আর্ন্তজাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস-২০২২ উদযাপন উপলক্ষে খাগড়াছড়ি জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কতৃক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি ইনস্টিটিউটে আয়োজিত আলোচনা সভা ও জয়িতা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাকে ‘নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা’ ক্যাটাগরিতে জেলার জয়িতা নির্বাচিত করা হয় এবং সংবধ্বনা প্রদান করা হয়। এছাড়াও মানিকছড়ি উপজেলা পর্যায়েও তাকে জয়িতা নির্বাচিত করা হয়। উপজেলা সম্মেলন কক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার পক্ষে তার মেয়ে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন।
তিনি জানান, জীবনে শত বাধা পেড়িয়েছি কিন্তু হাল ছাড়িনি। জীবন যুদ্ধে কোনো না কোনো একদিন সফল হবই। তাই তো ঘরে বসেই অনলাইন ব্যবসা শুরু করি। ব্যবসা ও দুসন্তানের জীবন এখন বেশ ভালো যাচ্ছে। বেগর রোকেয়াকে অনুসরণ করে জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ারও আহবান জানান সমাজের অসংখ্য নির্যাতিত নিপীড়িত নারীদের। যেকোনো প্রয়োজনের তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি। মেয়ে দুটোকে মানুষের মত মানুষ করা পাশাপাশি জীবনের সফলতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছানোর আগ্রহের কথাও প্রকাশ করেন তিনি।