পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি পালন
এদেশের মুক্তির সংগ্রামে পাহাড়িরাও যোগ দিয়েছে এবং রক্ত ঝড়িয়েছে: উষাতন তালুকদার
॥ মোঃ আরিফুর রহমান ॥
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও রাঙ্গামাটি আসনের সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার বলেছেন, পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছর হয়ে গেল অথচ এত বছরেও চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় মানুষের মাঝে অধৈর্য এসে গেছে যে। যাদের সাথে পার্বত্যবাসীর চুক্তি হয়েছে এদের দিয়ে আর হবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের এ সমস্যাকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর সমাধান রাজনৈতিক ভাবে এবং শান্তিপূর্ণ ভাবেই করতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক ভাবে সমাধানের পরিবর্তে এখন বল ও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সমাধানের রাস্তা খোজাঁ হচ্ছে। শুক্রবার (২ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় শহরের জিমনেশিয়াম মাঠে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি ডা. গঙ্গামানিক চাকমার সভাপতিত্বে এসময় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল সভাপতি শ্রী প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, এম.এন লারমা মেমোরিয়েল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি ড. ভবতোষ দেওয়ান, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মাসুম, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অরুন ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুমন মারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি অমিতাভ তঞ্চঙ্গ্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মনি চাকমা প্রমুখ।
তিনি সরকারের নিকট প্রশ্ন রেখে বলেন, চুক্তির ৭২ টা ধারা থেকে ৪৮টা করেছেন। এ কথাটি বলছেন কত বছর হয়েছে? এর মধ্যে বাড়েও নাই কমেও নাই শুধু ৪৮টাতে রয়েছেন। কি বাস্তবায়ন করলেন? লিখিতভাবে চুক্তি করছেন ওয়াদা করেছেন যে, এ চুক্তি বাস্তবায়ন করবেন কিন্তু বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আপনারা কি করছেন? আপনারা সমাধানে বিশ^স্ত নয় এখন আপনারা অন্য উপায়ে যেতে চাচ্ছেন। উচ্ছেদ করে, ধ্বংস করে পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলন দমন করা সম্ভব নয়। এমএন লারমা আমাদের শিখিয়ে গিয়েছেন আমাদের সংগ্রাম করে বেচেঁ থাকতে হবে। আর যারা লড়াই করতে শিখেছে তাদের পরাজিত করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ সরকার উন্নত জাতি, বৃহৎ জাতি আপনাদের ১৭কোটি আপনাদের ভয়ের কিছু নাই। এ জায়গার কয়েক লাখ মানুষ আপনাদের কোন ক্ষতি করবে না। আপনারা তাদেরকে কাছে টানেন এদের বেশী কিছু চাওয়া-পাওয়া নাই তারা অল্পতেই তুষ্ট।
উষাতন তালুকদার আরো বলেন, এদেশের মুক্তির সংগ্রামে পাহাড়িরাও যোগ দিয়েছে এবং রক্ত ঝড়িয়েছে। আমাদের রক্তেও এদেশ স্বাধীন হয়েছে। ১কোটি মানুষ মুক্তি সংগ্রামে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। তার মধ্যে ৯০ভাগ হিন্দুরা গেছে। রক্তও ওরা বেশী দিয়েছে ত্যাগও ওরা বেশী দিয়েছে। তাই আমি সরকারকে স্বরণ করিয়ে দিতে চাই পাবর্ত্য চুক্তির পাশাপাশি বাংলাদেশ হিন্দু,বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ থেকে সরকারের কাছে দাবি জানানো প্রেক্ষিতে এ বর্তমান সরকার নির্বাচনি ওয়াদা করেছে ওরা ক্ষমতায় গেলে সংখ্যালঘু কমিশন করবে, বৈষম্য বিলুপ আইন করবেন এবং অর্জিত সম্পত্তির প্রত্যাপন আইন করবেন এবং পার্বত্য চুক্তি ও ভূমি কমিশন আইন বাস্তবায়ন করবেন। সমতলের আদিবাসিদেও জন্য আলাদা ভূমি কমিশন আইন করবেন। এ ওয়াদা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা বুঝিনা যারা ক্ষমতায় যায় তারা মনে করেন এ গদি যেন বাপ দাদার সম্পত্তি। বর্তমান সরকারের অনেকেই মনে করে থাকেন এই যেন আজীবনের জন্য পেয়ে গেছেন। দেশের সংখ্যালঘু মানুষ যদি আওয়ামীলীগের পক্ষে ভোট না দেয় তাহলে তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে না। তবে রাতের অন্ধকারে করা হলে সেটা আলাদা। রাতের অন্ধকারে না করে যদি দিনে দুপুরে করেন তাহলে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না আপনারা ভালো ভাবেই উপলব্ধি করবেন। মানুষের জীবনের কোন নিরাপত্তা নাই। শুধু পাহাড়ের মানুষ নয় সমতলের মানুষও এখন অতিষ্ট।
তিনি বলেন, চুক্তি করেছেন অথচ কথা দিয়ে কথা রাখেন না। জেলা পরিষদ পুলিশেরর কন্সটেবল থেকে এসআই পর্যন্ত নিয়োগ দিতে পারবে। এটা ঊর্ধতন কর্মকর্তার কানে গেলে তারা বলে পুলিশ দেওয়া যাবে না। লামাতে ১১-১২ ম্রো ও ত্রিপুরা পরিবার চাষ করে জীবিকা চাষ করে। ওখানে রাবার বাগানের লোকেরা জুম ভূমি পুড়িয়ে দিলো। তারপর কি করলো যে ঝিরি থেকে জুম্মরা পানি খায় সে পানিতে বিষ মেশানো হয়েছে। তার পরিবর্তে রাবান উন্নয়ন বোর্ড থেকে নোটিশ গেলো এ স্থানে কোন স্থাপনা করা যাবেনা। একটা স্কুল হচ্ছে ওখানে তাও করা যাবে না। সরকারকে বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করবো। তিনি বলেন, ম্রো-ত্রিপুরারা কি এদেশের বাহিরের নাগরিক? ওরাতো বাংলাদেশের নাগরিক এবং জীবিকা নির্বাহের অধিকার। তদন্তের জন্য বান্দরবান জেলা পরিষদের যে টিম গেছে ওরা তদন্ত করেছে, প্রতিবেদন দিয়েছে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে। প্রতিবেদনে বলা হয় রাবার বাগানের লোকেরা ৪০০ একর জমি বেদখল করে নিয়েছে। ওরা আজকে এখানে কালকে ওখানে ওদের কি কোন অবিভাবক নেই।