কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের ধর্মদেশনায় ড.এফ দীপংকর মহাথের
সত্য দিয়ে বারংবার আঘাত করলে সেখানে মিথ্যার মৃত্যুই হবে
॥ মিলটন বড়য়া, বান্দরবান থেকে ফিরে ॥
দেব মানব পূজ্য, অরন্য বিহারী, শ্মশানচারী, ত্রি-চীবরধারী পাংশুকুলীক ধুতাঙ্গ সাধক (ধুতাঙ্গ ভান্তে) ড. এফ দীপংকর মহাথের মানব কল্যানে একক ধর্মদেশনায় বলেছেন, শান্তি ও সুখের মার্গ হলো চক্রবালের (সকল প্রানীর) সকলের মঙ্গল কামনা করা। তাই ধর্মচক্র চালু থাকলে সুখ নেমে আসে। সত্য দিয়ে বারংবার আঘাত করলে সেখানে মিথ্যার মৃত্যুই হবে। গত ৪ নভেম্বর (শুক্রবার) ভান্দরবান আর্য গুহা ধূতাঙ্গ বিমুক্তি বিহারে উপাসক-উপাসিকা এবং সেবক-সেবিকা কর্তৃক আয়োজিত ১১তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে একক ধর্মদেশনায় দেব মানব পূজ্য ধুতাঙ্গ সাধক এ উপদেশ দেন। এসময় ভিক্ষু সংঘ শ্রামণ সংঘ উপস্থিত ছিলেন।
কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান কমিটির সকল উপাসক-উপাসিকা এবং সেবক-সেবিকার উপস্থিতিতে মৈত্রীময় শুভেচ্ছা জানান বিহারের প্রধান দায়ক শ্রী প্রসন্ন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, সদস্য সচিব বেশান্ত বড়ুয়া, চট্টগ্রামের প্রধান দায়ক অনক বড়ুয়া ও বিহারের প্রধান সেবিকা হেপী চাকমা প্রমুখ।
দেব মানব পূজ্য ধুতাঙ্গ সাধক তাঁর ধর্ম উপদেশে আরো বলেছেন, দেখুন মাদার গাছের সাথে চন্দন ঘষলে সেখান থেকেও চন্দনের গন্ধ বের হবে। শান্তির উৎসই হচ্ছে ধর্মচক্র। যে কোন সময় জীবন সূর্য ডবন্ত হতে পারে। লোকচক্র হলো অহংকার। অপরের সুখ যে চিন্তা করে না তার সুখতো আসবে না। অবৈধ কামাচার সুখ নষ্টই করে চলবে। আমিতো কর্পোরেশনের ময়লার ডাস্টবিন আপনাদের খারাপ উচ্ছিষ্টগুলো গ্রহন করতে আমি প্রস্তুত। লোকচক্র দুঃখকে দুঃখ হিসেবে জানতে দিচ্ছে না। মানব জীবন খুব স্বল্প স্থায়ী, তাই রূপ, রং, রস, কাম, শব্দ, গন্ধ ও অহংকার হলো লোকচক্র। তাই শান্তির উৎসই হচ্ছে ধর্মচক্র। ধর্ম চক্রে থাকলে শান্তির জন্য আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন করতে হবে না। অন্যের কূকর্মের কথা বলায় আপনি কষ্ট পেয়েছেন, কিন্তু আপনিওযে কতোজনকে কষ্ট দিয়েছেন সেটিও চিন্তা করা দরকার। আপনাদের চিত্তকে ধুতে হবে কেননা সেখানে ময়লার স্তুপ হয়ে গেছে। আয়না অপরিস্কার থাকলে নিজের চেহারা দেখা যায় না তাই ধর্ম হলো সেই আয়না। যেখানে আমি যাবো সেখানে সকলের মঙ্গল হলে আমাকেতো যেতেই হবে। আমাকে গুন্ডা, দালাল, গোয়েন্দাও বলছে কিন্তু তাতে আমিতো পীড়িতও নই। যারা আমার ভিক্ষুকে বিহারে থাকতে দেয় না আমিতো তাদের অমঙ্গলও কামনা করতে পারিনা। যারা একাজটি করেছেন তাদের বিপদে বাঁচানোর জন্য যদি আমাকে রক্তও দিতে হয় তাও আমি দেবো। সত্য দিয়ে বারংবার আঘাত করলে সেখানে মিথ্যার মৃত্যুই হবে, তা না হলে মিথ্যার মৃত্যু নেই।
কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে বান্দরবান সহ বিভিন্ন জেলা উপজেলার হাজারো উপাসক-উপাসিকা এবং সেবক-সেবিকা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকালে ভিক্ষু সংঘের পিন্ডচারণের পর সকলের হিতসুখ কামনায় অষ্টপরিস্কার দান সহ নানাবিধ দান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বিকালে কঠিন চীবর দান ধর্মানুষ্ঠানের পরে সন্ধ্যায় সকল প্রানীর মঙ্গল কামনা করে ফানুস বাতি (আকাশ প্রদীপ) উত্তোলন করা হয় বিহার প্রাঙ্গন থেকে।