মানিকছড়ির ঐতিহ্যবাহী সত্যবুদ্ধ মেলায় দর্শনার্থীদের ঢল
॥ মোঃ ইসমাইল হোসেন, মানিকছড়ি ॥
মানিকছড়ির রাজ জেতবন বৌদ্ধ বিহারে প্রতিস্থাপিত সত্যবুদ্ধ’র স্মরণে ৬৩তম ‘সত্যবুদ্ধ মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানিকছড়ি রাজ পরিবার প্রধান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মং রাজা মংপ্রুসাইন বাহাদুর ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান কুমার সুইচিংপ্রু’র পৃষ্টপোষকতায় ও মেলা আয়োজক কমিটি এ বছর মেলার ৬৩তম আসরকে ঘিরে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সোমবার (৭ নভেম্বর) সকাল থেকে মানিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সহশ্রাধিক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বি সমবেত হয় পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার মং সার্কেলের রাজবাড়ি মাঠে। এছাড়াও পার্শবর্তি উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা রাজ জেতবন বৌদ্ধ বিহার দর্শনে আসেন। সেই সাথে প্রায় শতাধিক বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট বসে ঐতিহ্যবাহী সত্যবুদ্ধ মেলাকে বাড়তি আনন্দ দিয়েছে। বুদ্ধধর্মাবলম্বি ছাড়াও মেলাকে কেন্দ্র করে নানা ধর্মের মানুষের আগমনে সম্প্রীতির মিলন মেলায় পরিপূর্ণ হয় মেলা প্রাঙ্গণ। তবে গত বছর করোনার কারণে মেলা জমজমাট না হলেও এবার পূর্ণতা পেয়েছে বলে মনে করছেন আয়োজকরা।
রাজ পরিবার সূত্রে জানান গেছে, ১৯৫৪ সালের দিকে তৎকালীন মং রাজা মংপ্রু সাইন বাহাদুর খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার চাইংগুলিপাড়ার এক প্রজা কর্তৃক কুড়িয়ে পাওয়া বুদ্ধমূর্তিটি প্রতিস্থাপন করেন মানিকছড়ি রাজবাড়ির রাজ জেতবন বৌদ্ধ বিহারে। তারপর থেকে প্রতিবছর কার্তিক মাসের পূর্ণিমায় বুদ্ধমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। যা পরবর্তিতে সত্য বুদ্ধমেলা নামে পরিচিতি লাভ করে।
মানিকছড়ি রাজ পরিবার প্রধান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মং রাজা মংপ্রুসাইন বাহাদুর ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান কুমার সুইচিংপ্রু জানান, ১৯৫৪ সালের পর থেকে প্রতিস্থাপিত সত্যবুদ্ধকে স্মরণে ঐতিহ্যবাহী মং রাজবাড়ির মাঠে প্রতিবছর কার্তিক মাসের পূর্ণিমায় এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে আসছে। মং রাজা মংপ্রুসাইন বাহাদুর থাকাকালীন সময়ে এ মেলা প্রায় সাপ্তাব্যাপী চলত। তবে পরিবেশ পরিস্থিতি ও নানা কারণে বর্তমানে এটি দিনব্যাপী আয়োজন করা হয়।
মেলা আয়োজন কমিটির সভাপতি চাইলাপ্রু কার্বারী জানিয়েছেন, ধর্মীয় ও জাতিয় পতাকা উত্তোলন মধ্যদিনে দিনব্যাপী মেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এছাড়াও পঞ্চশীল গ্রহণ, পিন্ডদান, অষ্টপরিস্কার দান, ধর্মদেশনা, সংঘদানসহ নানা ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা চলে। সেই সাথে বিকেলে হাজার বাতি প্রজ্জলনের মধ্যদিয়ে দিনব্যাপী মেলার সমাপ্তি ঘটে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে স্বেচ্ছাসেবীর পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন।
সিন্দুকছড়ি জোন কমান্ডার লে. কর্ণেল সৈয়দ পারভেজ মোস্তফা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রক্তিম চৌধুরী, মানিকছড়ি থানার ওসি মোঃ শাহানূর আলম, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও লক্ষীছড়ি উপজেলা আ.লীগের সভাপতি রেম্রাচাই চৌধুরীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা মেলা পরিদর্শন করেন।
মানিকছড়ি থানার ওসি মোঃ শাহানূর আলম জানিয়েছেন, মেলাকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো প্রকার আইনশৃঙ্খলার বিঘ্নিত না ঘটে সেজন্য বাড়তি পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। ফলে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই মেলা শেষ হয়েছে।