বরকল শাখা বন বিহারে দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত
॥ বরকল উপজেলা প্রতিনিধি ॥
রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলায় বরকল শাখা বন বিহার পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে এবং ধর্মপ্রাণ দায়ক-দায়িকাদের সহযোগিতায় বৌদ্ধ কর্তৃক প্রবর্তিত পূণ্যবতী বিশাখার চীবরদানের ঐতিহ্যর ধারাবাহিকতায় ১৯তম শুভ দানোত্তম কঠিন চীবর দান উপলক্ষে নানাবিধ দানযজ্ঞ আয়োজনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দু’দিনব্যাপী বরকল উপজেলায় বরকল শাখা বন বিহার লুদিবাজছড়া এলাকায় এ মহতী ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। উক্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বুদ্ধমূর্তি দান, কঠিন চীবরদান সংঘদান, অষ্টপরিস্কারদান,পিণ্ডদান, আকাশ প্রদীপ দান, পঞ্চশীল গ্রহণ ও দানোৎসর্গসহ নানান দানযজ্ঞের আয়োজনে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীর শতাধিক পূণ্যার্থী অংশগ্রহণ করেন।
লুদিবাজছড়া শাখা বন বিহার(লুদিবাজছড়া) অধ্যক্ষ প্রজ্ঞাহিত ভিক্ষু(স্থবির) এর সভাপতিত্বে আয়োজিত ধর্মীয় সভায় প্রধান ধর্মালোচক ছিলেন বামে অজ্জ্যাংছড়ি ভাবনা কুটির অধ্যক্ষ চির সুখ মহাস্থবির। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজ বন বিহার(আবাসিক)গিরিমানন্দ স্থবির ও কালোদায়ি স্থবির,আইমাছড়া শাখা বন বিহার অধ্যক্ষ জ্যোতিপাল স্থবির,মাইসছড়ি অপর্ণাচরণ বন বিহার মুক্ত প্রিয় ভিক্ষু (স্থবির), ডানে অজ্জ্যাংছড়ি বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ প্রজ্ঞা জ্যোতি স্থবির। এসময় উপাসক মাইকেল চাকমা ও উপাসিকা শিলা চাকমার সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ঝর্ণা খীসা ও বরকল মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাত বিন্দু চাকমা ।
তিনি বলেন,রাঙ্গামাটিতে অবস্থান করলেও বরকলের প্রতি তার টান রয়েছে। বিশেষ করে তিনি তার কাছের মানুষ(বড় ভাই) প্রতিময় চাকমা(শিক্ষক) এর কথা ফেলতে পারেন না। ভাতৃত্বের টানে সে বরকল শাখা বন বিহারে পূণ্যানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। এই মহতী পূণ্য অনুষ্ঠানে এসে উপস্থিত থাকতে পেরে তিনি অত্যন্ত খুশি ও ধন্য।
তিনি আরও বলেন,সমবেত পূণ্যার্থী মা-বোনদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে ২৪ঘন্টার ভেতর সুতা কেটে বেইন বুননের মধ্যে দিয়ে যে, কঠিন চীবর দানযজ্ঞ সম্পন্ন হয়েছে তা সাধুবাদযোগ্য।তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এসব ধর্মীয় সংস্কৃতি চর্চা করা উচিত।কারণ দিন দিন সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রধান ধর্মালোচক চিরসুখ মহাস্থবির বলেন,বৌদ্ধ ধর্মমতে বিশ্বাসে ফল হয়।জন্ম মাত্রই দুঃখ,জ্বরা,ব্যাধি রয়েছে। সেজন্য দান,শীল,ভাবনাই রত থাকা বাঞ্ছনীয়।আর মানবজন্মে গরীবকূলে জন্ম নিলেই দুঃখ কষ্ট থাকে।তাই ধনী হতে হলে সুস্থ পরিকল্পনা,সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও প্রচেষ্টা থাকা উচিৎ। সেই সাথে তিনি সমবেত পূণ্যার্থী কর্তৃক আয়োজিত কঠিন চীবর দানের পূণ্য অনুমোদন ও আশীর্বাদ প্রদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন।
এসময় বরকল শাখা বন বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বরকল মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষক প্রতিময় চাকমা,সাবেক শিক্ষক সুপ্রিয় খীসা সহ বৌদ্ধ ধর্মালম্বী অন্যান্য পূর্ণার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে,বিহার পরিচালনা কমিটি ও দায়ক-দায়িকার পক্ষ থেকে কঠিন চীবর দানানুষ্ঠানে চিরসুখ ভিক্ষুকে মহাস্থবির বরণ লক্ষ্যে সম্মাননা স্মারক প্রদান ও ভিক্ষুসংঘকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়।একইসাথে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ঝর্ণা খীসাকেও সম্মান স্বারক প্রদান করা হয়।
মহালছড়ির মিলনপুর বন বিহারে বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে কঠিন চীবর দান সম্পন্ন
॥ মিল্টন চাকমা, মহালছড়ি ॥
খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার মিলনপুর বন বিহারে বুদ্ধের প্রধান উপাসিকা মিগারমাতা বিশাখার প্রবর্তিত নিয়মে কঠিন চিবর দানোৎসব সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা থেকে বেইনবুনন (কোমর তাঁত) শুরু হয়। বুনন শেষে শুক্রবার (২১ অক্টোবর) মূল অনুষ্ঠানে আগত ভিক্ষুসংঘকে এ চিবর দান করা হয়। সকালের পর্বে সংঘ প্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মিলনপুর বন বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রদ্ধাতিষ্য মহাস্থবির। এছাড়াও বিভিন্ন বিহার থেকে আগত শতাধিক ভিক্ষু উপস্থিত ছিলেন। এ সময় দায়ক দায়িকারা পঞ্চশীল গ্রহন ও উপস্থিত ভিক্ষুসংঘ ধর্মীয় দেশনা প্রদান করেন।
প্রধান উপাসক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মহালছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কান্তি চাকমা। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ভিক্ষুসংঘকে বুননকৃত চিবরসহ বুদ্ধ মূর্তি দান, সংঘদান, অষ্ট পরিষ্কার দান, আকাশ বাতি দান, হাজার বাতি দানসহ নানাবিধ দান করা হয়। এ সময় সকল জীবের হিতার্থে উপাসক উপাসিকাগণের সমবেত প্রার্থনা ও ধর্মীয় দেশনা শ্রবণ করেন।
উল্লেখ্য, বুদ্ধের প্রধান উপাসিকা কর্তৃক প্রবর্তিত নিয়মে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে চরকায় সুতা কেটে, সুতা রং করে আগুনে শুকিয়ে সেই সুতায় কোমর তাঁতে কাপড় বুনে চিবর তৈরী করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয়। তাই এ অনুষ্ঠানকে বৌদ্ধরা কঠিন চিবর দান হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন।
নানিয়ারচরে বিশ^ খাদ্য দিবসে র্যালি ও আলোচনা সভা
॥ তুফান চাকমা, নানিয়ারচর ॥
“কাউকে পশ্চাতে রেখে নয়। ভালো উৎপাদনে উত্তম পুষ্টি, সুরক্ষিত পরিবেশ এবং উন্নত জীবন” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২২ পালন করা হয়েছে।
গত সোমবার দিবসটি উপলক্ষে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের আয়োজনে উপজেলা মাঠ প্রাঙ্গণে র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। র্যালি শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে নিজ কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরজামাল হাওলাদার, উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) কৃষি কর্মকর্তা টিপু সুলতান সহ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা।
এসময় বক্তারা বলেন, সরকারের নিদের্শনা অনুযায়ী এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সেই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রচেষ্টায় দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন বাঁড়াতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলে বিশেষ করে ধান, আম, কলা, হলুদ, লিচু, আনারস, পেঁয়াড়া, আদা, আলু প্রভৃতি ফসল ও ফল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। উৎপাদিত ফসল ভালো করতে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের সাথে পরামর্শ করে সার ও মেডিসিন প্রয়োগ করতে বলেন। এতে ফসল ভালো হবে এবং আগামীতে বিশ্বে যে খাদ্য ঘাতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তার থেকে উত্তোরণের সুবিধা হবে।