নানিয়ারচরে রত্নাংকুর বন বিহারে ২৫’তম দানোৎসব কঠিন চীবর দান সম্পন্ন
॥ তুফান চাকমা, নানিয়ারচর ॥
ধর্মীয় মর্যাদা, ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসব উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে রাঙামাটির নানিয়ারচরে রত্নাংকুর বন বিহারে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদরের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দানোত্তম কঠিন চীবর দান উদযাপিত হয়েছে।
দু’দিন ব্যাপী (বৃহস্পতিবার-শুক্রবার) ২৫’তম দানোত্তম কঠিন চীবর দানে বেইন বুনন সহ, পতাকা উত্তোলন, বুদ্ধ মূর্তি দান, সঙ্ঘ দান, অষ্টপরিষ্কার দান, হাজার প্রদীপ দান, আকাশ প্রদীপ পিণ্ডু দান, বুদ্ধ পূজা দান সহ নানাবিধ দান সহ পঞ্চশীল প্রার্থনা করা হয়।
এছাড়াও বিহার অধ্যক্ষ শ্রীমৎ বিশুদ্ধানন্দ মহাস্থবির ভিক্ষুর শিষ্য সঙ্ঘের মধ্যে ৩জন মহাস্থবির ও ৬জন ভিক্ষু স্থবিরে উর্ত্তীণ হওয়ায় বিহার পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
উষাকিরণ চাকমা ও অন্তরা চাকমা’র সঞ্চালনায় আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সঙ্ঘ প্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ফুরমোন আন্তর্জাতিক ভাবনা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ ভৃগু মহাস্থবির, রত্নাংকুর বন বিহার অধ্যক্ষ ও গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা (ভি.আই.পি) চট্রগ্রাম বিভাগ, শ্রীমৎ বিশুদ্ধানন্দ মহাস্থবির, বোধিপুর বন বিহার অধ্যক্ষ জিনবোধী মহাস্থবির, শ্রীমৎ জ্ঞান প্রিয় মহাস্থবির, সত্যপ্রেম মহাস্থবির সহ বিভিন্ন বিহার থেকে আমন্ত্রিত ভিক্ষু সঙ্ঘ মণ্ডলী ।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা।
আরও উপস্থিত ছিলেন, জেলা পরিষদ সদস্য ও নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ইলিপন চাকমা, পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তুষিত চাকমা, ২নং নানিয়ারচর সদর ইউপি চেয়ারম্যান বাপ্পি চাকমা, নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ সভাপতি সুজিত তালুকদার (হ্যাডম্যান), উপজেলা আওয়ামীলীগ যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক, অ্যাডঃ দর্শন চাকমা ঝন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক জনতা শেখর চাকমা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি দীপু তালুকদার, রত্নাংকুর বন বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি কমল কান্তি দেওয়ান ও সাধারণ সম্পাদক প্রভাত কুসুম চাকমা, রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে নানিয়ারচর উপজেলাবাসীর সার্বজনীন মহাসংঘদান উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রগতি চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত চাকমা প্রমুখ।
এ উপলক্ষ্যে দূর-দূরান্ত থেকে পুণ্য সঞ্চয়ী করার জন্য হাজার হাজার পুণ্যার্থীরা বিহারে সমাগম হয়েছে। পুণ্যার্থীদের সমাগমে বিহার প্রাঙ্গণ উৎসব মূখর হয়ে উঠে৷ এ সময় ধর্মীয় গুরুরা পুণ্যার্থীদের উদ্দেশে বৌদ্ধ বিহারে ধর্ম দেশনা দেন। দুপুরে কল্পতরু ও চীবর (রঙ বস্ত্র) উৎসব আমেজ এর মধ্যে বিহারের চারপাশে ও উপজেলা প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করা হয়। এসময় দূর দুরান্ত থেকে আসা পূর্ণ্যার্থীরা সবাই মিলে বুদ্ধের জয়ধ্বনি দিতে থাকে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নিখিল কুমার চাকমা বলেন, বুদ্ধের বানী মনে ধারণ করে মৈত্রীময় ভাবনা নিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এলাকার সুখ শান্তির প্রচেষ্টায় নিজেকে আবদ্ধ রেখে মৈত্রীময় ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে তবেই আমাদের মাঝে শান্তি সমৃদ্ধি ও কল্যাণ বয়ে আসবে। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার লক্ষে আমাকে যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে তার প্রতিপালন করতে আমি বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনার জন্য আবারো যাহাতে সুযোগ পায় সে জন্য তিনি সকলের কাছে দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করেন।
ইলিপন চাকমা বক্তব্য প্রদানে বলেন, রত্নাংকুর বন বিহারে ২৫’তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান করার সুযোগ হয়েছে এক মাত্র শ্রাবক বুদ্ধ বনভান্তের ধর্মের অনুপ্রেরণার কারনে। তিনি ধর্ম শিক্ষা প্রদান করেছেন বিধায় আজকে শ্রদ্ধেয় ভিক্ষু সঙ্ঘরা বনভান্তের নীতি আদর্শ গুলো মেনে চলেছেন। আমরা সকলেই ভাগ্যবান বিশুদ্ধানন্দ ভান্তে কে পেয়েছি। তিনি বনভান্তের ধর্ম দেশনা, নীতি আদর্শ গুলো গ্রাম অঞ্চলে এবং বিভিন্ন এলাকায় ধর্ম তুলে ধরছেন।