কিনাপতি জনবল বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত
॥ তুফান চাকমা, নানিয়ারচর ॥
রাঙ্গামাটি নানিয়ারচরে কিনাপতি জনবল বৌদ্ধ বিহারে মহা উপাসিকা বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২২ অক্টোবর) রুপায়ন চাকমা’র সঞ্চালনায় দিনব্যাপী আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পতাকা উত্তোলন, বুদ্ধ মূর্তি দান, কঠিন চীবর দান, সঙ্ঘ দান, অষ্টপরিষ্কার দান, হাজার প্রদীপ দান, পিণ্ডু দান, কল্পতরু দান, বুদ্ধ পূজা সহ নানাবিধ দানের আয়োজন করা হয়।
এসময় পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন মংখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সুমতি লাল চাকমা এবং প্রদান করেন ফুরমোন আন্তর্জাতিক বন ভাবনা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ ভৃগু মহাস্থবির।
আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সঙ্ঘ প্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ফুরমোন আন্তর্জাতিক বন ভাবনা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ ভৃগু মহাস্থবির, রত্নাংকুর বন বিহারে অধ্যক্ষ শ্রীমৎ বিশুদ্ধানন্দ মহাস্থবির, শ্রীমৎ ধর্ম তিলোক মহাস্থবির, বিমুক্তি জ্যোতি স্থবির, কিনাপতি জনবল বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ বুদ্ধ আলো ভিক্ষু সহ বিভিন্ন বিহার থেকে আমন্ত্রিত ভিক্ষুরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ইলিপন চাকমা, উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান মিসেস রিপা চাকমা, নানিয়ারচর জোন কমান্ডার প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন মোঃ রাজিন আকন(১০ বীর), ২ নং নানিয়ারচর সদর ইউপি চেয়ারম্যান বাপ্পি চাকমা, বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রীতি আলো চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক দীপ্তময় চাকমা সহ কঠিন চীবর দান উদযাপন কমিটির আহবায়ক দেবজ্যোতি চাকমা প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্যে দেবজ্যোতি চাকমা বলেন, কেনাপতি জনবল বৌদ্ধ বিহার ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু সেই ঐতিহ্যবাহী বিহার এখনো জরাশীর্ণ অবস্থায় রয়ে গেছে এবং বিহারের দেয়াল ধ্বসে পড়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বিহারটি সদরের আওতাধীন হওয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধায় বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বধর্মপ্রাণ দায়ক-দায়ীকারা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকেন। বুদ্ধ ধর্ম শাসন রক্ষার্থে এখানে নিতান্ত একটা বৌদ্ধ মন্দির প্রয়োজন মনে করে তিনি পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা’র কাছে সুদৃষ্টি কামনা করেন।
বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রীতি আলো চাকমা বলেন, ৫’বারের মতো দানোত্তম কঠিন চীবর দান সফল করার লক্ষ্যে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে তাদের আগামী ভবিষ্যৎ জীবন যেন সুন্দর ও সাফল্যময় হয় পূজনীয় ভিক্ষু সঙ্ঘের কাছে প্রার্থনা করেন। এছাড়াও যারা অনুষ্ঠানে কায়িক-বাসনিক ভাবে সেবা দিয়ে সহযোগিতা করেছে তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। নানিয়ারচর বাজারে শান্তি সম্প্রীতি বজায় রেখে সকলেই যেন যার যার ধর্ম সুস্থ করে পালন করতে পারে সে জন্য ভিক্ষু সঙ্ঘের কাছে আশির্বাদ কামনা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নিখিল কুমার চাকমা বলেন, দানের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দান হলো কঠিন চীবর দান। এই দান করতেও পূর্ব জন্মের পারমি থাকতে হয়, যে কেউ চাইলে এই পূণ্যর অংশীদার হতে পারে না। বুদ্ধ ধর্ম প্রচারে বনভান্তের যে দূরদর্শিতা চিন্তায় ছিল তা তুলে ধরেন। এসময় তিনি কিনাপতি জনবল বৌদ্ধ বিহারে চলতি অর্থবছরে ৩৫’লক্ষ টাকা ব্যায়ে বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ হবে বলে আশ্বাস দেন।
দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানে দূর-দূরান্ত থেকে পুণ্য সঞ্চয়ী করার জন্য হাজারো পুণ্যার্থীদের সমাগমে বিহার প্রাঙ্গণ উৎসব মূখর হয়ে উঠে৷ এ সময় ধর্মীয় গুরুরা পুণ্যার্থীদের উদ্দেশে করনীয় মৈত্রী সূত্র পাঠ সহ ভগবান বুদ্ধের অমৃতবাণী স্বধর্ম দেশনা দেন।