॥ মিলটন বড়ুয়া ॥
‘সুখ’ ভাষা ও মানব জগতে দুটি অক্ষরের সংযোজনে মিলিত উচ্চারণ। এই সুখ’টিকে পাওয়ার জন্য মানব সমাজের যেন কষ্টের, প্রচেষ্টার ও কর্মের শেষ নেই। পৃথিবীময় মানুষ তাঁর সুখের সন্ধানে যে কোন কষ্টের মধ্যেও হুমড়ী খেয়ে পড়ছেন। তারপরও যেন সুখ তাঁর কাছে আসেনা, আসতেও চায় না, আবার আসলেও যেন ধরাও দিতে চায় না। আমাদের শিখিত আক্ষরিক স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ শব্দের মিশ্রিত এই সু+খ কি আপনা আপনি আসবে। অর্থ-বিত্ত-সম্পদ-খ্যাতী-সুখ সবই আছে। তারপরও কোথায় জানি এ সুখটি বাঁধ সেধেঁছে। অথচ সুখের জন্য মানব সমাজ পৃথিবীব্যাপী চষে বেড়াচ্ছেন। যেহেতু সেটি সুখ, সেটিতো বরফের মতই হতে হবে। কিন্তু যাদের হাতে বরফের মতই এই সুখের টুকরোটি মুষ্টিবদ্ধ হয়েছে সেটি কি স্থায়ী আকছে? তাও নেই কেননা সেটিতো গলে পানিতে পরিণত হয়ে কাঁদায় পড়ে গেছে। সত্যি সুখতো ধরা পড়েনি সেতো অধরাই থেকেছে, থাকছে। কিন্তু শত কষ্টের মধ্যে সুখটিওতো আমাদের চাই, সে অর্থ-বিত্ত-সম্পদের মুল্যে হলেও। কিন্তু প্রকৃত সুখ পেতে হলে অধর্ম, হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ-লালসাকে ত্যাগ করে ধর্মের সুখ, মানব কল্যাণের সুখ, নির্বাণ পথের সুখী হলে তাহাতেই আসবে প্রকৃত ‘সুখ’ এবং নির্বাণ ‘সুখ’।
মাহামানব বুদ্ধ তাঁর বিশালাকার রাজকীয় ধন-ভান্ডার-বিত্ত-সম্পদ-খ্যাতি-সুখ সবই ত্যাগ করেছেন সত্যি সুখের আশায়। লোক সমাজের হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ, লালসা, আরো চাই, আরো চাই এই চাওয়ার সুখকেও দুঃখের আগুনে নিক্ষেপ করে ছাই করে দিয়ে সুখের সন্ধ্যানে তাঁর রাজকীয় সুখ ত্যাগ করেছেন। দুঃখ মুক্তি আর সুখের জন্য মানবকূলে এমন ভাবে এসেছেন সেখানে ঋদ্ধজ্ঞান ধর্মের শক্তি রয়েছে অফুরন্ত। তাঁর এই জ্ঞানঋদ্ধি শক্তির তেজষক্রীয়তায় সুখের অন্তরালে মহা মহা যে দুঃখগুলি অক্ষর থেকে শব্দে পরিণত, উচ্চারিত হচ্ছে সে সবকে স্থায়ী ছাই করে দিতেই তিনি এসেছেন। বুদ্ধ বনের গাছ তলায় বসেই প্রকৃত সুখের জন্য হাজার হাজার বছর আগেই বিজ্ঞানকে জয় করেছেন অথচ আজকের বিজ্ঞানে ল্যাবরেটরী আর এসির কক্ষে বসে বিজ্ঞানীর উদ্ভাবিত তথ্য উপাত্তও মানব সমাজের স্থায়ী সুখ প্রতিষ্ঠিত করতে পারছেন না। কেননা এখানে যে সুখের কথা বলা হচ্ছে সে সুখতো অস্থায়ী, অর্থাৎ এই সুখ হলো পানির জমাট বাঁধা ক্ষনিকের এক টুঁকরো বরফ যেটি মুষ্টিবদ্ধ হাতে থাকলেও গলে পড়ে মাটিতে। তাই বুদ্ধ বলছেন এমন সুখের দরকার যে সুখ হলো ‘নির্বাণ সুখ’ এই সুখের বিপরীতে কোন হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ, লালসা, আরো চাই, আরো চাই এর তৃষ্ণা থাকবে না।
মানব সমাজের নির্বাণ সুখের জন্য বুদ্ধ তাঁর বৌদ্ধ ভিক্ষু সমাজের সারথিদের নিয়ে নিরন্তর ধর্মসুধা বিতরণ করে গেছেন, হাজার হাজার বছর ভিক্ষু সংঘ ধর্মপ্রচার, অহিংসার বাণী, সুখের ঠিকানা নিশ্চিতে অনেক অনেক বৌদ্ধ ভিক্ষু ধ্যান সাধনায় নিমগ্ন থেকে ধর্মজ্ঞান বিতরণ করেই চলেছেন। আজকের বিশ্বের অনেকেই ধ্যান সাধনা এবং ভিক্ষুত্ব জীবন পালনকালীন অরহত্ব লাভ করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে ত্যাগী ভিক্ষুর মধ্যে সমাজের কল্যাণকামী হলো সাধনানন্দ মহাস্থবীর বনভান্তে। যিনি এশিয়া মহাদেশের কাছেও অন্যতম একজন সাধক বৌদ্ধ ভিক্ষু। দেব মানবপূজ্য এই মহাপুরুষের সানিধ্যে থেকে ধর্মসুধা শ্রবণ করে ভিক্ষু সমাজ সর্বোপরী মানব সমাজ যেটুকু কল্যাণের পথে এগিয়েছেন তাতে আজকের সমাজে চমৎকার এক নিদর্শন। পূজনীয় বন ভান্তে নিতান্তই একজন খেটে খাওয়া পরিবারেরই সন্তান, তিনিও দেখেছেন দুঃখ মুক্তির একমাত্র পথ হলো নির্বাণ পথের সুখ ও নির্বাণ। তাই বৌদ্ধ সমাজকে নির্বাণ সুখের পথে এগিয়ে নিতে তাঁর নিরন্তর প্রচেষ্টা ও ত্যাগে মানব সমাজে তাঁর ভুমিকা অন্তহীন। তাঁর অসংখ্য অনুসারীর অনেকেই এখন বৌদ্ধ সমাজের তথা মানুষের দুঃখ মুক্তির জন্য কল্যাণকামী হয়ে দন্ডায়মান বটবৃক্ষ। এই বটবৃক্ষদের ছায়াতলে দুঃখ মুক্তির জন্য, সুখের জন্য সকলের কল্যাণের জন্য বুদ্ধের ধর্ম প্রচার ও পালনে সমবেত হচ্ছেন। জন্ম-জন্মান্তরে নির্বাণ পথের সুখ থেকে নির্বাণ লাভও করবে এ প্রত্যাশায়।
জন্মজন্মান্তরে ধর্মের মহাগুনের পারমী নিয়ে মানব সমাজে সেইসব কল্যাণকামীর জন্ম হয়েছে, হচ্ছে এবং হবেও। লোক সমাজ কি জানতে পারে তাঁদের স্থান, কাল, পাত্র যেন কোথায়? পূন্যের পারমী পূরণে তাঁরাও লোক সমাজের কোন না কোন স্থান, কাল, পাত্রে আবির্ভুত হচ্ছেন। দুঃখ মুক্তি ও প্রকৃত সুখের জন্য মানব কল্যাণকামীরা ধনী গরীব ভেদাভেদ না রেখেই আভির্ভুত হচ্ছেন। দেবমানব পূজ্য বনভান্তে খেটে খাওয়া পরিবারের মাঝে আভির্ভুত হয়েছেন। সেখানেও সুখ ছিল, আসবে, থাকবে অথচ সে সবকে ছেড়ে নির্বাণ সুখের পথ দেখানোর জন্য বটবৃক্ষে পরিণত হলেন। সুখতো শুধুমাত্র মায়া আর দুঃখের আচ্ছাদনে মোড়ানো একটি দেহ। তাই এই কল্যাণকামীরা যেখানেই জন্ম হচ্ছেন অবস্থান নিচ্ছেন সেখানে ধনী গরীবের ব্যবধানেও নয়। বৌদ্ধ সমাজ কি জানতেন ড. এফ দীপংকর মহাথের ধূতাঙ্গ ভান্তে এঁর জন্ম কোন পরিবারে বা তাঁর স্থান-অবস্থান কোথায়। অথচ তাঁর জন্ম চট্টগ্রামের ফটিকছড়িস্থ ফরাঙ্গীখিল গ্রামে। লোক সমাজের দৃষ্টিতে তিনি নিতান্তই খেটে খাওয়া পিতৃদেব নান্টু বড়ুয়া ও মাতৃদেবী পুঁটি রাণী বড়ুয়া’র ঘরেই জন্ম নিয়েছেন। সত্যি যে তিনি গরীবের ঘরে নয় এই কল্যাণমিত্রের জন্ম কল্যাণকামীদের ঘরেই।
দেব মানব পূজ্য, অরণ্য বিহারী, শ্মশানচারী, ত্রি-চীবরধারী, পাংশুকুলীক ধূতাঙ্গ সাধক ড. এফ দীপংকর মহাথের এঁর শিশু ও শৈশব কেটেছে রাঙ্গামাটির ভেদভেদী গ্রামে। এ কল্যাণমিত্রের পারিবারিক নামও ছিল দীপংকর বড়ুয়া। আমার খেটে খাওয়া পিতৃদেব প্রয়াত নির্মল বড়ুয়া (বৌদ্ধ কীর্তন গায়ক) এঁর সাথে কাজের ছলে দেখা হয় ধুতাঙ্গ ভান্তের পিতৃদেব নান্টু বড়ুয়া’র সাথে। এই পিতৃদেবও ছিলেন যথেষ্ট বিনয়ী, পরোউপকারী, মানুষের কল্যাণকামী। আমার পিতৃদেব পূজনীয় ভান্তের পিতৃদেব নান্টু বড়ুয়াকে স্বপরিবারে ভেদভেদী চলে আশার পরামর্শ দেন তাই যতদুর মনে পড়ছে ১৯৮৩-৮৪ইং সনে তিনি স্থায়ী হাজির হলেন ভেদভেদী গ্রামে। পিতৃদেবদের যেন দুই ভাইয়ের একীভুত হওয়া। সাত ভাই বোনের মধ্যে তিনি (ধুতাঙ্গ ভান্তে) ছিলেন তৃতীয়। আমি হলাম দীপংকর বড়ুয়া এঁর খেলার সাথী। তিনি সদা হাস্যোউজ্জল প্রকৃতিরই ছিলেন। উচ্চ কন্ঠে কথাও বলতেন না। স্কুলের অবসরে খেলতাম, খেতামও একসাথে। পিতৃদেবরা ছিলেন অর্থনৈতিকভাবে নিতান্তই দূর্বল। মাতৃদেবী পুঁটি রাণী বড়ুয়া সকালে থালা পুরে ভাত দিতেন হয়তো তরকারী, নয়তো মরিচ পোড়া, আর বলতেন ভাত খেয়ে খেলতে যাও দুপুর ১টার আগে ঘরে আসবে না। মাতৃদেবীর যথা আজ্ঞা তথা কাজ। মরিচ পোড়া দিয়ে ভাত খেয়ে হাস্যেউজ্জল খেলতাম আম, কাঠাল, লিচু বৃক্ষের ছায়াতলে সেভাবেই শৈশব দিনগুলো ছিল সানন্দের।
প্রাথমিক শেষে ও উচ্চ বিদ্যায়ের ৮ম শ্রেণী উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯১এর সম্ভবত এপ্রিল মাসের দিকে চলে যান ফটিকছড়ির গ্রামের বাড়ীতে। হঠাৎ একদিন সকাল বেলা মেজভাই উপাসক কাঞ্চন বড়ুয়া রাঙ্গামাটিতে আমার বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হাজির, বাড়ীর ভালো মন্দ কাজে তিনি আমাকে অবশ্যই জানাতেন। প্রশ্ন করতেই বললেন তোর কাছেই এসেছি। বলা হলো তিনি (ধুতাঙ্গ ভান্তে) ১৯৯১ সালের ১৭ জুন প্রবজ্যা গ্রহন করেছেন, কিন্তু সেখানের স্কুলে পড়ালেখা করা খুবই কষ্ট দায়ক যে, অন্যান্য ছেলেদ্বারা সমস্যায় পড়ছেন, চীবর ধরে টানা টানি করছে ইত্যাদি, তাতে তিনি অস্বস্তীবোধ করছেন। তাঁকে পাহাড়তলীস্থ মাহমুনি গ্রামের কোন মন্দিরে নিয়ে যেতে পারলে ভালোই হবে। অতঃপর সপ্তাহখানে পরে উপাসক কাঞ্চন বড়ুয়াকে সাথে নিয়ে দুপুরেই হাজির হলাম মামারবাড়ী (বড়ঠাকুরের বাড়ী) মহামুনি পাহাড়তলী গ্রামে। যতদুর মনে পড়ছে আমাদের সেজ মামা শিবু প্রসাদ বড়ুয়া তখন ছিলেন মাহমুনি সংঘরাজ বিহার পরিচালনা কমিটির সম্পাদক। মামাকে বলার পর সন্ধ্যায় সংঘরাজ বিহারের অধ্যক্ষ ধর্মপ্রিয় মহাথেরকে সব বিষয়ে বললে ধর্মপ্রিয় ভান্তে বলছিলেন ঠাকুর বাড়ীর সন্তান এসেছে তাঁদেরতো মঙ্গলই হবে। অর্থাৎ তিনি রাজি হয়ে শ্রামণ (আজকের ধুতাঙ্গ ভান্তে)কে নিয়ে যেতে আদেশ করলে যথা সময়ে ভান্তের নিকট পৌঁছে দেয়া হলো। অতঃপর ১৯৯২ সালে এ্যাংলো পালি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং ১৯৯৪ সালে ১ম বিভাগ নিয়ে এসএসসি পাশ করেন। খুব স্বল্প সময়েই পড়ালেখাসহ ধর্মদেশনায় পাহাড়তলী গ্রামে সুপরচিতি লাভ করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি ইমাম গাজ্জালী ডিগ্রী কলেজ থেকে ২য় বিভাগে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হন। পরে উচ্চ শিক্ষা লাভে ১৯৯৭ সালে চলে যান ভারতে।
ভারতে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালি বিভাগে বি.এ (অনার্স) এ ভর্তি হন। সেখানেই পালিতে এমএ প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করে স্বর্ণ পদক পান। ২০০৩ সালে পিএইচ.ডি অর্জনের জন্য ভারতের ‘ওহফরধহ ঈড়ঁনপরষ ভড়ৎ ঈঁষঃঁৎধষ জবষধঃরড়হ (ওঈঈজ)’ এ আবেদন করলে তা মঞ্জুর হয় এবং ‘ঝড়পরড়-ৎবষরমরড়ঁং ঈড়হফরঃরড়হ ড়ভ ধহপরবহঃ রহফরধ ধং ফবঢ়রপঃবফ রহ ঃযব রহংপৎরঢ়ঃরড়হং ড়ভ অংড়শধ’ এ টপিক নিয়ে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পি.এইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন করেই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু তিনি দেখছেন এখানে প্রতারণা, প্রবঞ্চনা ও মিথ্যার আশ্রয়। অতঃপর সব কিছুকে তুচ্ছ করে ২০১২ সালের শেষের দিকে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়িস্থ ধুপপানিছড়ার গহিন জঙ্গলে সম্পূর্ণ একাকী সাধন জগতে চলে যান। সেখানের বৌদ্ধ ভিক্ষু অজিতানন্দ মহাথের (ধ্যানী ভান্তে) এঁর আশ্রয়ে ধুতাঙ্গ ভান্তে ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল সাড়ে সাতটি বছর বৃক্ষতল ও খোলা আকাশের নীচে, শ্মশানে প্রচন্ড শীত-বর্ষা সহ সকল প্রতিকূলকে উপেক্ষা করেই ১টি অন্তর্বাস ২টি গায়ের এই তিন কাপড় নিয়ে সাধন জগত পালন করেন। তাঁর সাধন জীবনের গহিন অরন্যে কখনো এক (১) সপ্তাহে, কখনো এক (১) পক্ষে, কখনো এক (১) মাস আবার কখনো তিন (৩) মাসেও পিন্ডচরণে এসে একবার ভোজন (আহার) করেছিলেন। আরো কঠিন ব্রত হলো তিনি কখনো এক (১) দিন, কখনো সাত (৭) দিন, কখনো দশ (১০) দিন, কখনো পনের (১৫) দিন, কখনো এক (১) মাস আবার কখনো টানা তিন (৩) মাস না ঘুমিয়েই সাধন জগত পার করেছেন। গৃহজীবনের কঠিন আবরণে মোড়ানো দুঃখকে তিনি চিহ্নত করেছিলেন তাই এটি চিরন্তন সত্য যে সকল প্রাণীর দুঃখমুক্তির জন্য তিনি বৃক্ষতল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পূঃন বৃক্ষতলেই স্থান নিয়েছেন।
এ কঠিন জগত পার করলে প্রথমেই বিলাইছড়ির বৌদ্ধ (তঞ্চঙ্গ্যা) জনগোষ্ঠি ধূতাঙ্গ ভান্তেকে সেবা দিয়ে আসছেন। তারমধ্যে শুক্রসেন, ডালমনি, বিদ্যাসাগর, সোনা মোহন, রূপা মোহন ও গৌতম তঞ্চঙ্গ্যা পরে সুদর্শন, রিগান ও উত্তম বড়ুয়া সহ নাম না জানা অনেকেই পুজনীয় ভান্তের সেবায় যুক্ত হন। বিলাইছড়ির ধুপশীল, ফারুয়া এবং জুরাইছড়ির বৌদ্ধ আদিবাসী জনগোষ্ঠিরা দেব মানব পূজ্য, অরণ্য বিহারী, শ্মশানচারী, ত্রি-চীবরধারী, পাংশুকুলীক ধূতাঙ্গ সাধক ড. এফ দীপংকর মহাথের এঁর সানিধ্য পেয়ে একাট্টা বলছেন অভাব, রোগব্যাধী সহ দুঃখমুক্তির জন্য সকল প্রাণীর কল্যাণমিত্রকে যেন তাঁদের হাতের নাগালেই পেয়ে বসলেন। তাদের মাঙ্গলিক সবকিছুতেই যেন উর্বর কোনটিই যেন শেষ হয়েও হয় না শেষ। তাঁরা ধুতাঙ্গ ভান্তেকে ধর্মের, মনের এবং চোখের আড়াল হতে দিতেও নারাজ। ধর্ম, ধুতাঙ্গ ভান্তে এবং নিজেদের রক্ষায় সকল প্রতিকূলকে উপেক্ষা করেই ধর্ম পালন, দুঃখমুক্তি ও নির্বাণ পথের সুখ কামনায় নিত্য কাজের মধ্যেও তারা ধুতাঙ্গ ভান্তের সেবা, ধর্মযজ্ঞ পালন করেই চলেছেন। অথচ সাধন জীবন শেষে ধুতাঙ্গ ভান্তেকে আদিবাসী বিশেষ করে তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্টিই লালন পালন করেছেন সেখানে বড়ুয়া জনগোষ্টির ক’জনই বা গিয়েছেন। কিন্ত সেখানে কিছু অধার্মিক, মিথ্যাচারীর অত্যাচার শুরু হয়ে যায়। ধুতাঙ্গভান্তেকে ভারতের গুপ্তচরও বলা হয়েছে, তিনি বাঙ্গালি বৌদ্ধ (বড়ুয়া) জনগোষ্ঠির সন্তান তাঁকে কেন এখানে জায়গা দেওয়া হচ্ছে এমন অনেক অনেক মিথ্যাচার করা হয়েছে। ধুতাঙ্গ ভান্তে বুদ্ধের ধর্ম এবং ধর্ম লালনপালনকারীদের রক্ষার জন্য মৃত্যুকেও আলিঙ্গন করতে প্রস্তত হয়ে দাঁড়ালেন, ন্যুয়ে যাননি। তাই অধার্মিক, অপরাজনীতি এবং মিথ্যাচারীরা ধর্মপালনকারীদের উপর চরম অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ণ, এমন কি প্রাণ নাশও করেছে। এভাবেই বৌদ্ধ আদিবাসী জনগোষ্টির উপর টানা অত্যাচার চালিছে, চালাচ্ছেও। তারপরও ঐসব অসহায় ধার্মিক মানুষগুলো হাল ছেড়ে দিতে রাজি নয়। কেননা ধুতাঙ্গ ভান্তে সর্বজীবের কল্যাণেই ধর্মসুধা বিতরণ, কল্যাণ ও নির্বাণের পথ দেখিয়ে যাচ্ছেন। সেখানের ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ জনগোষ্ঠির অনেকেই বলছেন পার্বত্য চট্টগ্রামে গেরুয়াবসনধারী অনেকেই ধর্মের নামে যেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে। তাঁদের সাথে যোগ করা হয়েছে অধার্মিক, অপরজনীতিক, মিথ্যাচারীরা। ঐ অধার্মিক, মিথ্যাচারীরা ধুতাঙ্গ ভান্তে ড. এফ দীপংকর মহাথের সহ ভিক্ষু সংঘ এঁর বিপরীতে শান্তিবাহিনীর নাম ব্যবহার করে অধর্মকান্ড যোগ করেছে। কিন্তু অধার্মিক, অপরাজীনীতিক, মিথ্যাচারী যারা তাদের কি জানা আছে ১৯৯৭ সালে সরকারের সাথে জনসংহতি সমিতির যে চুক্তি হয়েছে তারপরেও কি পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘শান্তিবাহিনী’ আছে? এখানে রাষ্ট্রের ভাষ্য হলো; চুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামে আর শান্তিবাহিনী নেই। এর পরও যাদের হাতে অস্ত্র থাকবে তাদেরকে অবৈধ অস্ত্রধারী অথবা অপকর্মকারী হিসেবেই চিহ্নিত করা হবে। সুতরাং ঐ অধার্মিক, অপরাজীনীতিক, মিথ্যাচারীরা তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে ধুতাঙ্গ ভান্তে ড. এফ দীপংকর মহাথের, ভিক্ষু সংঘ সহ আদিবাসী বৌদ্ধ জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে চুক্তির স্বাক্ষরদাতা প্রতিষ্ঠান জনসংহতি সমিতিকে স্থানীয় প্রশাসন, সরকারের নিকট প্রশ্নবিদ্ধ সহ সমিতির বিরুদ্ধে অসংখ্য প্রতিপক্ষ দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, বদনাম রটিয়েছে। সেই সাথে মুখোমুখি করে দিয়েছে ধুতাঙ্গ ভান্তে, ভিক্ষু সংঘ এবং বিলাইছড়ির ধুপশীল, ফারুয়া ও জুরাইছড়ি বৌদ্ধ জনগোষ্টি বনাম বিলুপ্ত শান্তিবাহিনীর নাম। কিন্তু কারা এই শান্তিবাহিনী। তাই প্রশ্নের জন্ম পিছনের কলকাঠি যারা নাড়িয়েছে, লাগিয়েছে তারা কোথায়। তারা ভেবেছেন এখানে সবাই ধার্মিক হয়ে গেলে অপকর্মকারীদের জায়গা হবে না। তাই তাদের একটাই উদ্দেশ্য ধুতাঙ্গ ভান্তেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে তাড়াতেই হবে তাঁর দ্বারা কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান করতে দেয়া হবে না।
এজন্যই ২০২০ সালের ১৫ মে শুক্রবার রাত ৯ ঘটিকায় ঐ অধার্মিক, অপরাজীনীতিক, মিথ্যাচারীরা বৌদ্ধ আদিবাসী জনগোষ্টির ধুপশীলস্থ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ‘ধর্মপ্রিয় আন্তর্জাতিক বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র’টি আগুন দিয়ে বুদ্ধমূর্তি সহ প্রায় দুই কোটি টাকার ধর্ম সম্পদ ভষ্মিভুত করে দেয়। অথচ তখন মহামারি করোনা-১৯ এর কারনে দেশে লকডাউন চলছে। তাতেও তারা ক্ষান্ত হয়নি ধর্মপালনকারী এবং ভিক্ষু সংঘকে নিত্য হুমকী, মানসিক নির্যাতন নিপীড়ণ, ভয়ভীতি প্রদর্শন করেই চলেছে। কিন্তু বিধিবাম সেই অসহায় বৌদ্ধ সমাজের জন্য অবশেষে যেন ধর্মপালনের অভিভাবক হিসেবে দাঁড় হলেন বান্দরবানের বিশিষ্ট সমাজ সেবক প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ধুতাঙ্গ ভান্তে ড, এফ দীপংকর মহাথেরকে ফাং (আমনন্ত্রণ) করে নিয়ে যান পরে ‘বান্দরবান আর্যগুহা ধূতাঙ্গ বিমুক্তি বিহার’ প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানের প্রাকৃতিক বিরাট এক গুহায় ধুতাঙ্গ ভান্তে অবস্থান নেন। শত বাঁধা আপত্তি থাকা সত্তেও বিলাইছড়ির ধুপশীল, ফারুয়া ও জুরাইছড়ি বৌদ্ধ জনগোষ্টি ধুতাঙ্গ ভান্তের সানিধ্যলাভে সেখানেও ধর্ম এবং বিনয় শক্তি নিয়ে গমনাগমন করছেন। সেখানে অনেক বৌদ্ধ মন্দির ধর্মের কল্যাণমিশ্রিত খুঁদাই করা সোনালী আভায় তৈরী হয়েছে, হচ্ছে কিন্তু ধর্ম পালন, রক্ষায় এই কল্যাণমিত্রের বিলিয়ে দেয়া মহা স্কন্ধের বৌদ্ধ তথা মানব সমাজের এই বিহারের উন্নয়নে কোন মন্ত্রী, এমপি বা প্রশাসনের পদস্তরা এগিয়ে আসেন না। ‘ধর্মপ্রিয় আন্তর্জাতিক বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র’টি যখন ভষ্মিভুত করে দেয়া হয়েছে তখন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কেউ কেউ শুধুই উঁকি মেরে দেখেছেন। আজঅবধি বিহারটি নির্মাণ করে দিতে আসেননি।
তাই বৌদ্ধ সমাজকে নির্বাণের পথ দেখাতে ধূতাঙ্গ ভান্তে বলছেন, অন্ধকার বিনাশের জন্য সূর্য যেমন তার তেজষক্রিয়তাকে নিয়ে প্রচন্ড রূপ ধারন করে, আবার নারিকেলের ভিতরের পানি শুকিয়ে গেলেও তার উপরের কঠিনীয়তাকে সে ত্যাগ করে না তাই মানব সমাজ থেকে অন্ধকার দুর করতে আমিও তার একই রূপ নিয়েছি, শীলবান ভিক্ষুরাও সে রূপ ধারণ করেন। ধর্মদেশনায় বলেছেন, সত্যি যে, বানরের গুণ হলো সে গাছের শাখা প্রশাখাগুলোকে ভাঙ্গে না, কারণ তার বাঁচা এবং স্বভাবের ধারন-বাহনই হলো বনের গাছ। তাই স্বধর্ম রক্ষা এবং মানব কল্যাণে মানুষের মাঝে বানরের গুণও থাকা দরকার। পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেকেই ধর্মান্তরিত হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে তাদের উদ্দেশ্যে তাঁর ধর্মোপদেশ হলো ধর্মান্তরিত হলেই যে ধার্মিক হয়ে যাবে তার নিশ্চয়তাও নেই। তাই লেভেল লাগালেই মার্কা নির্দিষ্ট হয় না, ধার্মিক হওয়া যায় না। এটাও সত্যি যে, হিংসা হলো ধর্ম বিরোধী, তাই হিংসা লালনপালনকারী তাদেরকে সুখী বলা যাবে না, তাদের দিয়ে ধর্মও হবে না। এই অদক্ষ আর লোভের চিত্ত সাবইকেই বিপদেই ফেলবে। বৌদ্ধ সমাজে যে সব ভিক্ষু হিংসা, লোভ, দ্বেষ-মোহকে লালন পালন করে তাদেরকেও ত্যাগ করা উচিত। কেননা তাদের দিয়ে বুদ্ধের শাসন এবং সকল সম্প্রদায়ের মঙ্গল হবে না।
দেব-মানব পুজ্য ধুতাঙ্গ ভান্তের বলছেন, আপনারা আমার জ্ঞাতিও বটে। আমি সব কিছুকেই ত্যাগ করে বহুজনের কল্যাণে জঙ্গল জীবন গ্রহন করেছি। আমার কোন দুরভিসন্ধি, জাতি দেশ ও সমাজ বিরোধী কাজের পরিকল্পনা ছিল না। আমি মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান সহ অন্যান্য সকল জাতিগোষ্টির কাছে কৃতজ্ঞ। স্বধর্ম এবং মানবতা রক্ষায় যে ত্যাগ স্বীকার তা দুঃখ মুক্তি এবং চিত্ত সুদ্ধিকেও সুরক্ষা করবে। আমার এ সত্য বাক্যের প্রভাবে আপনাদের সকলের মঙ্গলই হবে। আকাশ স্বচ্ছল এবং নীরব থাকে, কিন্তু আকাশ নীলই থাকবে। আকাশও তার রূপ দেখাতে পারে না ‘মেঘের’ই জন্য। মানুষের মনে হিংসা উৎপন্ন হয়ে স্বভাব এবং ধর্ম হারিয়ে ফেলে। কচ্ছপ আহার সংগ্রহে ডাঙ্গায় উঠলে বুঝতে পারে না তাকে শিয়ালে শিকার ধরেছে। যখন বুঝতে পারে তখন তার অঙ্গগুলো শক্ত খোলসেই লুকিয়ে ফেলে। তাই অকুশল, মিথ্যাদৃষ্টি, হিংসা বিদ্বেষ, লোভ-লালসা থেকে মুক্ত হতে হলে, সুখের ও নির্বাণ পথে গমণ হলে ধর্মই হলো মানব জাতির শক্ত খোলস। বুদ্ধের শিক্ষা হলো অসাম্প্রদায়িক এবং বুদ্ধ ধর্মে সম্প্রদায়ের সাথে কোন সম্পর্ক নেই অর্থাৎ তাঁর কাছে সবাই সমান। বুদ্ধ বৃক্ষতলে বসে বিজ্ঞানকে জয় করেছেন কিন্তু ডাক্তার আর বিজ্ঞানীরা ল্যাব আর অপারেশন থিয়েটারে বসেও সঠিক করতে পারছেন না। কারণ তাঁদের কাম-লোভ, দ্বেষ, মোহ, হিংসা রয়ে গেছে। বুদ্ধ আরো বলেছেন মস্তকবিহীন দেহতো সচল থাকে না অর্থাৎ যার কাছে ধার্মিকতা নেই, জ্ঞান নেই বুদ্ধের শাসনের প্রতি সম্মান নেই সে মস্তক বিহীন শুধুই দেহ। চিরন্তন সত্যি হলো বুদ্ধ বৃক্ষতলে বসেই বিজ্ঞানকে জয় করেছেন। বুদ্ধের শিক্ষা ছিল সবার জন্য। তাই ধর্ম এবং কল্যাণে শুধু নিজের জন্য নয়, অপরের জন্য বেঁচে থাকতে হবে। তাই বুদ্ধ বলেছেন, পারমী পূর্ণ করো নির্বাণ সুখ আসবে আর একদিন নির্বাণ সুখ হবে। ধূতাঙ্গ ভান্তে ড. এফ দীপংকর মহাথের ধর্ম শক্তি, ঋদ্ধি শক্তি দিয়ে সকলেরই কল্যাণ করে যাচ্ছেন। সন্মুখ সত্য ষ্পষ্টবাদী পূজনীয় ধূতাঙ্গ ভান্তে একজন নারীবাদিও। তাই তিনি বলছেন, ছেলে সন্তানদের বাবা-মা’রা যেমন কষ্ট করে লালন পালন করেছেন তাতে মেয়ে সন্তানদেরও সেভাবে করেছেন। কিন্তু সাংসারিক বা পারিবারিক জীবনাচারে তাদের বেলায় কেন অবহেলা। মেয়েরা যদি সন্তানদের কাপড় ধৌত, ভাত রান্না, সেবা করতে পারেন তাহলে ছেলেরা কেন পারবে না। মেয়েদেরকে তাদের সাধ্যমত পড়ালেখা না করিয়ে কেন অল্প বয়সে সংসার জীবনে ঠেলে দিচ্ছেন। তাদেরকে বিহারে গমনাগমন করাচ্ছেন না, সঠিক ধর্ম শিক্ষা দিচ্ছেন না, এতেতো সমাজ এবং জাতীর জন্য মঙ্গল হবে না, ধর্ম এবং কল্যাণেরও ক্ষতি হবে। ছেলে মেয়েকে সমানেই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করুন তাতে প্রত্যেকেরই সর্বমঙ্গল হবে।
পূজনীয় ড. এফ দীপংকর মহাথের ধুতাঙ্গ ভান্তের সাধন জীবন, ধর্ম প্রচার, বৌদ্ধ সমাজ তথা সকল প্রাণীর হিত সুখের কল্যাণে তাঁর ঋদ্ধি জ্ঞানের বিচ্ছুরণ ভিক্ষু এবং বৌদ্ধ সমাজের অদ্বিতীয়। অথচ এই কল্যাণমিত্রকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ সমাজ পেয়েও যেন হেলা ফেলা করছেন। দেব মানব পূজ্য সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তেকেও অনেকে হেলা ফেরা করেছিলেন অথচ তিনি ধর্ম, সুখ, শান্তি কল্যাণের এক মহা আলোকিত বাতি। ধুতাঙ্গ ভান্তেও যে বনভান্তের আশির্বাদপুষ্ট। পারিবারিক জীবনে তিনি মরিচপোড়া দিয়ে অন্ন গ্রহন করে বৃক্ষতলে বসে হাস্যোজ্জল খেলতেন, দিক্বিদিক ছুটতেন আর ফাঁকে মাঙ্গলিক চিন্তা নিয়ে মগ্ন হতেন। কে-ই-বা জানতো তিনি সত্যি সকলের কল্যাণ মিত্র হবেন। বুদ্ধ ঋদ্ধি শক্তির কল্যাণমিত্ররা আমাদের লোক সমাজে আবির্ভুত হবেন এটিও যে নিশ্চিত করেছেন আজকের ধুতাঙ্গ সাধক ড. এফ দীপংকর মহাথের তারও একটি জলন্ত প্রমান। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের আমাদেরই সমাজের অধার্মিক ব্যক্তি, অপরাজনীতি, মিথ্যাচারীরা এই সাধককে নাকি বলছেন তিনি ভারতের গুপ্তচর, বাঙালি (বড়ুয়া) বৌদ্ধ তাই তাঁকে এখানে থাকতে দেয়া যাবে না। হ্যাঁ তিনি বৃক্ষতল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অতঃপর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বৃক্ষতলে না গিয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চপদের বসে নিজ সুখে থাকতেন। আজকে অধার্মিক, অপরাজনীতিক, মিথ্যাচারীদের মিত্যাচার, নির্যাতন দেখতে হতো না। তাঁর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বিহার পুড়ে দিত না, ভিক্ষু সংঘকে, বৌদ্ধ সমাজকে নিপীড়ণ, নির্যাতন সর্হ্য করতে হতো না ধর্ম রক্ষায় উপাসকদের অপহৃত এবং প্রাণও দিতে হতো না। কিন্তু না তিনিতো সেই ঋদ্ধি শক্তির সকলের কল্যাণমিত্র তাই তিনি স্বল্পসংখ্যক অধার্মিক, মিথ্যাচার অপরাজনীতিকদের কারণে ধর্ম প্রচার, মানুষের কল্যাণের পথ থেকে পথভ্রষ্ট হবেন না। তাই ঐসব অন্ধকার বিনাশের জন্য সূর্য যেমন তার তেজষক্রিয়তাকে নিয়ে প্রচন্ড রূপ ধারন করে তিনিও সেই রূপ ধারণ করেছেন। যেখানে আজকের বৌদ্ধ সমাজে তথা মানব সমাজে ভাই; ভাইয়ের, বোন; বোনের, ছেলে-মেয়েরা বাবা-মা’য়ের খবর রাখেন না অথচ তিনি চিতায় মরদেহের পরিত্যাক্ত কাপড় জোড়াতালি দিয়ে পড়ে গুহায় বসেও সকলেরই খোঁজ রাখেন।
নির্বাণ পথের সুখ’কে মুষ্টিবদ্ধ রাখতে সবকিছুকে তুচ্ছ আর বিসর্জন দিয়ে চিতায় মরদেহের আচ্ছাদনের ফেলে দেয়া কাপড় পড়ে যিনি গহিন অরন্যে আহার করে না করেও সাড়ে সাতটি বছর কঠিন সাধন জগত পার করেছেন তিনি আজ সেই সুখের টিকানা বলে যাচ্ছেন, সবাইকে সুখী রাখছেন। আমি সুখী এই ভেবে যে আমার পারিবারিক অতীত আমি যাঁর খেলার সাথী তিনি আজ সাবইকেই সুখে রাখতে নির্বাণ সুখী করাতে ধর্মের মহা স্কন্ধকে বিলিয়ে দিয়েছেন। বান্দরবানের আর্যগুহা ধূতাঙ্গ বিমুক্তি বিহারের গুহায় বসে আমারও খোঁজ নিলে পরের দিনই গুহায় হাজির হলাম প্রিয় কল্যাণমিত্রকে দেখলাম। সেই ১৯৯০ এর পর ২০১৬ এর ফাঁকের দীর্ঘ ২৬টি বছর পর পূজনীয় ধুতাঙ্গ ভান্তে আমার খোঁজ নিলেন। সম্মুখে গেলে বললেন, মিলটন উপাসক আপনি কেমন আছেন, তখন আমার চোখের কোণে জল গড়িয়ে পড়ছিল জবাবে পূজনীয় ভান্তে ভালো আছি; বলতেই ভান্তে বললেন আপনিতো জ্ঞাণীগুণী মানুষ ভেঙ্গে পড়ছেন কেন, ধর্হ্য ধরুন। সত্যি পূজনীয় ভান্তে গুহায় বসেই আমার কষ্টের দিনগুলো দেখছিলেন তাই আশির্বাদ করলেন অঃতপর যেন সব খারাপগুলো বরফেরমত হতে লাগলো। আমি গর্বিত, আনন্দিত, আপ্লুত যে ধূতাঙ্গ ভান্তে ড. এফ দীপংকর মহাথের হাজারো প্রতিকুলকে পেরিয়ে সকলপ্রাণীর দুঃখ মুক্তির জন্য দন্ডায়মান মহা এক বটবৃক্ষ। এই বটবৃক্ষের ছায়াতলে ধর্ম রক্ষা, হিংসা, লোভ, দ্বেষ মোহের ক্ষয় এবং নির্বাণ সুখের ঠিকানা রয়েছে। পুজনীয় ধুতাঙ্গ ভান্তের মহাত্যাগের ঐ ছায়ায় আমিও সুখ খুঁজি, ক্রন্দন করি হয়তো অজশ্র, নয়তো আঁখির কোণে জমাট বাঁধা অশ্রুতে। এই মহাকল্যাণমিত্র আগামী ২০মার্চ-২০২৩ইং ৫১ বছরের পদার্পণ করবেন। বুদ্ধের নিকট প্রার্থণা এই মহাকল্যাণমিত্র আমাদের মাঝে হাজার হাজার বছর বেঁচে থাকবে ধর্মের কল্যাণে, মানবের কল্যাণে, সকল প্রাণীর কল্যাণে, সেই প্রকৃত সুখের কল্যাণে যেখানে রয়েছে ‘নির্বাণই সুখ’।
সাধু ,সাধু, সাধু
লেখক-
মিলটন বড়ুয়া, সম্পাদক ও প্রকাশক, সাপ্তাহিক পাহাড়ের সময়, এবং একনিষ্ঠ সেবক ধুতাঙ্গ ভান্তে ড. এফ দীপংকর মহাথের, সভাপতি পার্বত্য সাংবাদিক ইউনিয়ন ও এসোগান শিখি সংগীত বিদ্যাপীঠ, রাঙ্গামাটি।
ঊ-সধরষ: পযঃংযড়সড়ু@মসধরষ.পড়স