জনস্বাস্থ্যের কর্মচারী স্নেহ চাকমার দূর্দিনে পাশে কেউ নেই
॥ নিরত বরন চাকমা,বরকল ॥
রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগে নলকূপ মেকানিক স্নেহ কুমার চাকমা। তিনি দীর্ঘ ৩৪ বছর এ পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কোনো দিন তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থয় ঘটেনি। এমনকি ছুটির দিনেও নিয়মিত অফিসের কাজ ঘুছিয়ে রাখতেন। আর অফিসের সকল কাজ তিনি একাই সামাল দিতেন। নিজের শরীরের অবস্থা খারাপ থাকা স্বত্বেও তিনি কখনও বিশ্রামের কথা চিন্তা করেননি। যখনই কাজের দায়িত্ব পড়েছে তখন সরকারের নির্ধারিত কাজ নিজের কাজ মনে করে পাহাড়ের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে প্রাকৃতিক বৈরীতা এবং দূর্গমতা উপেক্ষা করে জনসাধারণের স্বার্থে দায়িত্ব পালনে অটুট ছিলেন।
কর্মরত অবস্থায় স্ট্রোক করায় এখন আর নিয়মিত দায়িত্ব পালন করা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে তিনি ডাক্তারের তত্বাবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাঙ্গামাটিতে পড়ে রয়েছেন। অথচ স্নেহ কুমার চাকমার জীবনে এতোকিছু দূর্দিন বয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তার পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা তো দূরের কথা তারা খোঁজ খবর পর্যন্ত রাখেননি। আর সে একজন সরকারি কর্মচারী হওয়া স্বত্বেও আজ দূর্দিনের সময় পাশে কেউ নেই বলে পরিবারের লোকজনও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
জানা যায়,গত ২৯ শে সেপ্টেম্বর সকালে স্নেহ কুমার চাকমা তার নিজ বাড়িতে ধূপ জ্বালিয়ে প্রার্থনা করতে বসেন। ওইসময় তিনি হঠাৎ বসা অবস্থায় ছিটকে পড়ে যান। দেখে যে, তার বাম হাত অচল হয়ে গেছে। পরে তার সহধর্মিণীর চোখে পড়লে বুঝতে পারে যে তার স্বামী স্ট্রোক করেছে। অবস্থা খারাপ দেখে তাৎক্ষণিক পরিবারের লোকজন রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে রোগীর অবস্থা অবনতি দেখে চিকিৎসক চট্টগ্রাম মেডিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করেন। পরের দিন তাকে ওই অবস্থায় প্রাইভেটে চট্টগ্রাম সিটি মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। অথচ স্নেহ কুমার চাকমা খোদ সরকারি কর্মচারী। তার জীবনে এতোকিছু দূর্দিন বয়ে যাচ্ছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের কর্তৃপক্ষও বিষয়টি সম্পূর্ণ অবগত হয়ে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেননি। এমনকি সংশ্লিষ্ট বিভাগের কেউ খবরও নেয়নি বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করেছে।
স্নেহ কুমার চাকমার ছোট ছেলে দিব্য চাকমা জানান, গত ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে প্রার্থনা করার সময় বাবা স্ট্রোক করেন। ওইদিনে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য রাঙ্গামাটিতে নিয়ে যাই। কিন্তু সেখানে ডাক্তাররা সুস্থ করতে পারেনি। রাঙ্গামাটি থাকা অবস্থায় সেখানেও আবার স্ট্রোক করেন। পরে বাবাকে চট্টগ্রামে নিয়ে যেতে হয়। চিকিৎসা করতে গিয়ে টাকা পয়সাও অনেক খরচ হয়। আর এখন হাতে টাকা পয়সাও নেই। বাবার একবার থেরাপির জন্য ৫শ টাকা লাগে। সেই টাকা কোথায় পাবো?
তিনি বলেন,জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগে এতোদিন পর্যন্ত নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করেও আজকে বাবার দূর্দিনে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোনো ব্যক্তি খবর পর্যন্ত নেয়নি। বাবার অসুখের কথা বরকল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তাকে আমার মা অবগত করেন। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কেউ সরাসরি খোঁজ নেননি।
তার(স্নেহ) মেজো কন্যা মনিকা চাকমা বলেন, স্ট্রোক করার আগের দিন তার বাবাকে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অফিসে কাজ করতে হয়েছে। অফিসের কাজের চাপ এবং মানসিকচাপের কারণেই স্ট্রোক করেছে। সব কাজ তাকে দিয়েই করানো হয়। অথচ বাবা একজন সরকারি চাকুরীজীবি। সে কর্মরত অবস্থায় যদি এমনই অবহেলিত হয় তাহলে অবসরে গেলে তো আরো খারাপ হবে।
বরকল উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা রুশো খীসা জানান,অফিসের কাজে ব্যস্ততার কারণে সরাসরি খোঁজ নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে স্নেহ কুমার চাকমাকে সহযোগিতা করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।