বরকলে জাতীয় কন্যা শিশু দিবস পালিত
॥ নিরত বরন চাকমা,বরকল ॥
সময়ের অঙ্গীকার,কন্যা শিশুর অধিকার এ প্রতিপাদ্য নিয়ে রাঙ্গামাটির বরকলে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এর উদ্যোগে জাতীয় কন্যা শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার(৪অক্টোবর) সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে কনফারেন্স কক্ষে এ সভা আয়োজন করা হয়।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা অনুকা খীসা এর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিধান চাকমা,বিশেষ অতিথি ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান শ্যাম রতন চাকমা ও ভাইস চেয়ারম্যান(সংরক্ষিত) সুচরিতা চাকমা।
বরকল প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি নিরত বরন চাকমা বলেন,সন্তানকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পেছনে বাবার পাশাপাশি মায়ের অবদান অনেক বেশি। পৃথিবীর সকল মা’ই হচ্ছে সন্তানের অনুপ্রেরণা।আর বাবারাই সন্তানের এবং পরিবারের ছায়া।
তিনি আরও বলেন,পূর্বেকার সময়ে পরিবার বা সমাজে নারী-পুরুষ বা ছেলেমেয়ের বৈষম্য থাকলেও বর্তমানে,যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেকটা সেই পরিবেশ বদলে গেছে।শিক্ষিত সমাজে নারী পুরুষের কোনো ভেদাভেদ নেই।পরিবারে ছেলে বা মেয়ের বিভেদ নেই।আর যদি পুরুষ শাসিত সমাজে নারী পুরুষের বৈষম্য থাকতো তাহলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান,বিভিন্ন কর্মশালায়,বিশ্বদরবারে সর্বত্রই নারীদের উপস্থিতি দেখা যেতো না।সেজন্য দেশের কল্যাণে এবং দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের এগিয়ে আসতে হবে এবং দূরদর্শিতা চিন্তা করতে হবে।আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।তাই জাতীয় কন্যাশিশু দিবসের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর সকল শিশুর সফলতা কামনা করেছেন প্রেসক্লাব সহ-সভাপতি।
ভাইস চেয়ারম্যান শ্যাম রতন চাকমা বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশ-ত্রিশ বছর আগে পাহাড়ি-বাঙালি সকল সমাজে বা পরিবারের মধ্যে ছেলেমেয়ে,নারী-পুরুষের বৈষম্য দেখা গিয়েছিল।শুধু তাই তখনকার সময়ে পাহাড়ি সমাজে প্রথাগত আইন অনুযায়ী নারীরা পিতার সম্পত্তি ভোগ বা উত্তরাধিকার লাভ করতে পারতেন না।কিন্তু বর্তমান শিক্ষিত সমাজে অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে।আর এখন নারীরাও পরিবারে বৈষম্য হচ্ছে না পিতার সম্পত্তি লাভ বা উত্তরাধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে না।
প্রধান অতিথি উপজেলা চেয়ারম্যান বিধান চাকমা বলেন,বাংলাদেশে একযোগে ৪৯৫টি উপজেলায় কন্যাশিশু দিবস উদযাপন করা হচ্ছে।তারই ধারাবাহিকতায় বরকল উপজেলায়ও এ দিবসটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন,সমাজে নারী পুরুষের সমান অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।তাই অনেক জ্ঞানী মানুষেরা এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা করে গেছেন।পুরুষ শাসিত সমাজ সৃষ্টির সাড়ে সাতশত বছর পূর্বে নারীরাই দেশ শাসন করেছেন।কিন্তু বর্তমানে নারী শাসিত সমাজ না থাকলেও নারীরা পিছিয়ে নেই।আর নারীদের অধিকার নিয়ে পুরুষরাই আগে এগিয়ে এসেছে।যেমন – হিন্দু সমাজে সতীদাহ প্রথা বিলুপ্তিতে অবদান ছিল রাজা রামমোহন রায়ের এবং বিধবা বিবাহ প্রথার সংস্কারক ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।তাই সমাজ পরিবর্তনে এবং নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারীদের এগিয়ে আসতে হবে।সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে নারী-পুরুষ একসাথে কাজ করতে হবে।
সভাপতি বক্তব্য মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বলেন,পুরুষ শাসিত সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারীদের সচেতন হতে হবে এবং এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন,নারীদের উন্নয়ন এবং ছেলেমেয়ে বৈষম্য দূরীকরণে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।এছাড়াও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বাল্য বিবাহ,নারী ও শিশু নির্যাতন,নারীদের আয়বর্ধক কর্মসূচির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ,নারীদের সচেতনতা সভা,কিশোর কিশোরী ক্লাব গঠন ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।সেইসাথে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠার জন্য কিশোর কিশোরী ক্লাবের মাধ্যমে কিশোরীদের সাংস্কৃতিক শিক্ষাদান দেয়া হয়।
এসময় উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার হিতৈষী চাকমা,তথ্য অ্যাপা কর্মকর্তা তুষিতা চাকমা,বরকল প্রেসক্লাবের সদস্য ও পাহাড় সংবাদ পত্রিকার প্রতিনিধি লক্ষীমন চাকমা,মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রশিক্ষক কামনা চাকমা সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে কিশোর কিশোরী ক্লাবের পক্ষ থেকে গান ও কবিতা আবৃত্তি পরিবেষণা করা হয়।