বৈদ্যুতিক ফাঁদ নয় বরং বন্যপ্রানীদের বাঁচাতে এগিয়ে আসুন
বন-জঙ্গল দখলে দখলে বন্যপ্রানীদের আবাসস্থল দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। তাদের নিরাপত্তা এবং খাদ্য নিশ্চিতে সচেতন মহলে অনেকটা দুঃশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে সেই সাথে প্রান ভয়ও দেখা দিচ্ছে চরম আকারে। বন্যপ্রানীদের হামলা অত্যাচার থেকে বাঁচ মানুষ নানান কৌশল অবলম্বন করলেও তাঁদের অজান্তে চরম ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে এসব প্রানীকূলের। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত উপজেলার মানুষ এখন চরম হতাশায় ভুগছে। রাতে ঘুমাতে গেলে ঘুমচোখে যেন জেগে থাকার মতো। কেননা কখন বন্যপ্রানীরা এসে হামরা চালায়। ক্ষেত খামারী নষ্ট করবে। তাই তাদের তাড়াতে ফসল রক্ষা করতে এখন নিত্য নতুন ফাঁদ পাতানো হচ্ছে বনে আর ক্ষেত খামারে।
এদিকে বন্য হাতির আক্রমণ থেকে ফসল ও বাগান রক্ষা করতে লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে বৈদ্যুতিক তারের ফাঁদ পেতেছেন স্থানীয় শতাধিক কৃষক ও বাগান মালিকরা। হাতির মারার এইসব বৈদ্যুতিক ফাঁদে প্রতিনিয়ত মানুষ, হাতি সহ নানান জীবজন্তু মারা যাচ্ছে। বিষয়টি জেনেও কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন এমন অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন। এছাড়াও সেখানে ফসল রক্ষা করতে পাতানো হয়েছে কারেন্ট জাল। আর জালে আটকে মরছে শত শত পাখি। কিন্তু এভাবেতো চলতে দেয়া যাবে না। যদি চলে তাহলে বন্যপ্রানীরা ধীরে ধীরে ধ্বংস হবে সেই সাথে তারাও মারমুখী হয়ে পড়বে। মহাবিপন্ন হাতি সংরক্ষণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ বন বিভাগ ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ‘স্ট্রেনদেনিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ডলাইফ প্রোটেকশন’ প্রকল্পের আওতায় স্ট্যাটাস সার্ভে অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অব এলিফ্যান্ট অ্যাকশন প্ল্যান ফর বাংলাদেশ উপ-প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৬ সালে মানুষ-হাতি সংঘাত নিরসনে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার জন্য একটি মাঠপর্যায়ের ব্যবস্থাপনা সহায়িকা প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে হাতির বাসস্থান, করিডর ও বিচরণভূমি ধ্বংস করছে। ফলে তারা লোকালয়ে চলে আসছে, এতে সংঘাত বেশি হচ্ছে। মানুষের ক্রমাগত বনে প্রবেশের ফলে হাতি তার সহজাত ভীতি বোধটুকু হারিয়ে ফেলছে।
অন্যদিকে বন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬ বছরে ৫৪টি হাতি মারা গেছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই মারা গেছে মানুষের হাতে। আর এ সময়ে হাতির আক্রমণে ১৩৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ সময়ে হাতি হত্যার ঘটনায় মোট মামলা হয়েছে ১৪টি। তবে একটি মামলাও নিষ্পত্তি হয়নি, কেউ সাজা পেয়েছে এমন নজিরও নেই। দেখা যায় ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের রাঙ্গাঝিরি, খালখুইল্যা পাড়া, বড় ছনখোলা, কুমারী, চাককাটা, বিচুইন্না, ফুটের ঝিরি, বাম হাতির ছড়া, ডান হাতিরছড়া, জলপাইতলী, হাইদারনাশী, পাঁচ মাইল, কবিরার দোকান, ঘিলাতলী, বগাইছড়ি, অংসারঝিরি, কুরুপপাতা ঝিরি এলাকায় ফসলের জমি ও বাগানের ধারে বৈদ্যুতিক ফাঁদের জিআই তারের সঙ্গে ঝুলছে সাদা পলিথিনের টুকরো। মাইলে পর মাইল ধরে এইসব দেখা যায় বৈদ্যুতিক ফাঁদের। সূর্য ডুবলেই এটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। আর ফাঁদে পড়ে বন্যপ্রানী সহ মরছে শত শত পাখি। কিন্ত এসব ফাঁদে কি শুধু বন্যপ্রানীরাই মরছে তাই গত দুই বছরে বৈদ্যুতিক ফাঁদে ৪/৫ জন মানুষও মারা গেছে।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না বা যারা জানেন না তাদেরকেও জানাতে হবে যে, বন্যপ্রানীরাও তাদের স্বাধীনতা চায়। তারাও বনবনানীতে ঘুরে নিজেদের খাবার জোগাড় করতে। তারা তাদের মতই করে বাঁচতে চায়। কিন্তু মানুষ তাদের জানা অজানার মধ্যে বন্যপ্রানীর স্বাধীনতাকে যেভাবে খর্ব করা হচ্ছে তাতে তারা এখন মারমূখী হয়ে পড়েছে। খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে এসে হামলা চালাচ্ছে। তাই বন্যপ্রানীদের তড়াতে কোন মরণ ফাঁদ নয়, হত্যা নয়, বরং তাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে সকলকে প্রকৃতি আর পরিবেশের জন্য।