দখল-দূষণে ক্ষত-বিক্ষত অভাগা কাপ্তাই হ্রদ (কর্ণফূলী) কতটা সতেজ আছে, উত্তর দেবে কে ???
॥ মোঃ সিরাজুল হক (সিরাজ) ॥
মানুষের জীবনটাকে পুরোপুরি উপভোগ করার জন্য প্রয়োজন একটি সুস্থ, সবল ও সতেজ হার্ট। শুধু মানুষ নয়, পশু-পাখি, জীবজন্তুর বেলায়ও এর বিকল্প নেই। এই হার্ট যদি নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে ধীরে-ধীরে মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। চির সবুজ রাঙ্গামাটির হার্ট আজ হৃদরোগে আক্রান্ত। এই মরণব্যাধি থেকে বাঁচানোর উদ্যোগ গ্রহণ না করলে আমাদের ভবিষ্যত পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। প্রিয় পাঠক, আমি আমাদের ভালোবাসার হৃদয় স্পন্দন কাপ্তাই হ্রদের কথা বলছি। আপনার হার্ট সুস্থ, সবল আর সতেজ রাখতে আপনি প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যান। আপনার সার্বিক সু-স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক নয় এমন কর্ম থেকে বিরত থাকেন। আপনি ধুমপান থেকে বিরত থাকেন। মাদক সেবন করেন না। প্রতিদিন ব্যায়াম করেন অ-স্বাস্থ্যকর খাবার পরিত্যাগ করে চলেন। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে দৃঢ় মনোবল নিয়ে হৃৎহিতকর জীবনযাপনের কুসুম পথে আপনি এগিয়ে চলেন। অথচ এই হ্রদ এখানকার গণমানুষের একমাত্র হৃদস্পন্দন, রূপসী বাংলার পরানপাখি-গিরিদুলালীর হার্ট। যদি প্রশ্ন করি আপনার হার্ট কর্ণফুলি হ্রদ কতটা সতেজ? বুকে হাত রেখে বলি, আমরা সবাই এ প্রশ্নের উত্তর দিতে লজ্জাবোধ করবো। নানাভাবে ক্ষত-বিক্ষত নানা সমস্যায় জর্জরিত প্রাণপ্রিয় কর্ণফুলী হ্রদ। দখলবাজরা এখন ভূমিদখল শেষে প্রতিনিয়ত হ্রদই দখল করে চলছে। কোন কোন স্থানে হ্রদ ভরাট করে বিল্ডিং করা হয়েছে, হচ্ছে, তা অব্যাহত আছে। অ-পরিকল্পিতভাবে কীটনাশকের ব্যবহার, হাজার ইঞ্জিনচালিত লঞ্চ-বোটের নষ্ট তৈলজাত, ও অন্যান্য দ্রব্য সামগ্রী এবং নৌ-পথের যাত্রী সাধারণের পরিত্যক্ত দ্রব্য সামগ্রীর আর্বজনায় ডাস্টবিনে রূপ নিয়েছে প্রিয় কাপ্তাই হৃদ। এভাবে হাজারো সমস্যায় জর্জরিত এ হ্রদ আজ প্রতিনিয়ত ক্ষত-বিক্ষত। অতীতে এ হ্রদের পানি এতটাই দুষণমুক্ত ও পরিষ্কার ছিল যে, তা পান করাও যেত। কিন্তু এখন অকল্পনীয়। যুগ যুগ ধরে এখানকার প্রাণ প্রবাহতুল্য ইতিহাসের সাক্ষী কাপ্তাই হ্রদ এখন মরণব্যাধিতে আক্রান্ত। এই হ্রদ দিয়ে প্রতিদিন লঞ্চ-বোটে করে হাজার হাজার মানুষ আসা যাওয়া করে, মৎস্যজীবীরা মৎস্য শিক্ষার করে। ঐসব মানুষের ব্যবহৃত পলিথিন সহ অপ্রয়োজনীয় নানা পরিত্যক্ত দ্রব্য সামগ্রী হ্রদের পানিতে ফেলে দেয়। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এ হ্রদে মল-মুত্র ত্যাগ করে। যা সরাসরি হ্রদের জলে মিশে যায়। এখানে বসতবাড়ির লেট্রিনের ট্যাংকি হ্রদের পানি বৃদ্ধি হলে তলিয়ে যায়। আবার অনেকেই লেট্রিনের টাংকি স্থাপন না করে পাইপের মাধ্যমে মলমুত্র সরাসরি হ্রদে ফেলে দেয়। আর ভরাট হওয়া ট্যাংকি স্বাস্থ্য সম্মতভাবে ক’জনই বা পরিস্কার করে। শেষে তাও আবার হ্রদের পানিতে। এখন প্রতিদিন হ্রদের পানিতে কতো মেট্রিক টন মলমুত্র, ময়লা-আবর্জনা ও নানা রকম দ্রব্য সামগ্রী মিশে যাচ্ছে তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানে। নানা নৈসর্গিক সৌন্দয্য উঁচু-নিচু টিলা, পাহাড়-পর্বত, ঝিরি-ঝর্ণা আর চারিপাশে সবুজের সমারোহে টুইটম্বর বর্ণাঢ্য এক লীলা নিকেতন এই কাপ্তাই হ্রদ। যার প্রেক্ষিতে এখানে পর্যটন শিল্পের বড় ধরণের যে বিকাশ সাধিত হয়েছে তা কেবল মাত্র এই হ্রদের কারণে।
রাঙ্গামাটি শহরের সাথে জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে ৬টির যোগাযোগের মাধ্যম কর্ণফুলী হ্রদ। মৎস্য খাতেও হ্রদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই হ্রদটি ঘিরে এখানকার মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ হয়। ২৫৬ বর্গমাইল আয়তনের দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই কৃত্রিম হ্রদ যে কোন মানুষের হ্রদয় কেড়ে নেয়। হেক্টর হিসাবে যার আয়তন প্রায় ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। যা দেশের পুকুরগুলোর মোট আয়তনের ৩২ শতাংশ ও অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের প্রায় ১৯ শতাংশ এবং এই এলাকার কৃষি জমির ৪০ শতাংশ। মূলত ভারতের মিজোরামের লুুসাই পাহাড় থেকে কর্ণফুলীর উৎপত্তি। ১৯৬১ সালের মে মাসে কাপ্তাই বাঁধের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে বাঁধের স্পিলওয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর লুসাই পাহাড় থেকে নেমে আসা অজশ্র জলরাশি বেশ কয়েকটি ছোট-ছোট খাল ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে এ কর্ণফুলি হ্রদের সৃষ্টি। যে উজ্জল সম্ভবনা নিয়ে এ কাপ্তাই হ্রদটি সৃষ্টি করা হয়েছে , সেই সম্ভবনা এখন ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে পড়েছে। পৌর এলাকায় কাপ্তাই হ্রদের অধিকাংশ জায়গা এখন দখল হয়েছে। এছাড়া কাপ্তাই উপজেলার জেটিঘাট এলাকায় ও হ্রদের জায়গা দখল করা হয়েছে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা যেমন হ্রদের জায়গা দখল করেছে তেমনি সাধারণ ভুমি দস্যুরাও হ্রদের জায়গা দখল করে নানাধরনের স্থাপনা নির্মাণ করেছে। তবে সবচেয়ে দুভার্গ্যজেনক অপ্রিয় সত্য যে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আইন প্রয়োগের ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠান গুলো ও হ্রদের জায়গা দখলের পরিমাণ এবং দখলবাজরা কারা এর কোন প্রকৃত তালিকা আজো করতে পারেনি।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ২০১৯ সালে একটি তালিকা করে, যে তালিকায় রাঙ্গামাটি পৌর এলাকায় ২২ জন এবং কাপ্তাই উপজেলার ৮জন দখলদারের নাম রয়েছে। যেখানে ক্ষমতাবান কোন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের নাম নেই। কাপ্তাই হ্রদ দখল করে নির্মিত স্থাপনাগুলো প্রতিনিয়ত এ হ্রদকে মৃত্যুর দিকে টেলে দিচ্ছে। হ্রদ দখল করে নির্মিত স্থাপনাগুলোর কারণে নৌযান চলাচলের পথ সংকুচিত হচ্ছে। নাব্যতা হ্রাস পেয়ে চড় পড়েছে, যত্রতত্র জলধারা দূষিত হচ্ছে এবং হ্রদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বিনষ্ট হচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদের জীব বৈচিত্র নিয়ে ২০১৮ সাল থেকে গবেষণা করছে চট্টগ্রাম ভেটারিনারী অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগ। তাদের গবেষনায় হ্রদের যেখানে স্থাপনা নির্মিত হয়েছে সেখানে দূষণ বেশি হওয়ায় মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে এবং এতে জীববৈচিত্র হারিয়ে যাচ্ছে বলে উঠে এসেছে। নদী-নালা, খাল-বিল, হ্রদ, প্রকৃতি পরিবেশ রক্ষার জন্য দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভাব নেই। কিন্তু আইনের প্রয়োগ নেই বলে আমরা উদ্বিগ্ন। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ২য় তফসিলেরর ১৬নং ধারা অনুসারে, যদি কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ সরকারী জলধারা দূষিত করার প্রয়াস চালান বা দূষিত করেন বা দূষণের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে পৌর কর্তৃপক্ষ দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। দেশে প্রচলিত পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে, জলাধার হিসাবে চিহ্নিত কোন জায়গা ভরাট কিংবা অন্যকোন ভাবে শ্রেণী পরিবর্তনে জড়িত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা উল্লেখও আছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কঠিন ও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা আছে। সর্বপরি এ জেলার সার্বিক দায়িত্বে নিয়োজিত একজন জেলা প্রশাসকও আছেন। অপ্রিয় হলেও সত্যি যে, কাজীর গরুর মতো আইনের বিধি-বিধান খেতাবে থাকলেও বাস্তবে এখানে তার প্রয়োগ নেই। ভবিষ্যৎ প্রজম্মের জন্য এসব আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবী। জেলা প্রশাসক ইচ্ছা করলে অনেক কিছুই করতে পারেন। যেমনটি পেরেছিলেন একজন জেলা প্রশাসক সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। একযুগ আগে তিনি রাঙ্গামাটিতে কর্মরত ছিলেন। পরিবেশ ও দুর্যোগের উপর ইউ.এন.ডি.পি এবং রাঙ্গামাটি পৌরসভার উদ্যেগে মাত্র ২৪ ঘন্টায় একটি নাটক নির্মাণ করি। নাটকটির মোড়ক উম্মোচন ও উদ্ভোধনী প্রদর্শনী অনুষ্ঠান জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও নাটকের মোড়ক উম্মোচনে তৎকালীন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা (বর্তমান উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান) ও বিশেষ অতিথি এবং নাটকটির উদ্ভোধনী প্রদর্শনীর উদ্বোধক হিসাবে জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য মুছা মাতব্বর উপস্থিত ছিলেন। “আমি আমার ফাঁসী চাই” নামক নাটকটি তাঁরা দুজন মিলে মোড়ক উম্মোচন সহ প্রদর্শনীর উদ্বোধনও করেন। সারাদিন ব্যাপী বড় পর্দায় নাটকটি সাধারণ মানুষ শিল্পকলা একাডেমীতে উপভোগ করেন। সুশীল সমাজের অনুরোধে স্থানীয় চ্যানেলে নাটকটি ৫/৬মাস যাবত প্রচার করা হয়। জেলা প্রশাসক সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী একদিন আমার কাছে ফোন করলেন। চা খাওয়ার নিমন্ত্রণ জানিয়ে নাটকের একটি ভিডিও কপি দেয়ার জন্য আবদার করলেন। পরদিন নাটকটির কপি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হাজির হলাম। তারপর কম্পিউটারে নাটকটি বেশ কয়েকবার দেখলেন জেলা প্রশাসক সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী। অতঃপর তিনি প্রশ্ন করলেন, নাটকে মাটি কাটার দৃশ্যটি কোথায় থেকে ধারণ করেছেন আপনি ? আমি বিস্তারিত খুলে বললে তিনি মাটি কাটার দৃশ্যটি ধারণের জায়গায় একজন ম্যাজিষ্ট্রেট পাঠালেন। পাহাড় কাটার জন্য দায়ী ঐ জায়গার মালিককে ১,০০,০০০/-(একলক্ষ) টাকা জরিমানা করলেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত। আমি আমার ফাঁসী চাই নাটকের একটি দৃশ্য দেখে তিনি আইনের প্রয়োগ করেছিলেন। আপনার দুচোখের সামনে ঘটে যাওয়া অপকর্মগুলো যদি দেশ ও দশের অকল্যাণ বয়ে আনে, তা দেখেও যদি না দেখার ভান করেন, তবে-এই পাপ কোন না কোনভাবে আপনার প্রজন্মের উপর-ই বর্তাবে। পরিণতিতে আপনার, আমার এবং আমাদের প্রজন্মের কাছে আমরা অপরাধী হবো, ক্ষমা পাবো না। এখনই আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া কাপ্তাই হ্রদকে বাঁচানো যাবে না। কাপ্তাই হ্রদ ছাড়াও তিন পার্বত্য জেলার খাল-বিল, নদী-নালা গুলোর একই অবস্থা। দেশে এখন অনেক নদী-নালা, খাল-বিল হ্রদ দখল-দুষণে, ভরাট হয়ে নাব্যতা হারিয়ে অপমৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কাপ্তাই হ্রদের অবস্থাও আজ হুমকির মুখে। ফলশ্রুতিতে এ হ্রদে আজ অনেক প্রজাতির দেশি মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাছাড়া বিলুপ্তির পথে রয়েছে আরো বহু প্রজাতির মাছ। হ্রদের অভ্যন্তরের জীব বৈচিত্র এখন ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়েছে। প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরে এসে নানামুখি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এ হ্রদ কে ধ্বংসের কাছাকাছি ঠেলে দেয়া হয়েছে। এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। এ হ্রদ মরে গেলে এখানকার জীব-বৈচিত্র, পরিবেশ, সর্বপরি মানুষ বেঁচে থাকবে কি করে ? এখনো কাপ্তাই হ্রদ বেঁচে আছে বলে আমরা বেঁচে আছি। সুখে শান্তিতে দু’বেলা মাছ-ভাত খাচ্ছি। অথচ আমরা প্রতিনিয়ত খল নায়কের মতো কেমন যেন হয়ে যাচ্ছি। দেশপ্রেমকে, দেশের গাছপালা, নদী-নালা নিয়ে দেশাত্মবোধক গানের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। বক্তৃতা আর বিবৃতির মাঝে আবদ্ধ করে রেখেছি। এত অধিক সংখ্যক দেশাত্মবোধক গান আর দেশ প্রেমিক বক্তা নাকি তামাম দুনিয়ার অন্য কোন দেশে নাই। আসলে দেশ প্রেম, প্রকৃতি প্রেম থাকে মন আর মননে। যার মনে মানবতা থাকে, দেশের এবং দশের প্রতি ভালাবাসা থাকে, সে বীরের মতো এগিয়ে যায়। সে স্রোতের প্রতিকূল আর অনুকুল বুঝে না। সে কোন বাধা মানে না। সে কারো সাথে আপোষ করে না, মাথা নত করে না। মাটি ও মানুষের টানে সে নিজেকে বিলিয়ে দেয়। প্রকৃতি ও জীবনের টানে সে নিজেকে উৎসর্গ করে। এখানে রাষ্টীয় ক্ষমতায় যে রাজনৈতিক দল অধিষ্টিত হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেই দলের নেতা-কর্মীরাই কাপ্তাই হ্রদ দখলের মহোৎসবে মেতে উঠে। ক্ষত-বিক্ষত হ্রদ কে উদ্ধার করা, দুষণ মুক্ত করা, ড্রেজিং করা আজ সময়ের দাবি।
বাংলাদেশের সংবিধানে ১৮(ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে। রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ জীববৈচিত্র, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবে। সংবিধানের এ অনুচ্ছেদের আলোকে সরকার নানা মাত্রিক পদক্ষেপ নিলেও রক্ষক যখন ভক্ষক হয়ে পড়ে তখন তা আর সুচারুভাবে বাস্তবায়ন হয় না। এটি আসলেই খুবই দুঃখজনক। আমরা দেশের সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদের পুরোপুরি বাস্তবায়ন চাই। আমরা এ হ্রদ নয়, সেই হারানো হৃদটিকে ফিরে পেতে চাই। এ হ্রদ ফিরে পাক-তার হারানো যৌবন ঐতিহ্য আর বৈচিত্র্যময় রূপ। কাপ্তাই হ্রদকে বেহাল দশা থেকে মুক্ত করতে হবে, আমাদের এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দীর্ঘ মেয়াদি বাস্তবমুখি কার্যকরি পরিকল্পনার বিকল্প নেই। রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা জনসচেতনতা ও আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া কাপ্তাই হ্রদের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমার হার্ট সতেজ রাখতে চাই আমি। আপনিও চেষ্টা করেন আপনার হার্ট সতেজ রাখতে। কিন্তু এ গিরিকন্যার বিবর্ণ হার্ট, আমাদের হৃদয় স্পন্দন কাপ্তাই হ্রদ কতটা সতেজ আছে? তার উত্তর দেবে কে ?
লেখকঃ মোঃ সিরাজুল হক (সিরাজ)
কবি, কলামিষ্ট ও সাংস্কৃতিক কর্মী