সাফ চ্যাম্পিয়ন পঞ্চ বীর কন্যাকে রাঙ্গামাটিতে ঝমকালো সংবর্ধনা
॥ পলাশ চাকমা ও নিরত বরন চাকমা ॥
রাঙ্গামাটিতে সাফ বিজয়ী পাহাড়ের পঞ্চ বীর কন্যাকে উচ্ছাসপূর্ণ পরিবেশে ঝমকালো সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ এর যৌথ উদ্যোগে চিংহ্লামং মারী স্টেডিয়ামে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
এসময় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমান এর সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার,বিশেষ অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসাইপ্রু চৌধুরী,রাঙ্গামাটি সদর জোন কমান্ডার লেঃকঃ আশিকুর রহমান প্রমূখ।
সাফ বিজয়ী ঋতুপর্ণা চাকমা বলেন, আমি সাধারণ এক মেয়ে। সাধারণ পরিবার থেকে আমার বেড়ে ওঠা। জীবনের এতদূর এগিয়ে আসার শুরুটা করে দিয়েছেন বীরসেন চাকমা (জেঠা) এবং কোচ শান্তি মুনি চাকমা। এছাড়াও অনেকেই বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন যা নাম বলে শেষ করা যাবে না। সর্বোপরি রাঙ্গামাটবাসীর ভালোবাসা ও আর্শীবাদে সাফ চ্যাম্পিয়ন অর্জন করেছি এটাই আমার গর্বের বিষয়। তিনি আরো বলেন, গর্বের এবং অবাক করার বিষয় হলো রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ এর আয়োজনে রাজকীয় সংবর্ধনা ও সবার আন্তিরক ভালোবাসা পেয়ে আমরা আনন্দিত। আমরা সাফ চ্যাম্পিয়নের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের জয়ের যাত্রা শুরু। আগামীতে এ জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সকলের সহযোগিতা ও আর্শীবাদ কামনা করেন। সেই সাথে নারী খেলোয়াড়দের ফুটবল একাডেমি ভবন নির্মাণ ও ঘাগড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের জাতীয়করণ যেন করা হয় সে বিষয়ে এমপির মাধ্যমে সরকারের সুনজরে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন।
বিশেষ অতিথি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসাইপ্রু চৌধুরী বলেন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের গোল্ডকাপের যাত্রার মধ্যে দিয়ে পাহাড়ের অনেক ফুটবল তারকা সৃষ্টি হয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতার কারণে এবং তার সহযোগিতায় নারী ফুটবল টিম অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে তাঁরা বাংলাদেশের হয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন অর্জন করেছে। তিনি আরো বলেন, পাহাড়ের সকল ক্রীড়াবিদদের জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করে আসছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যহত থাকবে।
প্রধান অতিথি এমপি দীপংকর তালুকদার বলেন,একজন ভালো খেলোয়াড় হতে মামা চাচা লাগে না,প্রতিভার গুণ থাকলে অনেক উপরে উঠা সম্ভব। এছাড়াও ধৈর্য, পরিশ্রম,নিষ্ঠাবান ও ভালোবাসা থাকতে হয়। আজকে সেই গুণগলো মহিলা ফুটবল খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিল বিধায় বাংলাদেশের হয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন অর্জন করতে পেরেছে।
সভাপতি বক্তব্য জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন,নারী চ্যাম্পিয়নরা জাতির জন্য অনুপ্রেরণা। তারা যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা অন্যন্য। তিনি বিশ্বাস করেন তারা বাংলাদেশে নতুন প্রজন্ম তৈরি করবে। আর সেটি হবে বড় সাফল্য। জয়ের যাত্রাটা সবেমাত্র শুরু। ভবিষ্যতে যেন এ জয়ের ধারা বজায় থাকে সেই সফলতা কামনা করেন।
এসময় রাঙ্গামাটি সদর পুলিশ সুপার(এসপি) মীর আবু তৌহিদ,বিপিএম (বার),ঘাগড়া ( বহুমুখী) উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক চন্দ্রা দেওয়ান ও কোচ শান্তি মুনি চাকমা,পানছড়ি উল্টাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক বীরসেন চাকমা সহ রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদের কর্মকর্তাবৃন্দ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের নেতৃবৃন্দ,রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও গণমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে,পাহাড়ের সাফ বিজয়ী পাঁচ বীর কন্যাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক প্রদান,পুরস্কার দেয়া হয়। পরে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার প্রতি খেলোয়াড়কে ৫০ হাজার টাকা ও ২জন কোচকে ২৫হাজার টাকা, জেলা পরিষদ প্রতি খেলোয়াড়কে ২লাখ টাকা ও ২জন কোচকে ৫০হাজার করে ১লাখ টাকা ও পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নবোর্ড চেয়ারম্যানের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রতি খেলোয়াড়কে ৫০হাজার টাকা,দুই জন কোচকে ২৫ হাজার টাকা অর্থ প্রদান করেন।
এর আগে,চট্টগ্রামের পাঁচ ফুটবল তারকা রূপনা চাকমা, ঋতুপর্ণা,মনিকা,আনাই মগিনী ও আনুচিং মগিনীকে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাঙ্গামাটির ঘাগড়া (বহুমুখী) উচ্চ বিদ্যালয় ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।