॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
আজ ২৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিশ^ পর্যটন দিবস। এ দিবসকে ঘিরে রাঙ্গামাটিতে বর্ণাঢ্য র্যালি এবং আলোচনা সভা সহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ পর্যটনে নতুন ভাবনা’। সুতারাং পর্যটনের নতুন কেন্দ্র হিসেবে রাঙ্গামাটির ঘাগড়ার কলাবাগান ঝর্ণাকে আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন।
পাহাড়ের বুকে ঠান্ডা পানির শীতল ধারা মুগ্ধ করে ভ্রমণ পিপাসুদের হৃদয়ে। তাই ভ্রমণ পিপাসুদের প্রথম পছন্দ পাহাড়ী ঝিরি-ঝর্ণা। পাহাড়ের বুকে রূপ ছড়ানো ঝর্ণাগুলোর মধ্যে রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের ঝর্ণাটি অন্যতম। যা সবার কাছে ‘কলাবাগান’ ঝর্ণা নামে পরিচিত। প্রতিদিনই রাঙ্গামাটি ও এর আশে-পাশের জেলাও উপজেলাগুলো থেকে ঝর্ণায় ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
পর্যটন নগরী রাঙ্গামাটির প্রবেশ দ্বার কাউখালী উপজেলা। চট্টগ্রামের রাউজান সীমানা পেরুলেই কাউখালীর অবস্থান। রাউজান ও রাঙ্গুনীয়ার সীমান্ত ঘেঁষা কাউখালী বেশ বৈচিত্র্যময়। পাহাড়ি বাঙ্গালির সহ-অবস্থানে গড়ে উঠা এ উপজেলার মানুষের উপার্জনের একমাত্র পথ গাছ, বাঁশ ও কৃষি।
চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কে কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া সেনাক্যাম্প পেরুলেই কলাবাগান। মূল সড়ক থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে অন্তত পাঁচটি প্রাকৃতিক ঝর্ণা। ঝর্ণাগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সমতল থেকে স্তরে স্তরে অন্তত দেড় থেকে দু শ’ ফিট উঁচুতে পর্যন্ত বহমান। প্রতিটি ঝর্ণারই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য। সৌন্দর্যের দিক থেকে কেউ কাউকে ইঞ্চি পরিমাণ ছাড় দিতে রাজি নয়। যা স্বচক্ষে না দেখলে কারো বিশ্বাসই হবে না। এ ঝর্ণাগুলো পর্যটন নগরী রাঙ্গামাটির সৌন্দর্যকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঘাগড়ার কলাবাগান এলাকার একটি চায়ের দোকানের বাঁ-পাশ ঘেঁষে ঝর্ণায় পৌছানোর রাস্তা শুরু হয়। পরিষ্কার পানির প্রবাহের সাথে ছোট ছোট অসংখ্য নুড়ি পাথরের উপর দিয়ে হেঁটে এগিয়ে যেতে হয় সবচেয়ে বড় ঝর্ণাটির দিকে। যাওয়ার পথে চারদিকে দেখা মিলবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাহাড়ি ছড়া, আরো কিছু ঝর্ণা, পাহাড় এবং সবুজে ঢাকা প্রকৃতির। কিছু পথ পাড়ি দেওয়ার পরই রয়েছে পিচ্ছিল ছড়া। পিচ্ছিল ছড়া সাথে পানি প্রবাহ অতিক্রম করেই কয়েক ধাপ পর হওয়ার পর দেখা মিলবে সবচেয়ে বড় ঝর্ণাটির। সমতল থেকে বড় ঝর্ণাটি অন্তত দেড় থেকে দু’শ ফিট উঁচু হবে।
অপার সম্ভাবনাময় প্রকৃতির নিজ হাতে গড়া অপরূপ দৃশ্য ও সৌন্দর্যের সমারোহ উপভোগ করতে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দৈনিক অসংখ্য পর্যটকের পদচারণায় নির্জন কলাবাগান এলাকার নীরবতাকে জাগিয়ে তোলে। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার সবচেয়ে বড় দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক এ ঝর্ণাকে কাজে লাগিয়ে গড়ে উঠতে পারে এখানে বিশাল পর্যটন স্পট। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় মাত্র দেড় কিলোমিটার রাস্তার ব্যবস্থা করা গেলে গড়ে উঠতে পারে অর্থনৈতিক জোন হিসেবে, বদলে দেবে কাউখালীর চিত্র।
চট্টগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী আমান বলেন, ঝর্ণাটির দিকে তাকালেই দু’চোখ এবং মন জুড়িয়ে যায়। চারদিকে সবুজের সমারোহ ঝর্ণাটিকে যেন ঘিরে রেখেছে। ঝর্ণাটিতে আসার সময় আরো চারটি প্রাকৃতিক ঝর্ণার দেখাও মিলেছে যা পর্যটন ভ্রমণের আনন্দকে আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
রাঙ্গামাটি শহর থেকে ঘুরতে আসা ফাহিম বলেন, মনোমুগ্ধকর ঝর্ণাটি দর্শনাথী ও ভ্রমণ প্রেমীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু এ ঝর্ণাকে ঘিরে এখনো কোন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেনি। সুযোগ-সুবিধার ভালো ব্যবস্থা নেই। এটি অনেক রিস্কি। খাগড়াছড়ি থেকে আসা হুমাইরা বলে, ঝর্ণাটি অত্যন্ত সুন্দর এবং বিশাল। তবে ঝর্ণা স্থলে পৌছাতে হলে পানির স্রোতে পা পিছলে পড়ারও সম্ভবনা রয়েছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো এখানে কোন নিরাপত্তার ব্যবস্থা নাই। এখানে আসলেই কেমন যেন এক অজানা এক ভয় বিরাজ করে মনে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর এ ঝর্ণাটি রক্ষণাবেক্ষণ, ভালো রাস্তা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা গেলে এটিকে ঘিরে রাঙ্গামাটির অন্যতম একটি নান্দনিক সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
যেভাবে যাবেনঃ
রাঙ্গামাটি শহরের যেকোন প্রান্ত থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে যেতে পারবেন ঝর্ণাটিতে। ভাড়া পড়বে ২০০-২৫০ টাকা। আবার চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটিগামী যেকোন বাসে করে চলে আসতে পারেন কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের কলাবাগান ঝর্ণায়। এছাড়াও ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলা থেকে এসি ও নন এসি বাসে করে চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় নেমে রাঙ্গামাটির পাহাড়িকা বাস অথবা দ্রুত যান সার্ভিস বাসে করে চলে আসতে পারেন কলা বাগান ঝর্ণায়।