বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণে শেখ হাসিনার পার্বত্য চুক্তি ও বিভিন্ন সরকারের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সময়ের কথন
॥ মোঃ সিরাজুল হক (সিরাজ) ॥
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্বদেশে ফিরে এলেন ১৯৮১ সালে। জাতির পিতার আদর্শে গড়া নিপীড়িত মানুষের মুক্তির সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের হাল ধরলেন তিনি। তারপর বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলো। শুরু হলো জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কঠিন মহা সংগ্রাম। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাঁসি ফোটানোর জন্য একের পর এক নিত্য নুতন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে লাগলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার মাত্র ০৬ মাসের মধ্যে গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তারপর জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলার অভাগা পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী শান্তি ফিরিয়ে আনতে এগিয়ে আসলেন। পিতার মতো উদার মনমানসিকতা নিয়ে পার্বত্য বিদ্রোহীদের তাবৎ অমার্জনীয় অপরাধ সমূহ ক্ষমা পূর্বক অনেক ছাড় দিয়ে রাজনৈতিক সমাধানের পথে জননেত্রী শেখ হাসিনা অগ্রসর হতে লাগলেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের জন্য পূর্বের হংসধ্বজ চাকমার নেতৃত্বাধীন যোগাযোগ কমিটিকে পুনরায় সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
পূর্বের কিছু ইতিহাস এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন। ১৯৭২-৭৩ সালে প্রথমে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এবং তারপর সশস্ত্র ইউনিট শান্তি বাহিনী গঠিত হয় মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার নেতৃত্বে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকাকালীন সময়ে তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম-কে রক্তাক্ত করার সাহস করেনি। কারণ উপজাতিদের মনে ক্ষোভ দুঃখ বেদনা থাকলেও তাদের অনেকেই জাতির জনকের নীতি আদর্শের মায়াবী এক কঠিন জালে আবদ্ধ হয়েছিলেন। যার বাস্তব প্রমাণ-তৎকালীন সংসদ সদস্য ও জনসংহতি সমিতি এবং শান্তিবাহিনীর প্রধান মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা সহ চেই থোয়াই রোয়াজার স্বেচ্ছায় বাকশালে যোগদান। মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার বাকশালে যোগদান এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব লাভ করা মানেই তো জাতীয় মূল ধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মানিকছড়ির মং রাজা মপ্রু সেইন চৌধুরী ও সাং প্রু সাইন চৌধুরীকে যথাক্রমে বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির গভর্নর হিসাবে নিয়োগ দান করেছিলেন। অতঃপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের সেই নিষ্টুর ভয়ানক কালো অধ্যায়ের কিছুদিন আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান ক্ষোভ অসন্তোষ, অবিশ্বাস দুর করে, বিভিন্ন সমস্যার সমাধানকল্পে এবং করনীয় নির্ধারণ ও সুপারিশ মালা প্রনয়নের জন্য তৎকালীন সচিব আবুল হোসেনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। মূলতঃ জাতির পিতার নেয়া সকল পদক্ষেপ ও উদ্যোগ আসলেই সত্যিকার অর্থে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনার এখানেই সূত্রপাত। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট কালো রাতে দুঃখিনী বাংলার এই অভাগা পার্বত্য চট্টগ্রামেও অন্ধকার নেমে আসে। তারপর অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেন। ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বর থেকে জাতির জনক বিহীন দুঃখিনী বাংলার অভাগা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র হামলার সূত্রপাত ঘটে। এর পূর্বে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা তাঁর দলবল নিয়ে গভীর অরন্যে আত্ম-গোপন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের কালো অধ্যায়ের সূচনা হলে আঞ্চলিক নেতৃবৃন্দের মনে অতীতের অবিশ্বাস ও শঙ্কা আবার নতুনভাবে জাগ্রত হয়।
তারা শান্তিপূর্ণ ভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক পন্থায় সমাধান হবেনা মনে করে অস্ত্রের মাধ্যমে সমাধানের বৃথা চেষ্টায় আত্ম-নিয়োগ করলেন। শুরু থেকে জেনারেল জিয়াউর রহমান এর সরকার সামরিক পন্থায় পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান মনে করে অগ্রসর হলেন। ফল শ্রুতিতে পাহাড়ের পরিস্থিতি আরো ভয়ানক জঠিল আকার ধারণ করে। এক পর্যায়ে জেনারেল জিয়াউর রহমান পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাথে সংলাপের জন্য প্রথমে রাঙ্গামাটির চাকমা রাজমাতা বিনীতা রায়কে এবং পরে সুবিমল দেওয়ানকে মন্ত্রীর পদ মর্যাদায় রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ করেন। অতঃপর ১৯৭৯ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়া বাঙ্গালী পুনর্বাসন শুরু করলে পরিস্থিতি আরো ভয়ানক রূপ ধারন করে। ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে এক সামরিক অভ্যত্থানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শহীদ হলে বিচারপতি আব্দুল সত্তারকে বিদায় দিয়ে জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। তিনি প্রথমেই তাঁর পূর্বসুরির পথ অনুসরণ করেছিলেন। কিন্তু পরে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতির ভয়াবহতা, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সমূহের ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রাজনৈতিক ভাবে সমাধানের পথে ফিরে আসতে বাধ্য হলেন। তিনি সংলাপ কমিটি এবং জাতীয় কমিটি গঠন পূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতির সাথে বহুবার বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন। পরিশেষে এক বৈঠকে সমিতির আইন পরিষদ সম্বলিত প্রাদেশিক মর্যাদার দাবীর পরিবর্তে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবী সম্বলিত সংশোধিত ০৫ দফা দাবীনামা পেশ করে এবং জেলা পরিষদ গঠন সংক্রান্ত সমঝোতার তীব্র বিরোধীতা করে। এরপর পরবর্তী বৈঠকের দিন তারিখ ধার্য্য করার পরও এরশাদ সরকার এর পক্ষ হতে আলোচনার পথ বন্ধ করে দেওয়া হলো।
এরশাদ পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতির সাথে সমঝোতায় না-গিয়ে নিজের ইচ্ছামত একতরফাভাবে ১৯৮৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী সংসদে স্থানীয় সরকার পরিষদ সংক্রান্ত ০৩টি বিল পেশ করেন। অতঃপর ২৮ ফেব্রুয়ারী পৃথক পৃথকভাবে ০৩ পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ বিল সংসদে গৃহীত হয়। পরিশেষে ০২ মার্চ/১৯৮৯ সালে উল্লেখিত বিল সমূহে রাষ্ট্রপতি সম্মতি প্রদান করেন। ১৯৮৯ সালের ২৯ জুন প্রহসন মূলক এবং বিতর্কিত এক নির্বাচনের মাধ্যমে এরশাদ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানীয় সরকার পরিষদ প্রতিষ্ঠা করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে জন সংহতি সমিতিকে পাশ কাটিয়ে এটি ছিল এরশাদ সরকারের চাপিয়ে দেয়া রাজনৈতিক সমাধান। এতে এরশাদ সরকার এর মনে শান্তি আসলেও প্রকৃত পক্ষে শান্তি বাহিনীর মনে আরো ব্যাপকভাবে বিদ্রোহের অনল জ্বলে উঠে। ফলে এই উদ্যোগ যৌক্তিক পরিনতি লাভ করেনি। ১৯৯০ সালে গণ-আন্দোলনে এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিস্থিত হয়। ১৯৯২ সালে তিনি ভারত সফর কালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাও এর সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের বিষয়ে ঐক্যমত্য ঘোষনা করেন। ১৯৯১ সালের ১৫ এপ্রিল হংসধ্বজ চাকমাকে আহ্বায়ক করে একটি যোগাযোগ কমিটি গঠিত হয়। ১৯৯২ সালের ০৯ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান কল্পে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী কর্নেল অলি আহমদ বীর বিক্রম-কে প্রধান করে সংসদ সদস্যদের সমন্বয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক ০১টি কমিটি গঠিত হয়। পরবর্তীতে এই কমিটি তুমুলভাবেবিরোধিতার সম্মুখীন হলে বিরোধী দলের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে আবার উক্ত কমিটি ঢেলে সাজালেন বিএনপি সরকার। ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার শাসন কালীন সময়ে সরকারের সাথে জন সংহতি সমিতির কমিটি পর্যায়ে ০৭ দফা এবং উপ-কমিটির ০৬ দফাসহ সর্বমোট ১৩ দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পরিশেষে ১৯৯৬ সালে বেগম খালেদা জিয়ার সরকার যুদ্ধ বিরতীর মেয়াদ বৃদ্ধি করে জানালেন, জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া সরকারের পক্ষে সম্ভবপর নহে। অর্থাৎ যে লাউ সে কদু-ই রয়ে গেল। ১৯৯৬ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন। তারপর মাত্র ৩ মাস ২০ দিনের মাথায় সংসদে সরকার দলীয় চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এর নেতৃত্বে ১১ সদস্য বিশিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক ১টি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটিতে সরকারি দল ছাড়াও বিএনপি থেকে ২ জন, জাতীয় পার্টি থেকে ১ জন ও অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সহ প্রতিষ্ঠিত সমাজ সচেতন ব্যক্তিদের রাখা হয়।
১৯৯৬ সালের ২১ ডিসেম্বর পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসে সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ-বৈঠকেই উভয়পক্ষের মধ্যে শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, আস্তা ও আন্তরিকতা সৃষ্টি হলে, শান্তি বাহিনীর প্রতিনিধি দলকে পূর্ন নিরাপত্তা বিধানের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে পরবর্তী বৈঠকগুলো ঢাকায় অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অতঃপর উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত থাকার এক পর্যায়ে সরকারের জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতির সপ্তম বৈঠকে চুড়ান্ত সমঝোতা অনুষ্ঠিত হয়। অবশেষে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সংলগ্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় কমিটির পক্ষে চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতির পক্ষে সংগঠনের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি তথা শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন। ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী খাগড়াছড়ি জেলা সদর স্টেডিয়ামে এক বর্নাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ঐতিহাসিক সেই দিনটিতে ৭৩৯ সদস্যের শান্তি বাহিনীর প্রথম দলটি জ্যোতিরিন্দ্র বোধি প্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) নেতৃত্বে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে অস্ত্র সমর্পণ করেন। অবশেষে চার দফায় শান্তিবাহিনীর সর্বমোট ১৯৪৭ সদস্যের অস্ত্র সমর্পনের মধ্যে দিয়ে ১৯৭৩ সালে গঠিত শান্তিবাহিনীর আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তি ঘটে। এরপর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের শরনার্থী শিবির থেকে আশ্রয় নেয়া উপজাতিরা সবাই স্বদেশে ফিরে আসে। ১৯৯৮ সালের ৬ মে স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন সংসদে পাশ হলে ১৫ জুলাই গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত হয়। খাগড়াছড়ির সংসদ কল্পরঞ্জন চাকমাকে মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। ১৯৯৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতির প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) কে চেয়ারম্যান করে ২২ সদস্য বিশিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এর অন্তবর্তীকালীন পরিষদ গঠন করেন। পরিশেষে ১৯৯৯ সালের ১২ মে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা’র (সন্তু লারমা) দায়িত্বভার গ্রহনের মাধ্যমে আঞ্চলিক পরিষদের কার্য্যক্রম আনুষ্ঠনিকভাবে সূচনা হয়।
স্মৃতির পাতায় সেই স্বর্ণালী দিনগুলো ভেসে উঠে বার-বার। খু-উ-ব মনে পড়ে ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারীর সেই ঐতিহাসিক দিনটির কথা। সেই বর্নাঢ্য অনুষ্ঠানে শান্তি বাহিনীর প্রথম অস্ত্র সমর্পনের স্মৃতিগুলো মনের দর্পনে বার বার ঘুরে-ফিরে আসে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও শান্তিবাহিনীর প্রধান নিজেই একটি রাইফেল সমর্পন করেছিলেন মানবতাবাদী এই মহান নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা’র (সন্তু লারমা) হাতে তুলে দিয়েছিলেন একগুচ্ছ সাদা গোলাপ। তারপর দু’জন-ই পাহাড়ের সুনীল আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিলেন এক ঝাঁক শান্তির প্রতীক শ্বেত কপোত। শান্তি চুক্তির বয়স এখন প্রায় ২৬ বছর। পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি আজো অনুপস্থিত। রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। প্রথমে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে বুঝতে পারেননি, শেষে বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শের প্রেমে মগ্ন হলেন। জাতির পিতার হাত ধরে জাতীয় মূল ধারার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে দেশের জন্য কিছু একটা করতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে হয়তো তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামকে রক্তাক্ত করতেন না। শান্তিবাহিনী গঠন করেও তিনি সার্বিক পরিস্থিতি অবলোকন করতে চেষ্টা করেছিলেন।
পরিশেষে- জাতির জনক বঙ্গবন্ধুরপার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধানে উদার নীতিতে নেয়া পদক্ষেপ সমূহের কারণে তিনি রক্তাক্ত সংঘাতের অশান্ত পথের পরিবর্তে জাতীয় রাজনীতির গণতান্ত্রিক শান্তির পথে যুক্ত হয়েছিলেন। এ-বাংলায় বঙ্গবন্ধুর পর নিপীড়িত মানুষের মহান মুক্তির কান্ডারী এক জন-ই আছেন। তিনি শেখ হাসিনা। মানবতার এ মহান নেত্রীর প্রতি পূর্বের ন্যায় বিশ্বাস রাখুন। বৃটিশ, পাকিস্তান এবং অন্যান্য সরকারের ইতিহাস গভীর ভাবে পর্যালোচনা করুন। বিবেকের আদালত সর্বশ্রেষ্ঠ-বিচারালয়। এখন বিবেকের আদালতে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ছাড়া পাহাড়ের শান্তির জন্য আর কোন বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়ীক মানবতার চেতনা যার আপাদমস্তক বহমান। দেশরত্ন পার্বত্য মানুষের মুক্তির কান্ডারী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখুন। শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরকালীন সময়ের মতো আবারও সকল ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে কাছাকাছি আসুন। উদার মনে প্রাণ খুলে কথা বলুন। এখন শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরকারী উভয় পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মিলেমিশে স্থায়ী শান্তির জন্য কার্য্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এটা-ই সময়ের বাস্তবতা।
লেখক: মোঃ সিরাজুল হক (সিরাজ)
কবি, কলামিষ্ট ও সাংস্কৃতিক কর্মী।