মানিকছড়ির গিরিকলি কিন্ডারগার্টেন এন্ড পাবলিক স্কুলে উৎসব মূখর পরিবেশের কেবিনেট নির্বাচন
॥ মোঃ ইসমাইল হোসেন, মানিকছড়ি ॥
বিদ্যালয় থেকেই একজন শিক্ষার্থীকে পরিপূর্ণ মানুষ তথা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার সূচনা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমন জায়গা যেখানে এসে একজন শিক্ষার্থী জীবনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ করে। শিক্ষার্থী শুধুমাত্র পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়াটাই তার মূল লক্ষ হওয়া উচিত নয়। সে একদিন দেশের ভবিষ্যত নীতি নির্ধারক হবে, সেবক হবে, আদর্শ লালন করবে, সর্বোপরি ন্যায়-নিষ্ঠাবান ব্যক্তিত্ব হিসেবে সমাজ গড়ার কারিগর হবে এমনটাই স্বাভাবিক। বেড়ে উঠবেন যোগ্য নাগরিক হিসেবে। আর একজন শিক্ষার্থীকে পরিপূর্ণ নাগরিব হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে ২০১৫ সালে সরকারিভাবে ‘স্টুডেন্ট কেবিনেট’ নির্বাচনের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যার ফলে মানিকছড়ি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গিরিকলি কিন্ডারগার্টেন এন্ড পাবলিক স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মো. লুৎফর রহমান কেবিনেট নির্বাচনের আয়োজন করেন। তিনি জানান, সৎ, যোগ্য ও সাহসী নেতৃত্বের হাতে আগামীর বাংলাদেশকে তুলে ধরতে এই প্রজন্মকে গণতান্ত্রিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার লক্ষেই আমাদের এ আয়োজন। জাতীয় কিংবা যেকোনো নির্বাচনের মতই ছিল নির্বাচন কমিশন। পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে শ্রেণি কক্ষে ছিল পর্যাপ্ত প্রচার-প্রচারণা।
বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে শুরু হয় কেবিনেট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোগ গ্রহণ করেন। ছিলেন প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিং ও এজেন্ট। তাদের উপস্থিতিতেই গোপন কক্ষে গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করেছেন ভোটাররা (শিক্ষার্থীরা)। এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে ছুটে যান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাঈন উদ্দিন, সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শফিকুর রহমান ফারুকসহ স্থানী বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দরা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (বিদ্যালয়ের শিক্ষক) মোহাম্মদ তাজউদ্দিন আহমদ জানান, অবাধ-নিরপেক্ষ, সুষ্ঠ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে কেবিনেট নির্বাচনের সকল প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েয়ে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রী, ক্রীড়া মন্ত্রী ও পরিবেশ মন্ত্রী এই পাঁচটি পদের বিপরীতে ২০ জন প্রার্থী হয়েছেন। ৩য় শ্রেণি থেকে ১০শ্রেণি পর্যন্ত ৩৬৪জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। চারটি বুথে এসব ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরাও যেহেতু ভোটার এবং জীবনের প্রথম ভোটটি দিতে পেরেছে বলে তাঁরা উচ্ছ্বসিত।
সহকারি নির্বাচন কমিশনার মোঃ দেলোয়ার হোসেন মনে করেন, নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং বিজিত সদস্যরা পারস্পরিক গঠনমূলক সমালোচনার অংশ নিতে সক্ষম। তারা একে অন্যের মতামতের প্রতি সহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনে দায়বদ্ধ।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালনক মোঃ লুৎফর রহমান জানান, বর্তমানে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠে মনোযোগী করা এক বড় চ্যালেঞ্জ। কেবিনেটের সদস্যরা এ কাজে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহযোগী হয়ে কাজ করতে পারবেন। প্রতিটি শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খোঁজখবর নিয়ে কোন বিষয়ে পাঠে কমতি থাকলে সেই বিষয় শিক্ষকের সাথে কথা বলে তাদের সহপাঠীদের জন্য পাঠটি কীভাবে সহজবোধ্য করা যায় সে ব্যাপারেও ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করছেন। তিনি আরও বলেন, খেলাধূলা, গান, বিতর্ক, বিজ্ঞান মেলা ইত্যাদির আয়োজন এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করবে। বিশেষ এবং জাতীয় দিবসগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের ব্যবস্থা এবং এসব দিবসের তাৎপর্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারবে কেবিনেট।
ভোট গ্রহণ শেষে বই প্রতিক নিয়ে মোঃ ফয়সাল ইকবাল (রিফাত) প্রধানমন্ত্রী, তানভীর হাসান (তন্ময়) মোবাইল প্রতিক নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী, শাপলা প্রতিক নিয়ে সুমাইয়া আক্তার সুমী স্বাস্থ্যমন্ত্রী, মাছ প্রতিক নিয়ে তাকওয়া হোসেন ক্রীড়ামন্ত্রী ও খেজুর গাছ প্রতিক নিয়ে কে এম আজম পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন।