[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

গবেষক ও লেখক ইয়াংঙান ম্রো’ প্রয়াস

বান্দরবানে চিম্বুকের বুকে গড়ে তুলেছেন গল্প বলা ও গল্প শোনার ঘর

১১১

॥ আকাশ মারমা মংসিং,বান্দরবান ॥

ম্রো জাতিগোষ্ঠীকে সমাজ জ্ঞান বিকাশে সব দিক দিয়ে সমৃদ্ধ জাতি গড়তে প্রয়াস চালাচ্ছেন ম্রো ভাষায় লেখক ও গবেষক ইয়াংঙান ম্রো। এই যুবক বান্দরবান চিম্বুকের পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী ম্রো সম্প্রদায়ের লেখক ও গবেষক। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচ্য ভাষা ও পালি বিভাগ থেকে ২০১২ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেছিলেন। তার উদ্যোগে নিজের লেখার ম্রো ভাষার ব্যাকরণসহ ১৯টি ও বাংলায় ১০টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও তিনি ম্রো ভাষা এবং নিজেদের জাতিগোষ্ঠির সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি এর বাইরে কাজ করে চলেছেন নিজ সম্প্রদায়ের মানুষকে এগিয়ে নিতে।

বান্দরবান শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দুরে চিম্বুক পাহাড়ের অবস্থিত এই রামরি পাড়া। ওই এলাকায় নিজেরদের ভাষা সংস্কৃতির ও ঐতিহ্যকে তুলে আনতে পাহাড়ের পাদদেশে ম্রো ভাষার লেখক ও গবেষক ইয়াং ঙান ম্রো”র উদ্যেগে চিম্বুকের বুকে রামরি পাড়ার এলাকায় গড়ে তুলেছেন “সাংচিয়া তেকরা-সাংচিয়া শুনতারা কিম” অর্থাৎ গল্প বলা-গল্প শোনার ঘর নামের একটি পাঠাগার। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ম্রো জনগোষ্ঠীর ক্রামা ধর্মের প্রবর্তক ও শিক্ষা প্রসারের অগ্রদূত মেনলে ম্রো না থাকলে ইয়াংঙানের মতো অনেক ম্রো শিক্ষার্থীর এত দূর আসা হতো না। লেখকও হয়ে উঠতে পারতেন না। ম্রোরা সম্মান করে মেনলেকে ‘ক্রামাদি’ বলে সম্বোধন করে। বর্তমানে অজ্ঞাতবাসী মেনলে ম্রো ১৯৮৫ সালে ম্রো ভাষার হরফ উদ্ভাবন করেন। তবে খুব বেশি দূর লেখাপড়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি মেনলের পক্ষে। তাঁর প্রচেষ্টাতেই ম্রো ভাষার শিক্ষাকেন্দ্র আর কম্পিউটারে লেখার পদ্ধতি চালু হয়। স্কুলে পড়ার সময় ম্রো ভাষায় গল্প-কবিতা লিখত ইয়াংঙান। মেনলে ম্রোর প্রবর্তিত বর্ণমালাও শিখেছিল তত দিনে। ম্রোপাড়া গুলোতে তখন নিয়মিত ধর্মসভা হতো। সেখানে হাতে লেখা গল্প বিলি করত ইয়াংঙান। লেখালেখির এই ধারা অব্যাহত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনেও।

 

জানা গেছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ম্রো ভাষা ও ঐতিহ্য সংস্কৃতির গুলো প্রায় বিলুপ্তির পথে। সেসব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গুলো তুলে আনতে এই উদ্যেগটি নেওয়া। এছাড়াও ম্রো জনগোষ্ঠীর যে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা দেশের বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত রয়েছে তাদের উদ্দ্যেশ্যে এই পাঠাগারটি বানানো উদ্যেগ নেন ম্রো ভাষার লেখক ও গবেষক ইয়াংঙান ম্রো। সেসব শিক্ষার্থীরা ছুটি পেলে এই পাঠাগারে এসে নিজেদের সুখ দুঃখের আলাপরচয়িতা হবে। নিজেদের সংস্কৃতি, ইতিহাস,এতিহ্য নিয়ে নিজেদের জীবনের গল্পের মাধ্যমে জ্ঞান বিনিময়ের প্রসারিত ঘটবে। ধীরে ধীরে ম্রো সমাজ জ্ঞান বিজ্ঞানে সব দিক দিয়ে সমৃদ্ধ জাতি গড়ে উঠবে বলে আশা করেন এই লেখক। ম্রো সম্প্রদায়ের প্রথম বই লেখক সিংইয়ং ম্রো জানিয়েছেন, তিনি ইয়াংঙান ম্রোর আগে লেখালেখি শুরু করলেও ম্রো ভাষায় প্রকাশিত তাঁর কোনো বই নেই। ম্রো ভাষার ওয়ার্ড বুক আর রূপকথার বই ইয়াংঙানের খুব উল্লেখযোগ্য কাজ। অনেক ম্রো তরুণ-তরুণী এখন তাঁর বই পড়ছে।

এব্যাপারে ম্রো ভাষা লেখক ও গবেষক ইয়াংঙান ম্রো সাথে কথা হয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন, যখন তিনি খুব ছোট ছিলেন তখন মা-বাবা অবসর সময়ে বিভিন্ন গল্পগুলো শোনাতেন। ঐসময় মা-বাবার মুখে যেসব গল্প শুনতেন সেই সমস্ত গল্পগুলো লিখিত আকারে সংরক্ষন করার চেষ্টা করেন। তারপর থেকে দীর্ঘদিনের একটি পরিকল্পনা করেছিলেন পাহাড়ের পাদদেশে ম্রো ভাষায় পাঠাগার বানাবেন। পরবর্তীতে তার এই উদ্যেগের পাহাড়ের পাদদেশে তৈরী হয় গল্প বলা ও গল্প শোনার পাঠাগার। তিনি আরো জানান, পাঠাগার তৈরী করার ফলে এলাকার মানুষেরও নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কের জানতে পারবেন। তবে বর্তমানে ছোট পরিসরে পাঠাগারটি তৈরী করলেও আগামীতে ঘরটি বড় করার ইচ্ছে আছে বলে জানান লেখক ও গবেষক ইয়াঙ ঙান ম্রো। এবিষয়ে বান্দরবানের মারমা ভাষার বিশিষ্ট লেখক মংক্যশোয়েনু নেভি মারমার বলেন, ইয়াংঙান ম্রো নিজের জনগোষ্ঠীর মানুষের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও দুঃখ-বেদনা তুলে ধরার জন্য সবকিছু বাদ দিয়ে লেখালেখি করেন। তিনি ঘুরে বেড়ান নিজের জনগোষ্ঠীর দুর্গম পাড়া-গ্রামে। এ জন্য ম্রো ভাষায় ও বর্ণমালায় তিনিই লেখক হতে পেরেছেন।