নিপীড়িত মানুষের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু ও মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা এবং অভাগা পার্বত্য চট্টগ্রাম।
॥ মোঃ সিরাজুল হক (সিরাজ) ॥
মহানায়ক বঙ্গবন্ধু, যার জীবনে ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কিছুই ছিলনা। যে মানুষটি দুঃখী মানুষের মূখে হাসি ফোঁটানোর মিশনে সারাটি জীবন মগ্ন ছিলেন। যার নামে এ বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছিল। যার বজ্রকন্ঠের স্বাধীনতার আহ্বানে এক রক্তনদী পেরিয়ে অর্জিত হয়েছিল মহান স্বাধীনতা। যিনি অসাম্প্রদায়ীক এক বাংলা বিনির্মাণ করে দেশের প্রতিটি গৃহে প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাধ পৌঁছানোর এক কঠিন সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন, তিনি আর কেউ নন। তিনি শুধু এ বাংলার নন তিনি সারা দুনিয়ার নিপীড়িত মানুষের এক মুক্তির মহানায়ক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট পরাজিত পাকিস্তান ও বিশ্ব সভ্যতা আর গনতন্ত্রের চির শত্রু সাম্রাজ্যবাদের দেশী-বিদেশী দোসরদের ষড়যন্ত্রের নৃশংসতার শিকার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার। অথচ যে বিশাল হৃদয়ের আপোষহীন আদর্শবান মানুষটিকে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী রেখে মৃত্যুদন্ড দিয়ে, সেলের পাশে কবর খুঁড়েও স্পর্শ করার সাহস পায়নি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী, কিন্তু স্বাধীন বাংলায় জন্ম নেয়া হিংস্র জানোয়ার গুলোর হাতে তাকে নির্মমভাবে স্ব-পরিবারে জীবন দিতে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে।
তাই, আগষ্ট এলে শোকার্ত বাঙ্গালী জাতি গভীর শোকে কাতর হয়, শ্রদ্ধার সাথে এই মহানায়ককে স্মারণ করে। রক্তাক্ত আগষ্ট মানেই শোকের মাস, বেদনার মাস। বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে বেদনার তুলি দিয়ে রক্তের অক্ষরে লিখা শোকবহ আগষ্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট সেই কালোরাতে তামাম দুনিয়ার ইতিহাসে এক পৈশাচিক হত্যাকান্ডে জাতির পিতা তাঁর পরিবারসহ আরো যারা শাহাদাত বরণ করেছেন, তাদের সকলের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলী। আমরা তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। এই কালজয়ী কিংবদন্তীর মহানায়ক, আমার গভীর ভালোবাসার সেই মহান মানুষটির মূল্যায়ন করার ক্ষমতা ও জ্ঞান আমার নেই। তবে আমি তাঁর ভক্ত এবং সৈনিক হিসাবে লিখার সাহস করি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্বাধীন চেতা মহা মানব জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং এই বাংলার মেহনতী মানুষের জন্য ১৯৭০ সালের নির্বাচনটি ছিল অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে এ দেশের সর্বস্থরের মানুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে এবং তাঁর ঐতিহাসিক ছয় দফার প্রতি চুড়ান্ত রায় দিয়েছিল। এই নির্বাচনটি মূলতঃ এ বাংলার নিপীড়িত দুঃখী মানুষের মুক্তির অন্যতম হাতিয়ার হিসাবে পরিগনিত হয়। ১৯৭০ এর নির্বাচনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সংখ্যাগরিষ্ট আসন লাভ করে। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্যি যে, সেই ঐতিহাসিক নির্বাচনে এ পার্বত্য চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগ একটি আসনেও বিজয়ী হতে পারেনি।
মুক্তিকামী বাঙ্গালী জাতির এ স্বাধীনতার নির্বাচনে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা এবং এ.এস.প্রু চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান এসেম্বলিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হন। তাছাড়া জাতীয় এসেম্বলীতে চাকমা সার্কেল চীফ (চাকমা রাজা) ত্রিদিব রায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু সেই ঐতিহাসিক নির্বাচনের রায়ের প্রতি চরম অসম্মান ও অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করে ইয়াহিয়া-টিক্কার পাক সেনারা ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালোরাত থেকে দীর্ঘ ০৯ (নয়) মাস নৃশংসভাবে এ বাংলার বুকে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। ঐ রাতে জাতির পিতাকে পাক সেনারা আবারও গ্রেফতার করে। পাকিস্তানের লাহোরের কারাগারের অন্ধকার সেলে বাঙ্গালী জাতির এই মহান নেতাকে বন্দী করে রাখে। অতঃপর দেশ স্বাধীন হলো, বাংলার মানুষের গভীর ভালোবাসা বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শ আর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তানিরা জাতির জনককে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলায় ফিরে এলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। শুরু হলো তাঁর দুঃখীনি এ ভাঙ্গাঁ দেশটি গড়ার সংগ্রাম। অল্প সময়ের মধ্যে জাতির পিতা সারা বিশ্বের এক শ্রেষ্ঠ সংবিধান রচনা করলেন। অসাম্প্রদায়ীক এই মহান নেতাকে বুঝতে হলে বঙ্গবন্ধুর ৭২-এর সংবিধান বুঝতে হবে। এ সংবিধানের মূলমন্ত্র ছিল চারটি গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ।
এখন এ মহান নেতার সংবিধানের চারটি মূলমন্ত্রের মধ্যে গনতন্ত্র ছাড়া বাকী গুলোর কদর আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সংবিধান ছাড়া মুক্তির কোন পথ নেই। তবুও ১৯৭২ এর সংবিধান রচনাকালে ১৯৭০ সালের তদানীন্তন প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা বেশ কিছু দাবী উপস্থাপন করেন। কিন্তু স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে তার সব দাবী মেনে নেয়াও সম্ভব ছিল না। যে কয়েকজন গণ-পরিষদ সদস্য দুর্ভাগ্য বশতঃ নতুন ভাবে লিখা এ শ্রেষ্ঠ মানবিক সংবিধানে স্বাক্ষর প্রদান করেননি, মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা তাদের মধ্যে অন্যতম। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কোন একক সম্প্রদায়ের নেতা ছিলেন না। তাই তো তিনি সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানের দেশে তাঁর রাজনৈতিক সংগঠনের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি কেটে ফেলে দিতে পেরেছিলেন। এই উদার মন-মানসিকতার মহানায়ক তামাম দুনিয়ার নিপীড়িত মানুষের অসাম্প্রদায়ীক চেতনার এক মহান কান্ডারী। তবুও আমরা অনেকেই তাঁর আদর্শ এবং হিমালয় সম বিশাল হৃদয়ের পরিচয় জানতে চেষ্টা করিনা। যার প্রেক্ষিতেএ মহা মানবের একটি ভাষনের অপ-ব্যাখ্যায় চাপা ক্ষোভের আগুনে জ্বলে উঠে পার্বত্য চট্টগ্রাম।
১৯৭৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী এক নির্বাচনী সফরে কক্সবাজার হয়ে রাঙ্গামাটি এলেন, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সফর সঙ্গী হিসাবে তৎকালীন বাণিজ্য মন্ত্রী নরপিশাচ খোন্দকার মোশতাক আহমদও তাঁর সাথে ছিলেন। বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্তার থেকে তাঁরা নেমে আসলেন। তৎকালীন সংসদ সদস্য মিসেস সুদীপ্তা দেওয়ান (যিনি আমাকে খু-উ-ব ভালোবাসতেন, খু-উ-ব স্নেহ করতেন, আমি তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি, মাসীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলী) জাতির পিতাকে সর্বপ্রথম পুষ্পমল্য অর্পন করলেন। আরো বেশ কিছু আয়োজন-নানা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো। অতঃপর তিনি রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজারে আয়োজিত এক বিশাল জন সভায় আসলেন। পৌর পার্ক কিংবা রাঙ্গামাটি পার্ক তখন ছিলনা। ছিলনা আজকের স্কাউট ভবনও, বর্তমান স্কাউট ভবনের খোলা মাঠে নির্মিত মঞ্চে তিনি ভাষন দিয়েছিলেন। সে দিনটি ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ একটি আলোকিত দিন। খু-উ-ব কাছ থেকে এই মহা মানবকে দেখার স্মৃতি কোন কালে ম্লান হবার নয়। জাতির জনকের সাথে আমার শিশু কালের এটি-ই প্রথম এবং শেষ দেখা।
সু-দীর্ঘকাল ধরে পাহাড়ের অবহেলীত বঞ্চিত মানুষের পক্ষে সাম্যের জয়গানে উজ্জ্বল, এক আবেগময় ভাষন ছিল এটি। মানবতার এক মহান দৃষ্টিতে তিনি পাহাড়ের বঞ্চিত মানুষ হৃদয়ের এই কালজয়ী মহানায়ক-অবহেলিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি গুলোকে বাঙ্গালীদের মতো স্বাধীনতার সুফল সম-ভাবে ভোগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই দিন তিনি বলেছিলেন-“আমরা এখন সবাই বাঙ্গালী-আজ থেকে আপনাদের উপজাতি থেকে জাতিতে প্রমোশন দিলাম”। আসুন আমরা একসাথে এই ভাঙ্গাঁ দেশটাকে গড়বো। তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার সর্বস্তরের মানুষের এই বিশাল জনসভায় মূলতঃ তিনি একটি কথাই বুঝাতে চেয়েছিলেন। এ দেশে কোন প্রকার বৈষম্য কিংবা জাতিভেদ থাকবেনা। একজন বাঙ্গালী সাংবিধানিকভাবে যে সব সুযোগ, সুবিধা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করবে, ঠিক তেমনিভাবে পাহাড়ের সকল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিরাও সকল অধিকার ভোগ করবে। তিনি উদার দৃষ্টিতে অখন্ড জাতীয় স্বার্থে উপজাতিদের সমান অধিকার ভোগ করার নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। তিনি জাতীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং তাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ধর্মের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করেন। তিনি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিগুলোর উপর যে কোন মহলের নির্যাতন সহ্য করবেন না বলে উল্লেখ করে সবাইকে দেশ গড়ার কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আমরা এই উদার মনমানসিকতার মহান মানুষটির কথাগুলো বুঝতে পারিনি। যার প্রেক্ষিতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিগুলোর মনে দীর্ঘকালের জমিয়ে থাকা ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বৃটিশ কর্তৃক অবহেলীত নৃ-গোষ্ঠিগুলো তাদের স্বার্থ রক্ষায় প্রথম ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় উদ্যোগ নেন ১৯১৫ সালে একটি সংঘ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। তারপর থেকে তারা ধীরে ধীরে নিজেদের প্রয়োজনে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। অতঃপর ১৯৬৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উপজাতীয় কল্যাণ সমিতি নামে একটি বৃহত্তর সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়, যে সংগঠনের ব্যানারে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা নির্বাচন করে নির্বাচিত হন। সর্বপরি উপজাতীয়দের পূর্বের সংগঠনের নামের কিছুটা হেরফের করে ১৯৭২ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার নেতৃত্বে রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ১৯৭৩ সালের ০৭ই জানুয়ারী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এর সামরিক শাখা ‘শান্তি বাহিনী’ মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই আঞ্চলিক নেতা মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা রাঙ্গামাটি কমিউটিষ্ট পার্টির সাথে জড়িত ছিলেন। শুধু তাই নয়। তিনি মার্কসবাদ, লেলিনবাদ ও মাওসেতুঙ এর কট্রর এক অনুসারী। তিনি পাহাড়ে জুন্ম জাতীয়তাবাদী চিন্তা ধারার প্রবর্তক হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। অবশেষে পাহাড়ের জুন্ম জাতীয়তাবাদী এই নেতা ও জাতির জনকের নীতি এবং আদর্শের প্রতি দূর্বল হতে লাগলেন। তিনি মহা মানবটির সাম্য-মানবতার প্রেমময় বিশাল হৃদয়টিকে অনুধাবন করতে চেষ্টা করলেন। এরইমধ্যে সংবিধানের ২৮নং অনুচ্ছেদে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিগুলোর অধিকার সংরক্ষণ করেছেন বঙ্গবন্ধু।
অপারসম্ভাবনাময় রাঙ্গামাটিকে পর্যটন নগরী হিসাবে রূপদানের জন্য চাকমা রাজা ত্রিদিপ রায়কে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ সহ নানা বিষয়ে এম.এন লারমা বঙ্গবন্ধুর প্রতি আকৃষ্ট হলেন। সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এ ভাঙ্গাঁ দেশটাকে এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন-জাতির পিতা। ১৯৭৫ সালে তৎকালীন সংসদ মানবেন্দ্র নারায়ন লারমাকে তিনি পার্লামেন্টারী ডেলিগেশন এর সদস্য হিসাবে লন্ডনে পাঠিয়ে ছিলেন। অতঃপর ১৯৭৫ সালে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে সংসদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা বাকশালে যোগদান করলেন এবং কেন্দ্রীয় সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হলেন। তারপর এক রক্তাক্ত বেদনার কলংকিত ইতিহাস সৃষ্টি হলো। এ বাংলার রাখাল রাজা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব-পরিবারে হত্যা করা হয়। বাংলার আকাশ-বাতাশ অশ্রু সাগরে নিমর্জিত হলো। বাংলাসহ তামাম পৃথিবী কেঁপে উঠল, সারা দেশে নেমে এলো এক ভয়ানক অন্ধকার। জাতির জনক যাকে বেশী ভালোবাসতেন, বিশ্বাস করতেন, সেই অমানুষ, বেঈমান, সাম্রাজ্যবাদ আর ৭১ এর পরাজিত শক্তির পা-চাঁটা কুকুর খোন্দকার মোশতাক আহমদ রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেন।
৭১-এর দুশমনরা আবার অভাগা বাংলার বুকে অবতীর্ণ হয়। দূঃখীনি এ বাংলার লক্ষ লক্ষ রাজনৈতিক নেতা-কর্মী আত্ম-গোপন করে। অনেকে ভারতে পালিয়ে যায়। এমতাবস্থায় তৎকালীন সংসদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা গহীন অরণ্যে আত্মগোপন করে, শান্তি বাহিনী নামক সশস্ত্র গ্রুপটিকে শক্তিশালী করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারপর পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে এক অশান্ত রক্তাক্ত অধ্যায়ের সূত্রপাত ঘটে। জাতির পিতা স্ব-পরিবারে নিহত হবার মাত্র কয়েক মাস পর ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বর মাসে পাহাড়ের ইতিহাসে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর সর্বপ্রথম শান্তি বাহিনীর সশস্ত্র হামলার সূত্রপাত হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর রক্তাক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার ছোট ভাই বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এর সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার সাথে এক পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন করেন। তবুও আজো পার্বত্য চট্টগ্রামে সত্যিকার অর্থে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পরিশেষে একটি কথা বলে শেষ করতে চাই। আজ জাতির জনক আমাদের মাঝে নেই। তাঁর খুনীদের বিচার হয়েছে। কিন্তু সব খুনীদের আমরা আজও আদালতের নির্দেশ মোতাবেক শাস্তি দিতে পারিনি। পালিয়ে থাকা খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত রায় কার্য্যকরের ব্যবস্থা নেয়া হউক। আর এ খুনের নেপথ্যের কুশীলবদেরও শাস্তির আওতায় আনার দাবী জানাই, তা-না হলে জাতি পুরোপুরি কলংক মুক্ত হবে না।
লেখকঃ- মোঃ সিরাজুল হক (সিরাজ)
কবি, কলামিষ্ট ও সাংস্কৃতিক কর্মী।