[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
নওমুসলিম জীবন চাকমা (আবু বক্কর) কর্তৃক প্রতারণার শিকার অমর বিকাশ চাকমারোয়াংছড়িতে উপকার ভোগীদের মাঝে শিক্ষা ও পুষ্টিকর খাবার সামগ্রী বিতরণকাপ্তাই সেনাজোন কর্তৃক দরিদ্র পরিবারের মাঝে ছাগল ও হাঁস-মুরগী বিতরণদীঘিনালায় অজ্ঞাত ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধাররাজস্থলীতে বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস পালিতআমরা হাল ছাড়বো না, রাজস্থলীতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কর্মবিরতিকঠিন চীবর দান বুদ্ধ ধর্মে বৌদ্ধদের সর্বশ্রেষ্ট দানলামায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফার্মেসিতে মোবাইল কোর্ট এর জরিমানাচলতি ডিসেম্বরেই পার্বত্য চট্টগ্রামে ই-লার্নিং স্কুল চালু করা হবে- পার্বত্য উপদেষ্টাতথ্য অফিসের আয়োজনে বাঙ্গালহালিয়ায় নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

মাটিরাঙ্গায় ফেলনা কাগজ দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন পণ্যের মোড়ক

৪৭

॥ মোঃ আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা ॥

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ফেলনা কাগজ আর ফেলনা নয়, ফেলে দেওয়া পরিত্যক্ত আর টোকানো কাগজে তৈরি হচ্ছে নতুন কার্টন বোর্ড। বই খাতার কাভার, বাইন্ডিং, মিষ্টিসহ বিভিন্ন ধরনের খাবারের প্যাকেট, জুতা, স্যান্ডেলের বক্স, বিভিন্ন পণ্যের মোড়ক তৈরি হচ্ছে এই বোর্ড দিয়ে।

উৎপাদনে জড়িতরা বলেন, এক সময় ফেলনা কাগজ পচে রাস্তা নোংরা হতো। দূর্গন্ধ ছড়ানোর কারণে রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়া দায় ছিল। এখন এসব কাগজ ই প্রক্রিয়াজাত করণের ফলে নতুন কাগজ তৈরি হচ্ছে।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় তৈরি এসব বোর্ড কাগজ সরবরাহ করা হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ফেনীস সহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এ খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে স্থানীয় বেকার নারী-পুরুষের। এতে স্বচ্ছলতা ফিরেছে তাদের পরিবারে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মনের আনন্দে কাজ করে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। একেকজন একেক কাজে ব্যাস্ত। কয়েকজন নারী শ্রমিক কে কাজ করতে দেখা গেছে এখানে তারা বোর্ড সংগ্রহে এবং তা রোদে শুকাতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। আরেকজন শ্রমিক কে বড় ড্রাম থেকে অভিনব পদ্ধতিতে পলিথিন খূঁজে বের করে আনছেন।

২০০৫ সালের শুরুর দিকে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার পলাশপুর এলাকায় নতুন বোর্ড তৈরির কারখানা স্থাপন করেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী হাজী মোঃ শামছুদ্দিন। তিন বছর আগে তিনি মারা গেলে এ কারখানার দায়িত্ব নেন তার ছেলেরা। পুরাতন খবরের কাগজ, প্রেসের পরিত্যক্ত ও ছাট কাগজ, বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা পুরাতন বই, কাগজ ও ছিন্নমূল মানুষদের টোকানো কাগজ কিনে নিয়েই তৈরি হচ্ছে বোর্ড কাগজ।

দৈনন্দিন জিবনে ব্যাবহারের অনুপযোগী এসব পরিত্যাক্ত কাগজ ক্রয় করা হয় বৃহত্তর চট্রগ্রামের প্রেস সহ বিভিন্ন স্থান থেকে। এসব কাগজ ট্রাক বোজাই করে ক্রয় করে প্রথমে মুন্ডু তৈরি করা হয়। এরপর মেশিনে তা রিফাইন করে বোর্ড বানানো হয়। এরপর চাহিদামতো রোদে শুকিয়ে ফিনিশিং ও কাটিং করে বাজারজাত করা হয়।

ওই কারখানার শ্রমিক শামিম বলেন, একসময় বিভিন্ন কাজ করতাম। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বোর্ড কাগজ তৈরির কারখানায় কাজ করে আসছি। এখানে বেশ ভালই আছি। বেতন যা পাই তা দিয়ে ভালোভাবেই সংসার চলে যায়।

 

বোর্ড তৈরি কারখানার শ্রমিক মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, এখানে কাজ করেই আমার সংসার চলে। একইসাথে সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যায় বহন করি। এছাড়া আমার পরিবারের অনেকেই এই কাজটির অভিজ্ঞতা রয়েছে।

সেখানে কর্মরত নারী শ্রমিক হালিমা বেগম বলেন, আগে বিভিন্ন জনের জমিতে কাজ করতাম। কখনো কাজ না থাকলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে কষ্টে থাকতাম। এখন এখানে মাসিক বেতনে কাজ করি। সেই বেতন দিয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে ভালোই আছি।

পুরাতন ও পরিত্যক্ত কাগজে নতুন বোর্ড তৈরি কারখানার সহকারী ম্যানেজার মোঃ আবুল কালাম বলেন, এখানে ১৫/১৬ জন শ্রমিক মাসিক বেতনে কাজ করেন। সবাই স্থানীয়। এ কারখানার কারণে স্থানীয়দের স্থায়ী কর্মসংস্থান হয়েছে। এ কারখানায় প্রতিদিন গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ কেজি বোর্ড উৎপাদন করা হয়। আর প্রতি কেজি বোর্ড ১৮ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়।

কারখানার হেড মিস্ত্রি মোঃ এনামুল হক বলেন, পুরাতন, পরিত্যক্ত ও বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা কাগজ হাউজের পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। বিশেষ ব্যবস্থায় হাউজের পানিতেই মণ্ড তৈরি করা হয়। এরপর মেশিনে এই মণ্ড সাইজ করে বোর্ড কাগজ তৈরি হয়। তারপর টুকরো বোর্ডগুলো রোদে শুকিয়ে ফিনিশিং ও কাটিং করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।

কারখানার মালিক শোয়েব বলেন, পুঁজির অভাবে মিলটি প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু কার্টন বোর্ডের চাহিদা আর এলাকার শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের কথা বিবেচনা করে পুনরায় মিলটি চালু করি। তবে সরকারী কোন সহায়তা পেলে এটি সম্প্রসারণ করার চিন্তা রয়েছে বলেও তিনি জানান। সম্প্রতি ক্রমাগত লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে কাঁচামাল নষ্ট হয় বলে তিনি জানান।