॥ দহেন বিকাশ ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি ॥
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের খবং পড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লোহার গেইট ভেঙে পড়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১০আগষ্ট) সকাল সকালে খাগড়াছড়ি সদরের খবং পড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শ্রাবণ দেওয়ান (৬) জেলা শহরের নারায়ন খাইয়া এলাকার বাসিন্দা প্রনয় দেওয়ান ও বাসনা চাকমার একমাত্র ছেলে। সে স্কুলে প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, প্রতিদিনের মতো বুধবার সকালের দিকে মায়ের সঙ্গে স্কুলে যায় শ্রাবন দেওয়ান। স্কুলে প্রবেশের সময় হঠাৎ করেই বিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারের লোহার গেইট খুলে তার গায়ের ওপর পড়ে। তাৎক্ষণিক উপস্থিত লোকজন তাকে উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলেও পথিমধ্যেই মৃত্যু হয়। তারপরও জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ এলজিইডি’র তদারকিতে অবহেলা ও ঠিকাদারের গাফিলতি, নিম্নমানের কাজ ও এসএমসি কমিটি সহ স্কুল কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী, প্রত্যক্ষদর্শীরা এবং অভিভাবক মহল। এ প্রতিবেদক ঘটনাস্থলে গিয়ে তখনও দেখেন গেটে ছোপ ছোপ রক্ত। এছাড়াও স্কুলের ভিতরে একটি নলকূপ বসানো হয়েছে, সেটিও নড়েবড়ে। যেকোন মূহূর্তে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে-এমনটাই আশংকা রয়েছে। শুধু এটা নয়, মটরের জন্য বিদ্যুতের লাইনও নিম্নমানের তার দিয়ে করা হয়েছে। সেটিও যেকোন মুর্হূতে ছিঁড়ে পড়লে বড় কোন দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ঘটনার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে দায়ি করে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের নিকট আহ্বান জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রিয় রঞ্জন খীসা বলেন, এতদিন স্কুলের গেইটি নড়েবড়ে থাকলেও কেন স্কুল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিলো না। স্কুল কর্তৃপক্ষ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করলে এ অবস্থা হতো না। সাংবাদিক তরুণ কুমার ভট্টাচার্য্য এলজিইডির তদারকিতে গাফিলতি ও ঠিকাদারের নিম্নমানের কাজকে দোষারোপ করেছেন তিনি।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, সকালে মায়ের সঙ্গে স্কুলে প্রবেশের সময় হঠাৎ করে গেট ভেঙ্গে তার গায়ের ওপরে পড়ে। সেখান থেকে লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সকালে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাদেরকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছেন। আমরা স্কুল পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছি।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আরিফুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমরা বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছি। নিহত শিশুর লাশ সুরতহাল করে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছি। যদি শিক্ষার্থীর অভিভাবক অভিযোগ করে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের আহবায়ক নিলোৎপল খীসা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জিনিয়া চাকমা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিনসহ স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে এ প্রতিবেদক প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এলজিইডি কর্তৃপক্ষের কাউকে দেখতে পাইনি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন বলেন, আমি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবগত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য নিলোৎপল খীসা বলেন, খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছি। বিষয়টি ব্যাপারে আমরা মর্মাহত। এ ব্যাপারে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।