খাগড়াছড়িতে নির্মাণের এক দশকেও চালু হয়নি ছাত্রাবাস
চালু হলে দুর্গম অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা আবাসনের সুবিধা পাবে
॥ দহেন বিকাশ ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি ॥
নির্মাণের ১০ বছর পরও বেকার পড়ে আছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ৩টি ছাত্রাবাস। ২০১২ সালে ছাত্রাবাসটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেও এখনো এর সুবিধা পাচ্ছে না ছাত্ররা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষ বলছে জনবল নিয়োগ ও অর্থবরাদ্দ না থাকায় ছাত্রাবাসটি চালু করা যাচ্ছে না। এসবের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েও কাটেনি অনিশ্চয়তা। তবে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। সম্প্রতি সরেজমিনে গেলে এসব তথ্য উঠে আসে।
জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ এবং দুর্গম অঞ্চলের শিশুদের পড়াশোনা নিশ্চিত করতে নির্মাণ করা হয় তিনটি উপজেলায় ৩টি ছাত্রাবাস। কিন্তু নির্মাণের দশ বছরেও চালু করা হয়নি সেই ছাত্রাবাস। জনবল নিয়োগ ও অর্থ বরাদ্দ দেওয়াসহ দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ তা বুঝে না নেওয়ায় সরকারের প্রায় ২কোটি টাকার ছাত্রাবাস ভবন কোনো কাজে আসছে না। এগুলো পরিচালনার দায়িত্ব কে নেবে, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি, মানিকছড়ি ও লক্ষীছড়িতে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়। তাই খুব আশায় বুক বেঁধেছিল দূর পাহাড়ের শিশুরা। ছাত্রাবাসে থেকে লেখাপড়া করে উন্নতির স্বপ্নে বিভোর ছিল ওইসব এলাকার শিশুরা। কিন্তু নির্মাণের দশ বছর পরও ছাত্রাবাসটি চালু করার উদ্যোগ নেই। শিশুরা শিগগিরই এসব ছাত্রাবাস চালুর দাবি জানিয়েছে। অভিভাবকরাও প্রত্যাশা করছেন প্রশাসন এটি চালু করবে।
প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনতলা ছাত্রাবাসে থাকতে পারবে ৮০ জন শিক্ষার্থী। আশা ছিল, ছাত্রাবাসটি চালু হলে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা সুবিধা বঞ্চিত দুর্গম পাহাড়ি এলাকার দরিদ্র শিক্ষার্থীরা আবাসনের সুবিধা পাবে। এতে দারিদ্র্যের কারণে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার অনেকাংশে কমে যাবে। কিন্তু গত এক দশকেও চালু না হওয়ায় ক্রমশ নষ্ট হয়ে পড়ছে ছাত্রাবাসের চেয়ার, টেবিল, খাটসহ ভবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম। জনবল কাঠামো অর্থবরাদ্দ আর নিয়োগ নির্দেশনার অভাবে চালু হচ্ছে না ছাত্রাবাস তিনটি।
এদিকে ধসে পড়েছে পানছড়ি বাজার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের পেছনের দেয়ালের একাংশ, ভবনটিও আছে ঝুঁকিতে।
জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও পানছড়ির স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাথ দেব জানান, নিম্নমান কাজের জন্য এ অবস্থা হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। ছাত্রাবাসের পিছনের পরিবারগুলোও দিন কাটছে আতঙ্কে। প্রাণহানির মতো ঘটনা না ঘটার আগে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন জানান, ২০১০-২০১১ সালে পানছড়ি বাজার এলাকার নির্মিত ছাত্রাবাস ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, ঢালক দেয়ালের কিছু অংশ ইতিমধ্যে ধসে পড়েছে। তিনি এ ব্যাপারে লিখিতভাবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে জানিয়েছেন। ছাত্রাবাসগুলো চালুর বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত পেয়ে যাবেন বলে আশা করছেন তিনি। যেহেতু চালু হয়নি সেখানে কেউ অবস্থান করছে না তাই সিদ্ধান্ত পাওয়া সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।
প্রসঙ্গত, প্রায় ২ কোটি টাকায় ছাত্রাবাসগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১২ সালের মার্চে। সময়মতো স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কে কাজ বুঝিয়ে দেন ঠিকাদাররা। কিন্তু এতদিনেও আবাসন ব্যবস্থাপনায় ছাত্রাবাসের জন্য ৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে একজনও নিয়োগ করা হয়নি।