ঝিরি ঝর্ণার পানি খেয়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে তাই নয় মানুষ মারাও যায়
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল অতিশয় পাহাড়ি অঞ্চল। এ পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষগুলো খুবই পরিশ্রিমী। শহর এলাকা ছাড়া তিন জেলার একবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ কোন রকম জীবন ধারন করলে সকল কষ্টের প্রধান কষ্ট হলো পানির কষ্ট। এসব থেকে যা ব্যবহার করে আসছিল তা বিশুদ্ধ না হলে এসব পানি যেন তাদের গা-সোয়া হয়ে গেছে, কিন্ত একটি সময় সেটি চরম বিপদ ডেকে আনছে। এভাবেই প্রত্যন্ত এসব অঞ্চলের মানুষ সারাবছরই ঝিরি ঝর্ণার উপর নির্ভরশীল হয়ে পানির চাহিদা মিটিয়ে আসছে। কিন্তু যখন শুষ্ক মৌসুম শুরু হয় তখন তাদের যেন পানির জন্য কষ্টের সীমা থাকে না। এসময় ঝিরি ঝর্ণার পানিও শুকিয়ে গিয়ে শুধু হাতের নাগালের বাইরেই নয়, একেবারেই দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়ে। পাহাড়ি প্রত্যেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে পানির এক হাহাকার অবস্থা। ঝিরি ঝর্ণার পানি খেয়ে মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে তাই নয় প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ মারাও যায়।
প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে পানির হাহাকার দেখা যায়। তখন কিছুটা হলেও সহজ লভ্য ঝিঝি ঝর্ণাগুলো শুকিয়ে গিয়ে আর সহজলভ্যও থাকেনা অর্থাৎ পানি পাওয়া দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়ে। তখন মানুষ পাহাড়ি এলাকার পাহাড় ঘেঁষে যেখানে কিছুটা পানির উৎস পাওয়া যায় সেখানে গভিরভাবে গর্ত (কূয়া) করে তার থেকে নিসৃত পানি বিশুদ্ধ হিসেবেই ব্যবহার করে নিত্য দিনের পানির চাহিাদা পূরন করে আসছে। দুর দুরান্ত পাহাড় বেয়ে এভাবেই কষ্ট করে জীবন ধারন করতে হয়। এসময় পাহাড়ি প্রত্যন্ত অনেক অঞ্চল থেকে মানুষ অভিযোগ, আপত্তি, চাহিদা নিয়ে পানির জন্য নানান সমস্যাগুলো জানান। বর্তমানে পাহাড়ি এসব অঞ্চলের মানুষ ঝিরি ঝর্ণার পানি পান করে পানিবাহিত নানান রোগেও ভোগেন। কোথাও কোথাও ম্যালেরিয়া রোগে গুরুতর আক্রান্ত হচ্ছে আবার কোথাও কোথাও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণও করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত উপজেলাগুলোর পাহাড়ী এলাকার মানুষের পরিস্থিতি এখন দিন দিন খারাপই হচ্ছে পানির অভাবে। বিশুদ্ধ পানির জন্য সেখানে আরো অনেককেই নাজুক পরিস্থিতিতেই রয়েছে। এমৌসুমেই পাহাড়ী প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডায়রিয়া দেখা দেয় এতে অনেক সময় চরম আকার ধারণ করে। নাজুক পরিস্থিতি হলে স্বাস্থবিভাগের তাৎক্ষনিক যোগাযোগ করা সম্ভব না হলে সেনা বাহিনীর সদস্যরাই এগিয়ে আসেন। নাজুক পরিস্থিতর সময়ে তাদের সহযোগীতার কারনে অনেকেই জীবন ফিরে পাচ্ছেন বলে আমরা জানতেও পারছি। সেনাবাহিনীর এ উদ্যোগ যেমন প্রশংসার তেমন দায়িত্বেও ক্ষুরদ্বার বলে জানাচ্ছেন। প্রত্যন্ত এসব অঞ্চলে যেখানে স্বাস্থ্য বিভাগের কোন কর্মী বা কর্মকর্তা নাই বা যেতে পারছেন না সেখানেই সেনাবাহিনীর সদস্যরা নানান প্রতিকুল পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে বিপদগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে এগিয়ে যাচ্ছেন।
দেখা যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা উন্নয়ন কর্মকান্ডে ব্যয় হচ্ছে। সরকারি বেসরকারি এবং শায়ত্বশাষিত কিছু প্রতিষ্ঠান মানুষের কল্যাণে ও উন্নয়নে প্রতি বছরই নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহন করছেন। এসব প্রকল্প গুলোর অধিকাংশই অল্পতেই সুফলভোগ বন্ধ হয়ে পড়ছে। তেমন পানির জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেসব প্রকল্প গ্রহন করা হচ্ছে তার বেলাতেই একই পরিস্থিতি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল তাদের কাজ করলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে রিংওয়েল টউবওয়েলগুলো অল্পতেই অকেজো হয়ে যাচ্ছে। ফলে পানির যে সংকট সে সংকট থেকেই যাচ্ছে। কিন্তু আমরা চাই পার্বত্য এলাকার প্রত্যন্ত যেসব অঞ্চলে পানির চরম সংকট সেখানে সুদুরপ্রসারি প্রকল্প। মানুষ যাহাতে পানির কষ্ট না প্রায় সেরকমই প্রকল্প গ্রহন করতে হবে। তাই পাহাড়ি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির জন্য স্থায়ী প্রকল্প চাই, সেই সাথে ডায়রিয়া প্রতিরোধে চাই আগাম ব্যবস্থাও।