পানছড়িতে এমএলই পাঠদান পরিচালনা বিষয়ক পরিকল্পনা সভা
॥ দহেন বিকাশ ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি ॥
খাগড়াছড়ির পানছড়িতে এফসিডিও এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে জাবারাং কল্যাণ সমিতি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সেতু-এমএলই প্রকল্পের আয়োজনে উপজেলার ১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকদের সাথে এমএলই পাঠদান পরিচালনা বিষয়ক পরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩১মে) সকাল ১০টায় পানছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনের একটি সভাকক্ষে আয়োজিত সভায় জাবারাং কল্যাণ সমিতির কর্মসূচি সমন্বয়কারী বিনোদন ত্রিপুরার সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার সুজিত মিত্র চাকমা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা শিক্ষা অফিসার সুজিত মিত্র চাকমা বলেন, সরকারিভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ২০১৭ সালে প্রথম মাতৃভাষায় প্রকাশিত পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। ওই বছরের ১৫ বছর আগে ২০০২ সালে প্রথম মাতৃভাষায় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে অবতারণা হয়েছিল। তিনি আরো বলেন, এক শিক্ষক তাঁর শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সময় এক শিক্ষার্থীর পাঠ্য বইয়ের নির্ধারিত অধ্যায় হতে বৈচি ফল কি প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে ব্যর্থ হন। কিভাবে এই শিক্ষার্থীকে বোঝাবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না জনৈক শিক্ষক। পরে নিজের নিকট শরণাপন্ন হলে তিনি চাকমা ভাষায় পান্যাগুলা বলার পর সব রহস্য উন্মোচন হয়ে যায়। বিভিন্ন দেশে মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়। দেশভেদে কৌশল ভিন্ন ভিন্ন। আমাদের দেশের বাস্তবতা অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, দুর্বলতা, সুযোগ ও ঝুঁকি (ঝডঙঞ) বিশ্লেষণ করে মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সেতু-এমএলই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, বিদ্যালয় পর্যায়ে চাকমা, মারমা ও ককবরক মাতৃভাষায় পাঠদানের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন প্রকল্পের সমন্বয়কারী বিনোদন ত্রিপুরা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার এডিন চাকমা ও সঞ্চায়ন চাকমা। বিদ্যালয়ে মাতৃভাষায় পাঠদানে প্রতিবন্ধকতা নিয়ে উপস্থিত সহকারি শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন হৃদ্যরাস্না চাকমা, সাধনা চাকমা, দেব কুমার চাকমা, জ্ঞান আলো চাকমা, প্রলয় জ্যোতি চাকমা, মো: আলমগীর হোসেন, রুপম চাকমা ও অমর সিংহ ত্রিপুরা প্রমুখ।
প্রকল্পের পক্ষ হতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, মাতৃভাষায় সহ-পাঠক্রমিক উপকরণ শ্রেণিভিত্তিক ছড়া, কবিতা, গল্প বই, বর্ণ চার্ট বিতরণসহ বেসরকারিভাবে কমিউনিটি শিক্ষক সহায়তা দান মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়েছে। এরপরও মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অনেক সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেন বক্তারা। বিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট ভাষাগোষ্ঠীর চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষক স্বল্পতা, রুটিন নির্দেশনা না থাকা, মূল্যায়ন নির্দেশনা না থাকা, অধিদপ্তর কর্তৃক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা, শিখন সামগ্রী নিয়মিত সরবরাহ না থাকা প্রতিবন্ধকতাসমূহের উল্লেখযোগ্য।
প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রমের অবস্থা কি হবে প্রশ্নের প্রেক্ষিতে সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার এডিন চাকমা মাসিক নিয়মিত সভায় এমএলই বাস্তবায়ন একটি এজন্ডাভিত্তিক ১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সাথে আলোচনা চলমান রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোকপাত করেন। মাতৃভাষায় কর্মসূচি বাস্তবায়ন সফল করতে সভায় বক্তারা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে এমএলই সেল গঠন, রুটিন নির্দেশনাসহ মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন নির্দেশনা প্রদান করতে সুপারিশ করেন।