পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)’র ৩৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সন্তু লারমা
পার্বত্য চুক্তি করার সময়ে সরকার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে আশ্বাস দিয়েছিলেন কিন্তু এটি ছিল মুখের কথা
॥ মোঃ আরিফুর রহমান ॥
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা বলেছেন, ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর চুক্তি করা হলেও দীর্ঘ ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে আসেনি। অথচ চুক্তি করার সময়ে সরকার আশ্বাস দিয়েছিলেন, চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু সেটি ছিলো সরকারের মুখের কথা, অন্তরের কথা নয়। উল্টো পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনও দমন পীড়ন, শোষন-নির্যাতন এমন পর্যায়ে এসেছে যে আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে হবে।
শুক্রবার (২০মে) সকালে রাঙ্গামাটি জিমনেশিয়াম মাঠে আয়োজিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এর ৩৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সন্তু লারমা বলেন, উন্নয়নের পূর্বশত হলো সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনা। উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে উন্নয়নের নামে অনেক টাকা ব্যয় করা হচ্ছে কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলের দিকে তাকালে সে উন্নয়ন দেখতে পাওয়া যায়না। বাহারী উন্নয়নের নামে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হতে দেখি কিন্তু আসলে পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়ন সেভাবে হচ্ছে না। প্রশাসন আইনশৃঙ্খলার উন্নতি বিধান না করে সরকার কিভাবে এখানে উন্নয়নের কথা বলতে পারে। তিনি প্রশ্ন রাখেন সরকার কি করতে চায়? চুক্তি বাস্তবায়ন করবে নাকি করবে না তার উত্তরও জুম্ম জনগণ জানতে চায়।
সন্তু লারমা আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে বলেন, পাহাড়ের বুকে আন্দোলন আরো বহু আগে শুরু হয়েছে। এই এলাকার মানুষ ব্রিটিশ আমলেও আগ্রাসী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে করেছিল, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ও সংগ্রাম করেছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, যে নের্তৃত্ব নিয়ে চুক্তি করা হয়েছিল সরকার সে নের্তৃত্বকেই ধ্বংস করার জন্য চেষ্ঠা করছে। চুক্তি বাস্তবায়ন করবে কি করবে না বিগত ২৫ বছর অপেক্ষা করেও সরকার এগিয়ে আসেনি। পাহাড়ে দমন পীড়ন, শোষন-নির্যাতন এমন পর্যায়ে এসেছে তাই আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে হবে।
সন্তু লারমা আরো বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে নানা ভাবে বাধাগ্রস্থ করে চুক্তিকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যাতে পাহাড়ের জুম্ম জগগণ একদিন যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সেটি যাতে তারা ভূলে যায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব বিলুপ্তির ষড়যন্ত্র বছরের পর বছর ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যেতে থাকে। চুক্তি বাস্তবায়নের সংগ্রামে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে বলে উল্লেখ করেন।
রাঙ্গামাটি পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সভাপতি সুমন মারমার সভাপতিত্বে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান শিক্ষক জোবাইদা নাসরীণ কণা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মংসানু চৌধুরী, বিশিষ্ট সাংবাদিক নজরুল কবীর, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদেও সাবেক ছাত্রনেতা ও শিক্ষক শিশির চাকমা। ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট কেন্দ্রয়ি কমিটির সহ-সভাপতি রয়হান উদ্দিন, আদিবাসী যুব ফোরামের সাগঠনিক সম্পাদক টনি ম্যাথিউ চিরান প্রমূখ।
এদিকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)’র ৩৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন উপজেলার অংগ সংগঠনের হাজারো নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।