মানিকছড়িতে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভায় বক্তারা
পাহাড়ে একের পর এক অপহরণ ও চাঁদাবাজিতে জনমনে আতংক
॥ মানিকছড়ি উপজেলা প্রতিনিধি ॥
সাম্প্রতিক সময়ে জনপদে পাহাড়ী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠি কর্তৃক একের পর এক অপহরণ ও চাঁদাবাজিতে জনমনে আতংক বিরাজ করছে। যার ফলে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভার আয়োজন করেছে মানিকছড়ি উপজেলা প্রশাসন। এতে এলাকা ভিত্তিক সর্বজনের সমন্বয়ে একটি করে নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি গঠন করা হবে বলে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) সকাল ১১টায় উপজেলা অডিটরিয়ামে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রক্তিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় গ্রাম পুলিশ, ইউপি সদস্য, পাড়া প্রধান (কার্বারী), ইউপি চেয়ারম্যান, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, সরকারী কর্মকর্তা, সাংবাদিক, সুধীজন, সাবেক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সূচয়ণ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহনূর আলম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এম.এ রাজ্জাক, ম্রাগ্য মারমা, শিক্ষক মো. আতিউল ইসলাম, সনাতন নেতা সজল বরণ সেন, ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ সফিউল আলম চৌধুরী।
মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন, ইউপি সদস্য মোঃ হানিফ, মোঃ শাহ আলম খা, মোঃ আবুল হাশেম, মোঃ জয়নাল আবেদীন, মোঃ আসাদুল ইসলাম, মোঃ ইদ্রিস ইসলাম রাজু, মোঃ আবদুল মতিন, শাহিনা আক্তার, সাংবাদিক মোঃ ইসমাইল হোসেন প্রমূখ।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ম্রাগ্য মারমা বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ী-বাঙ্গালীর অসাম্প্রদায়িক চেতনায় চির ধরাতে একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আজ কাজ করছে। এতে করে পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মাঝে বিভেদ ও অবিশ্বাস বাড়ছে। গত এক দশকে উপজেলায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ড ও অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এসবের কোন বিচার হয়নি! এই বিচারহীনতায় আজ অপরাধ বেড়েই চলেছে।
এম.এ রাজ্জাক বলেন, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী বলেই আওয়ামীলীগ পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ী-বাঙ্গালীর সমন্বয়ে রাজনীতি করে আসছে। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয় এখানকার আওয়ামীলীগ সাথে জড়িত বাঙ্গালীরা হতভাগা! সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠি কর্তৃক একের পর এক অপহরণ ও চাঁদাবাজিতে আজ অতিষ্ঠ!
মোহাম্মদ শাহনূর আলম বলেন, সামাজিক ঐক্যের অভাবে সমাজে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী ও অপহরণের মতো ঘটনার জন্ম হয়। এলাকার কেউ না কেউ, কোন না কোন অপকর্মের সাথে জড়িত আছে। শুরুতে এসব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে পারলে অপরাধ কমে আসবে। তথ্যের অভাবে পুলিশ ওইসব অপরাধীদের ধরতে পারছেনা। নিরবে মানুষজন সব সয়ে যায়! তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করলে অপরাধ দমন সম্ভব।
উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ জয়নাল আবেদীন বলেন, উপজেলায় গত এক বছরে ৩জন বাঙ্গালী অপহরণ হলেও সন্ত্রাসীরা এখনো অধরা! ফলে জনপদে আতংক বিরাজ করছে। যা উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য শুভকর নয়। জনপদে পাড়ায় পাড়ায় চৌকিদার, ভিডিপি, ইউপি সদস্য নিয়ে কমিটি গঠন করে ইউপি চেয়ারম্যানগণের তদারকিতে দায়িত্ব দিলে প্রাথমিক নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা সম্ভব।
সমাপনী বক্তব্যে ইউএনও রক্তিম চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি সময়ে তিনটি অপহরণের ঘটনা এবং চাঁদাবাজি বিষয়ে জনমনে চলমান আতংক ও জনপদে নিরাপত্তা জোরদারে ইউপি চেয়ারম্যানের তদারকিতে প্রতিটি ওয়ার্ডে বা গ্রামে সর্বজনের সমন্বয়ে একটি আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটি গঠনে ইউপি চেয়ারম্যানগণ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।