[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
বান্দরবানের লামায় দ্বৈত কর-এ দিশেহারা কৃষকখাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় স’মিল মালিককে ৬০ হাজার টাকা জরিমানাখাগড়াছড়ির রামগড়ে ৪৩ বিজিবির ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা ও সমন্বয় সভাবাঘাইছড়িতে কৃষকদের মাঝে কৃষি প্রশিক্ষণ ও কৃষি উপকরণ বিতরণখাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ধান চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ সনদ প্রদানরাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভারাঙ্গামাটির লংগদুতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ বিতরণখাগড়াছড়িতে দেড় দশক পর সরাসরি ভোটে কলেজ ছাত্রদলের কাউন্সিল সম্পন্নরামগড় ৪৩ বিজিবির উদ্যোগে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নগদ অর্থ ও খাদ্যশস্য বিতরণরাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে যৌথবাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ এক সন্ত্রাসী আটক
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

এক শিক্ষার্থী নিয়ে চলে শ্রেণী পাঠদান

৩০২

॥ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ॥

বান্দরবান জেলার লামা পৌরসভার রাজবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিফট স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর পাঠদান চলছে। সহকারী শিক্ষিকা এএচিং মার্মা ক্লাস নিচ্ছেন। তখন সময় দুপুর ১টা। ক্লাসে শুধূ উপস্থিত শ্রেণীর রোল এক শিক্ষার্থী জাহিদ বিন মাহি। কাগজে কলমে এই শ্রেণীতে ১৮ জন শিক্ষার্থী থাকলেও তেমন কেউ স্কুলে আসেন না। প্রায় ১-২ জন নিয়ে চলে শ্রেণীর পাঠদান। অনেকের এই স্কুলে নাম থাকলেও পড়েন পার্শ্ববর্তী অন্য স্কুল, মাদ্রাসা বা নুরানীতে। কিন্তু এই স্কুলের নামে নেয় উপবৃত্তি। একই চিত্র বিদ্যালয়ের অন্যান্য শ্রেণীতে। বিদ্যালয়ের তথ্য বোর্ডে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ৬টি শ্রেণীতে মোট ১৩০ শিক্ষার্থী থাকার কথা উল্লেখ থাকলেও নিয়মিত ১৫-২০ জনের বেশি স্কুলে আসেনা। স্কুলটি বর্তমানে কোমায় আছেন বলে উল্লেখ করে অভিভাবকরা বলেন, এখনই প্রশাসন কর্তৃক পদক্ষেপ না নিলে যে কোন সময় শিক্ষার্থী শূণ্য হয়ে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে ॥

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রাজিয়া বেগমের চরম অনিয়ম, দুর্নীতি, বিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থ আত্মসাৎ ও স্বৈরাচারী আচরণের কারণে ধীরে ধীরে পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড রাজবাড়ি গ্রামের জনবহুল এলাকায় অবস্থিত বিদ্যালয়টির এই বেহালদশা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্কুলের অবিভাবক ও স্থানীয়রা। তারা বিদ্যালয়টির লেখাপড়ার মানোন্নয়ন ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধান শিক্ষিকার অপসারণ দাবী করে গণস্বাক্ষর দিয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

স্কুলের ৩৫ জন অবিভাবকের গণস্বাক্ষর দিয়ে চেয়ারম্যান বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে প্রধান শিক্ষক রাজিয়া বেগমের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষিকা স্কুলে জাতীয় দিবস পালন করেনা। ২০২২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালন করেনি। জাতীয় দিবসে স্কুলের স্লিপ বরাদ্দে টাকা থাকলে তিনি দিবস পালন না করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। নিয়মিত উন্নয়ন বরাদ্দ আসলেও তিনি স্কুলে টয়লেট, ব্লাকবোর্ড ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মেরামত করেননা। প্রধান শিক্ষিকা ২০১২ সালের ০৯ সেপ্টেম্বর এই স্কুলে যোগদানের পর থেকে বিদ্যালয়ে কোন উন্নতি হয়নি। পঞ্চম শ্রেণীর উর্ত্তীণ ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে প্রশংসাপত্র ও সার্টিফিকেট বাবদ ৫০০ টাকা নেয়া হয়। স্কুলের উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা আসলে নামমাত্র কাজ করে বাকী অর্থ আত্মসাৎ করেন। স্কুলের সরকারি ল্যাপটপ নিজের বাড়িতে রাখেন। ডিজিটাল হাজিরা মেশিন লাগানো হয়নি। প্রাক-প্রাথমিকের সরঞ্জাম তেমন কিছু নেই। স্কুলে শিক্ষক কম থাকলেও প্রধান শিক্ষিকা অফিস রুমে বসে সময় পার করে, কখনো ক্লাস নেননা। কোন অভিভাবক বা স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ করলে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন ও মামলা করে হয়রাণী করার হুমকি দেন। শুধু দুইটি ব্যানারে বঙ্গবন্ধু কর্ণার ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার করে বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

স্কুলের অভিভাবক সোহেল বড়ুয়া বলেন, স্কুলের অবস্থা এত নাজুক যে, খোদ এসএমসি কমিটির সভাপতি আলী আশরাফ এর ৪ জন নাতির মধ্যে ৩জন (ইমু, আশফাক, মুনতাহা) কলিঙ্গাবিল নুরারী মাদ্রাসায় ও ১জন (শোভা) নুনারবিল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণীতে পড়ে। সভাপতির নাতি আশফাক নুরানীতে পড়লেও এই বিদ্যালয় থেকে ২য় শ্রেণীর ছাত্র হিসাবে উপবৃত্তি নেয়। এছাড়া ৩য় শ্রেণীর ছাত্র হাবিব, ২য় শ্রেণীর ফাহিম নুরীতে পড়লেও এই স্কুল থেকে উপবৃত্তি নেয়। প্রধান শিক্ষিকা এসএমসি কমিটি তার পছন্দের লোকজন দিয়ে করেছে। তাদের কিছু সুবিধা দিয়ে সকল অনিয়ম করে যাচ্ছে। এসএমসি কমিটিকে হাতে নিয়ে সকল অনিয়ম করে যাচ্ছে রাজিয়া বেগম। তার ভয়ে সহকারী শিক্ষকরাও কিছু বলেনা। প্রশাসন পদক্ষেপ না নিলে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবো।

বিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী মোঃ ইলিয়াছ বলেন, এসএমসি কমিটির মেয়াদ অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে। প্রধান শিক্ষক নির্বাচন দেননা। নির্বাচন করবে বলে তফসীল ঘোষণা করবে বলে ২০ টাকার নমিনেশন ফরম ৫০০ টাকা বিক্রি করে আর নির্বাচন সম্পন্ন করেনি। চাকরি বাঁচাতে পরীক্ষার সময় অন্য স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী এনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করায়। বিদ্যালয় সংলগ্ন চা দোকানদার স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ নুর হোসেন বলেন, স্কুলটির রং করেছে ৬ মাস হয়নি, উঠে বিবর্ণ হয়ে গেছে। অথচ একই সাথে লাগানো রাজবাড়ি মসজিদের রং করেছে ৭ বছর হলো এখনো ঝকঝক করে। স্কুলের সব উন্নয়ন কাজ তার স্বামী আবু তাহের করে। যেনতেন করে কাজ করে সব টাকা আত্মসাৎ করেছে। এদিকে লামা বাজারের সুজন লাইব্রেরীর মালিক সৈয়দ জুবাইদুল ইসলাম শিক্ষিকা রাজিয়া বেগম থেকে স্কুলে মালামাল ক্রয়ে বকেয়া বাবদ ৭,০৭২ টাকা পাওয়া বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা লিটন বড়ুয়া বলেন, আমাদের স্কুলের অবস্থা খারাপ হওয়ায় রাজবাড়ি স্কুলের ক্যাচমেন্ট এরিয়ার ১৫ জনের অধিক কলিঙ্গাবিল নুরানী মাদ্রাসায়, ৬/৭ জন মেরাখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, ২/৩ জন নুনারবিল সরকারি মডেল স.প্রা.বি. ও ২০/২৫ লামামুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়ে পুরাতন ভবনটি ব্যবহারে অনুপযোগী ঘোষণা করলেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস নিতে বলেন প্রধান শিক্ষিকা। জাতীয় দিবস পালন না করায় আমি নিজেও একটি লিখিত অভিযোগ করেছি।

সরেজমিনে স্কুলের গেলে প্রধান শিক্ষিকা আলমারি থেকে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন বের করে দেখালেও দুই বছরে কেন লাগানো হয়নি, এমন প্রশ্ন করলে কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি। স্কুলের সহকারি শিক্ষক জাহেদুল ইসলাম খান বলেন, আমরা কখনো স্কুলে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন দেখিনি। তার কাছে স্কুলের উন্নয়ন বরাদ্দ সম্পর্কে ও স্কুলের উপস্থিত শিক্ষার্থী কত ? প্রশ্ন করলে কোন উত্তর দেননি এই শিক্ষিকা। তিনি বলেন আমি আপনাকে বলতে বাধ্য নয়। এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক রাজিয়া বেগম বলেন, সবাই আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। আমি যা বলার অফিসকে বলব।

বিদ্যালয়ের এসএমসি কমিটির সভাপতি আলী আশরাফ বলেন, আমি অশিক্ষিত লোক। আমি ততকিছু বুঝিনা। তবে হ বিভিন্ন দিবস পালন হয়না। লেখাপড়াও ঠিকমত হয়না। বরাদ্দের বিষয়ে তত খবর রাখিনা।

লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তপন কুমার চৌধুরী বলেন, পৌরসভার একটি স্কুল এত পিছিয়ে ভাবা যায়না। লেখাপড়ার মানোন্নয়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।